Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Adani Group

রাজ্যের স্বার্থে

বিরোধী নেতাদের একাংশের প্রশ্ন লগ্নির ভবিষ্যতেই সীমাবদ্ধ নয়। তাঁরা প্রকারান্তরে জানতে চেয়েছেন, গৌতম আদানিই কেন?

A photograph of Gautam Adani

গৌতম আদানি। ফাইল ছবি।

শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৫:৩৪
Share: Save:

রাজ্যের স্বার্থে’ বিরোধীরা পশ্চিমবঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর লগ্নি বিষয়ে কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। আমেরিকার হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ-এর রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর ভারতের শেয়ার বাজারে যে ঝড় উঠেছে, এবং আদানি গোষ্ঠীর আর্থিক ভবিষ্যৎ বিষয়ে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তাতে এই রাজ্যে সেই গোষ্ঠীর লগ্নি বিষয়ে আশঙ্কা তৈরি হওয়া অপ্রত্যাশিত নয়, অন্যায়ও নয়। দুর্জনে বলতে পারে, সঙ্কীর্ণ দলীয় স্বার্থের কথা মাথায় না রেখে শেষ কবে পশ্চিমবঙ্গের কোনও বিরোধী রাজনৈতিক দল— তা বর্তমান শাসকদের জমানাতেই হোক বা অতীতের কোনও জমানায়— রাজ্যের স্বার্থে কোনও প্রশ্ন তুলেছে, তা রীতিমতো গবেষণাযোগ্য প্রশ্ন। কিন্তু তার পরও আদানি গোষ্ঠীর লগ্নি নিয়ে তৈরি হওয়া এই উদ্বেগকে যথাযোগ্য গুরুত্ব দেওয়া বিধেয়। তাজপুরে সমুদ্রবন্দর থেকে ডেউচা-পাঁচামির কয়লাখনি, কৃষিভিত্তিক শিল্প থেকে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের সম্প্রসারণ— পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রকল্পে, বিশেষত পরিকাঠামো ক্ষেত্রে, আদানি গোষ্ঠীর উপস্থিতি বা আগ্রহ তাৎপর্যপূর্ণ। অতএব, বর্তমান ঘটনাক্রম সেই গোষ্ঠীর বিনিয়োগ-ক্ষমতার উপর কোনও প্রভাব ফেলছে কি না, এবং তাতে পশ্চিমবঙ্গ কী ভাবে প্রভাবিত হতে পারে, এই প্রশ্ন করার অধিকার শুধু বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির নয়, রাজ্যের প্রত্যেক নাগরিকের রয়েছে।

বর্তমান বিতর্কের জল কোথায় গড়ায়, তা না দেখা অবধি কোনও ভবিষ্যদ্বাণী করা বিচক্ষণতার পরিচায়ক হবে না। তবে, এ রাজ্যের একাধিক বণিক সভা আশ্বস্ত করেছে যে, এই বিতর্ক পশ্চিমবঙ্গের লগ্নিতে প্রভাব ফেলবে না। অন্য দিকে, একাধিক অর্থনীতিবিদ স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, আদানি গোষ্ঠীর আর্থিক সামর্থ্য মূলত শেয়ার বাজার-নির্ভর— ফলে শেয়ার বাজারের অস্থিরতার কী প্রভাব পশ্চিমবঙ্গের লগ্নির উপরে পড়বে, তা বোঝার জন্য আপাতত অপেক্ষা করা ভিন্ন উপায়ান্তর নেই। এই অবস্থায় রাজ্য সরকারের কিছু দায়িত্ব থাকে। এই গোষ্ঠীর লগ্নি পশ্চিমবঙ্গের মোট লগ্নি-পরিকল্পনার ক্ষেত্রে কতখানি তাৎপর্যপূর্ণ, সে কথা জানার অধিকার যেমন রাজ্যবাসীর আছে, তেমনই আদানি গোষ্ঠী যদি শেষ অবধি রাজ্যে লগ্নি করতে না পারে অথবা লগ্নি না করে, সেই অবস্থায় বিকল্প পরিকল্পনা কী, তা-ও জানানো প্রয়োজন। পশ্চিমবঙ্গের বিনিয়োগ-চিত্র থেকে এ কথা অনুমান করার যথেষ্ট কারণ আছে যে, এখনই রাজ্য সরকারের হাতে বিকল্প লগ্নিকারী নেই। সেই অবস্থায় সরকার কী করার কথা ভাবছে বা ভাবতে পারে, তা-ও জানানো প্রয়োজন বইকি।

তবে, বিরোধী নেতাদের একাংশের প্রশ্ন লগ্নির ভবিষ্যতেই সীমাবদ্ধ নয়— তাঁরা প্রকারান্তরে জানতে চেয়েছেন, গৌতম আদানিই কেন? ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক অর্থনীতির পরিসরে এই প্রশ্নটির তাৎপর্য অনস্বীকার্য। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাইলে সুজন চক্রবর্তীদের মনে করিয়ে দিতে পারেন, যে বেড়াল ইঁদুর ধরে তার গাত্রবর্ণ বিচার না করার সুপরামর্শটি যিনি দিয়েছিলেন, তাঁর নাম দেং শিয়াওপিং। কিন্তু, তার চেয়েও বড় কথা হল, পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগ করতে অন্য লগ্নিকারীদের আগ্রহের প্রকাশ কোথায়? মুখ্যমন্ত্রীকে বরং প্রশ্ন করা যায়, এই রাজ্যে অন্য লগ্নিকারীরা আগ্রহী হন না কেন? কিন্তু, সে প্রশ্ন চিরন্তন, শুধু এই সময়ের নয়। এই মুহূর্তে মুখ্যমন্ত্রীকে যে কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন, তা এই— কোনও বিশেষ শিল্পগোষ্ঠীর স্বার্থ নয়, কোনও বিশেষ দলের স্বার্থও নয়, তাঁকে পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থরক্ষা করতে হবে। যে পথে হাঁটলে রাজ্যে লগ্নি বাড়বে, পরিকাঠামো তৈরি হবে, কর্মসংস্থান হবে, আয়বৃদ্ধি হবে, সেই পথই যথার্থ পথ। তাঁদের ‘উদ্বেগ’ যখন ‘রাজ্যের স্বার্থে’ই, তখন বিরোধী নেতারাও কথাটি স্মরণ রাখতে পারেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE