E-Paper

অধিকার

যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আদালতের সাম্প্রতিক রায়টির অভিঘাত অন্তত দ্বিমাত্রিক। এক, এই রায়ের ফলে দেশের খনিজ-সমৃদ্ধ রাজ্যগুলির সামনে রাজস্ব বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ খুলবে।

শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২৪ ০৮:৩৪
supreme court

—ফাইল চিত্র।

দীর্ঘ পঁচিশ বছর চলার পর এমন এক মামলার রায় প্রকাশিত হল, ভারতীয় অর্থব্যবস্থা ও তার যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় যে রায়ের অভিঘাত বিপুল হতে চলেছে। সুপ্রিম কোর্টের নয় সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ মিনারেল এরিয়া ডেভলপমেন্ট অথরিটি বনাম স্টিল অথরিটি অব ইন্ডিয়া মামলায় সুপ্রিম কোর্টেরই ১৯৮৯ সালের সাত সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায় নাকচ করে জানাল যে, খনির লিজ়গ্রহীতার থেকে রয়্যালটি আদায় করা এবং খনিজ উত্তোলনের উপরে কর আরোপ করা দু’টি সম্পূর্ণ পৃথক বিষয়, এবং প্রথমটি কোনও ভাবেই দ্বিতীয়টির পরিসরে হস্তক্ষেপ করে না। এই রায়ের প্রত্যক্ষ ফল হল, যে রাজ্যগুলিতে খনিজ সম্পদ রয়েছে, সেগুলি সেই খনিজ উত্তোলনের উপরে, এবং সে কাজে জমি ব্যবহারের উপরে রয়্যালটি বাবদ রাজস্ব আদায় করতে পারবে। নয় সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ ১৯৮৯ সালের সাত সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চের যে রায়টিকে নাকচ করল, তাতে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল যে, রয়্যালটি একটি করবিশেষ, এবং রাজ্য সরকারগুলির কেবল রয়্যালটি আদায় করারই অধিকার রয়েছে, খনি সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডের উপরে কর আদায় করার অধিকার নেই।

এই মামলার কেন্দ্রে রয়েছে সংবিধানের সপ্তম তফসিলের দু’টি ধারা। সেই তফসিলের অন্তর্ভুক্ত রাজ্য তালিকায় রাজ্যের অধিকার হিসাবে স্বীকৃত রয়েছে যে, খনিজ উন্নয়ন বিষয়ে সংসদে পাশ হওয়া কোনও আইনের সাপেক্ষে সীমাবদ্ধতা অস্বীকার না করে রাজ্যের খনিজ সম্পদের উপর কর আদায়ের সম্পূর্ণ ও একচেটিয়া অধিকার থাকবে রাজ্যের। অন্য দিকে, কেন্দ্রীয় তালিকায় বলা হয়েছে, সংসদ দ্বারা জনস্বার্থে রচিত কোনও আইনের এক্তিয়ার অনুসারে খনিজ ও খনি সংক্রান্ত উন্নয়নের অধিকার থাকবে কেন্দ্রের। ১৯৫৭ সালের মাইনস অ্যান্ড মিনারেলস (ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেশন) অ্যাক্ট (এমএমডিআরএ) অনুসারে, খনি পরিচালনার জন্য কোনও ব্যক্তি বা সংস্থা যে ব্যক্তি বা সংস্থার থেকে জমি লিজ়ে নেবে, তাকে উত্তোলিত খনিজের সাপেক্ষে রয়্যালটি দিতে হবে। এই মামলার মূল প্রশ্নটি ছিল, যে ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার কোনও সংস্থাকে খনির জন্য জমি লিজ় দিয়েছে, সে ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের প্রাপ্য রয়্যালটি কি এমএমডিআরএ অনুসারে কর হিসাবে গণ্য হবে? সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, এটি চরিত্রগত ভাবে কর নয়। ফলে, রাজ্যগুলির পক্ষে এই রয়্যালটি আদায়ের পথে আর বাধা রইল না। তবে, নয় সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায়েই এই মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি ঘটবে, সে নিশ্চয়তা নেই। শীর্ষ আদালতের রায়ের পর ওড়িশা আদালতে আবেদন জানিয়ে বলেছে, ১৯৮৯ সাল থেকে বকেয়া রয়্যালটির টাকা মেটানোর নির্দেশ দেওয়া হোক। কেন্দ্রীয় সরকার সেই আবেদনের বিরোধিতা করে বলেছে, সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার উপর ৭০,০০০ কোটি টাকার বোঝা চাপবে, যা অর্থব্যবস্থার পক্ষে মারাত্মক। কাজেই, মামলা দীর্ঘসূত্রতর হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আদালতের সাম্প্রতিক রায়টির অভিঘাত অন্তত দ্বিমাত্রিক। এক, এই রায়ের ফলে দেশের খনিজ-সমৃদ্ধ রাজ্যগুলির সামনে রাজস্ব বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ খুলবে। ঐতিহাসিক ভাবে এই রাজ্যগুলি উন্নয়নের দৌড়ে পিছিয়ে আছে। কেন্দ্রীয় সরকার বর্তমানে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দের ক্ষেত্রে যে রকম ব্যয়কুণ্ঠ নীতি গ্রহণ করেছে, তাতে রাজ্যের হাতে এই অর্থের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। কিন্তু, অন্য দিকে, নয় সদস্যের বেঞ্চের এক জন— বিচারপতি বি ভি নাগরত্ন— বেঞ্চের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে তাঁর রায়ে বলেছেন যে, এই রায়ের ফলে রাজ্যগুলির মধ্যে অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা আরম্ভ হতে পারে, যার ফলে বিভিন্ন খনিজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটবে, এবং দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে। আশঙ্কাটিকে গুরুত্ব দেওয়া বিধেয়। রাজ্যের স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রেখে দেশের উন্নয়ন বজায় রাখার জন্য নীতিগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Supreme Court of India Mineral Tax

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy