Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Demonetization

আবার অবিবেচনা

২০০০ টাকার নোটটি আদৌ চালু করা হয়েছিল কেন; এবং দুই, নোটটি হঠাৎ বাতিলই বা করতে হচ্ছে কেন? সরকারের তরফে এখনও কোনও সদুত্তর মেলেনি।

An image of 2000 currency

রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, ৩০ সেপ্টেম্বর অবধি ব্যাঙ্কে গিয়ে ২০০০ টাকার নোট পাল্টে নেওয়া যাবে। প্রতীকী চিত্র।

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২৩ ০৪:৪৪
Share: Save:

জর্জ উইলহেলম ফ্রিডরিশ হেগেলের বক্তব্যকে কিঞ্চিৎ পাল্টে কার্ল মার্ক্স বলেছিলেন, ইতিহাস নিজের পুনরাবৃত্তি করে বটে, কিন্তু প্রথম বার তা ট্র্যাজেডি হলে দ্বিতীয় বার নিতান্তই প্রহসন। ২০০০ টাকার নোট বাতিল হলে এই ঘোষণা শুনে সে কথা মনে পড়া বিচিত্র নয়। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, ৩০ সেপ্টেম্বর অবধি ব্যাঙ্কে গিয়ে এই নোট পাল্টে নেওয়া যাবে। অর্থ দফতরের সচিব থেকে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর, প্রত্যেকেই আশ্বস্ত করেছেন যে, এই সিদ্ধান্তের ফলে অর্থব্যবস্থায় প্রভাব পড়বে যৎসামান্য। অর্থাৎ, গত দফায় যে অবিশ্বাস্য দুর্গতি হয়েছিল সাধারণ মানুষের, এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছিল, এ বার তা হবে না বলেই কর্তাদের বিশ্বাস। কথাটি ভিত্তিহীন নয়। গত দফায় যদি ঘটনাটি ট্র্যাজেডি হয়ে থাকে, এই দফায় কার্যত প্রচলনের বাইরে চলে যাওয়া নোটটি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিতান্তই প্রহসন। অধিকাংশ নাগরিকই মনে করতে পারবেন না, শেষ কবে ২০০০ টাকার নোট হাতে পেয়েছিলেন তাঁরা। তার কারণটি সহজ— বেশ কিছু দিন ধরেই এই নোট বাজারে কমে আসছে। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত কয়েক বছরে আর নতুন ২০০০ টাকার নোট ছাপা হয়নি। পুরনো, ক্ষতিগ্রস্ত নোটও ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ২০১৯ সালে অর্থব্যবস্থায় মোট যত কারেন্সি নোট প্রচলিত ছিল, মূল্যের নিরিখে তার ৩১.২ শতাংশ ছিল ২০০০ টাকার নোট। অনুপাতটি ২০২২ সালে কমে দাঁড়ায় ১৩.৮ শতাংশে, এ বছর তা আরও কমেছে। এ দফায় নোট রাতারাতি বাতিলও হচ্ছে না, পাল্টে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট সময়ও থাকছে হাতে। সব মিলিয়ে, প্রাথমিক দৃষ্টিতে এ বারের সিদ্ধান্তে গত বারের বিশালাকার অবিবেচনা নেই, কেউ বলতে পারেন।

তবে দুটি প্রশ্ন না করে থাকা যায় না। এক, ২০০০ টাকার নোটটি আদৌ চালু করা হয়েছিল কেন; এবং দুই, নোটটি হঠাৎ বাতিলই বা করতে হচ্ছে কেন? প্রথম প্রশ্নটির বয়স সাড়ে ছ’বছর পেরিয়েছে, সরকারের তরফে এখনও কোনও সদুত্তর মেলেনি। নোট বাতিলের তাণ্ডবের সময় সরকারের তরফে নিয়মিত বিচিত্র সব যুক্তি পেশ করা হত, তার মধ্যে একটি ছিল কালো টাকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ। কাণ্ডজ্ঞান বলে যে, কালো টাকার ব্যবসায়ীরা বাড়িতে নোটের পাহাড় জমিয়ে রাখেন না, সেই টাকা তাঁদের বিভিন্ন খাতে লগ্নি করা থাকে। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেওয়া যায় যে, তাঁরা নগদে কালো টাকা মজুত করেন, তা হলেও ১০০০ টাকার নোট তুলে নিয়ে তার বদলে ২০০০ টাকার নোটের ব্যবস্থা করা ঠিক কোন গোত্রের বিবেচনা? এতে একটিই উপকার হয়— সমান জায়গায় দ্বিগুণ মূল্যের টাকা মজুত করা যায়। নোবেলজয়ী অর্থশাস্ত্রী রিচার্ড থেলার এমন অর্থনৈতিক প্রজ্ঞার কথা শুনে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন।

সে সময় কানাঘুষো চলছিল যে, উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনের আগে যাতে বিরোধী দলগুলির হাতে টাকায় টান পড়ে, তার জন্যই নোটবাতিলের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বের পক্ষে কোনও অকাট্য প্রমাণ মেলেনি, অতএব সে জল্পনা সরিয়ে রেখে বরং প্রশ্ন করা যাক, এখন ২০০০ টাকার নোট তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হল কেন? রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক বা অর্থ মন্ত্রক, কোনও তরফেই এই প্রশ্নের কোনও উত্তর মেলেনি। দেশের পরিচালকরা সম্ভবত বিশ্বাস করেন না যে, তাঁদের সিদ্ধান্তের পিছনে থাকা যুক্তিগুলি জানার অধিকার সাধারণ মানুষের রয়েছে। ঘটনা হল, ২০১৬ সালেও ২০০০ টাকার নোটের আদৌ কোনও প্রয়োজন ছিল না, এখন আরও নেই। গত কয়েক বছরে ভারতে একটি বিপ্লব ঘটে গিয়েছে, যার নাম ইউনিফায়েড পেমেন্টস ইন্টারফেস বা ইউপিআই। ফলে, ছোট বা বড়, যে কোনও অঙ্কের লেনদেনের জন্যই নগদের প্রয়োজন ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। আশা করা যাক, ২০০০ টাকার নোট বাতিল করার পরে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক ফের কোনও বড় মূল্যের নোট চালু করার পথে হাঁটবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE