Advertisement
৩০ মার্চ ২০২৩
Construction Workers

কর্তব্যের পথ

নির্মাণ প্রকল্পে নিযুক্ত শ্রমিকদের নথিভুক্ত করার দায় সহজেই এড়ানো যায়। অধিকাংশ নির্মাণ সংস্থা ঠিকাদারের উপর শ্রমিক জোগানের দায়িত্ব ঠেলে দেয়।

A Photograph of construction workers

নির্মাণ শ্রমিক। প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৪:৫৩
Share: Save:

এই প্রথম প্রধানমন্ত্রীর অতিথি হয়ে প্রজাতন্ত্র দিবসের সমারোহে সপরিবার উপস্থিত ছিলেন নির্মাণ শ্রমিকরা। তাঁরা রাজধানীর সেন্ট্রাল ভিস্টার ‘কর্তব্য পথ’ নির্মাণে অংশ নিয়েছিলেন। গত বছরই নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছিলেন, প্রজাতন্ত্র দিবসের উদ্‌যাপনে তাঁরা হবেন বিশেষ অতিথি। দেশ-বিদেশের নেতা-নেত্রী এবং নিজ নিজ ক্ষেত্রে কৃতী ব্যক্তিরাই সাধারণত এই অনুষ্ঠানে ‘বিশেষ অতিথি’-র সম্মান পান। সেখানে শ্রমিকদের সসম্মান উপস্থিতি নিশ্চয়ই দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে একটা গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পাঠায়। তবে কথার পিছনেও কথা থাকে। এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে অতিথি আসনে উপবিষ্ট এক নির্মাণ শ্রমিক জানিয়েছেন, আমন্ত্রণ পেয়ে তিনি অত্যন্ত খুশি, তবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হলে অনুরোধ করতেন, ঠিকাদারকে বলে যেন তিনি বকেয়া বেতন পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। প্রজাতন্ত্র দিবসে আমন্ত্রিত এই শ্রমিকদের যদি ভারতের প্রায় সাড়ে সাত কোটি নির্মাণ শ্রমিকের প্রতিনিধি বলে মনে করা যায়, তা হলে বকেয়া মজুরি না পাওয়ার এই অভিযোগও দেশের শ্রমিকদের সার্বিক বিপন্নতার প্রতিফলন। ‘কর্তব্য পথ’ যাঁরা নির্মাণ করেছেন, তাঁদের প্রায় সকলেই পরিযায়ী শ্রমিক। তাঁদের অসহায়তার আন্দাজ মিলেছিল ২০২০ সালে, কোভিড অতিমারির পরে ঘোষিত লকডাউনে। নিয়োগকারী অথবা সরকার, কেউ পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে ছিল না। খাদ্য-আশ্রয়ের অভাবে তাঁরা দলে দলে শত শত কিলোমিটার পায়ে হেঁটে, অথবা বিপজ্জনক পরিবহণে, বাড়ি ফিরেছিলেন, বা ফিরতে পারেননি। কেন্দ্র অবশ্য আদালতকে জানিয়েছিল, গৃহের পথে নিহত পরিযায়ী শ্রমিকদের কোনও তথ্য তাদের কাছে নেই। প্রজাতন্ত্র দিবসে পরিযায়ী শ্রমিকদের সম্মান প্রদর্শন কি তিন বছর পূর্বের সেই অসম্মান মুছে দিতে পারবে?

ই-শ্রম পোর্টালে শ্রমিকের নথিভুক্তি, বা সারা দেশে এক রেশন কার্ড চালু হয়েছে। তা সত্ত্বেও কোভিড-উত্তর কালে পরিযায়ী শ্রমিক তথা নির্মাণ শ্রমিকদের সুরক্ষায় তেমন কোনও পরিবর্তন আসেনি। ঠিকা শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি ও দৈহিক নিরাপত্তার জন্য নানা আইনি ব্যবস্থা আছে। কিন্তু আইনি সুরক্ষা, অথবা নির্মাণ শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের সহায়তা, পেতে পারেন কেবল নথিভুক্ত শ্রমিকেরা। অথচ, নির্মাণ প্রকল্পে নিযুক্ত শ্রমিকদের নথিভুক্ত করার দায় সহজেই এড়ানো যায়। অধিকাংশ নির্মাণ সংস্থাই ঠিকাদারের উপর শ্রমিক জোগানের দায়িত্ব ঠেলে দেয়। ঠিকাদারকে দায়বদ্ধ করার ব্যবস্থা সেই তিমিরেই। শ্রমিককে প্রাপ্য মজুরি বা সুরক্ষা না দেওয়ার জন্য এখনও অবধি কোনও সংস্থা অথবা ঠিকাদারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি। আজও ভারতে এক বিশাল শ্রমবাহিনী সম্পূর্ণ সুরক্ষাহীন। ন্যায্য মজুরি, বকেয়া মজুরি পাওয়া তো দূরস্থান, প্রাণের নিরাপত্তাও নেই। একটি জাতীয় সমীক্ষা অনুসারে, ভারতে প্রতি বছর এগারো হাজারেরও বেশি নির্মাণ শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে প্রাণ হারান। বিদেশেও পরিযায়ী ভারতীয় শ্রমিকদের মৃত্যু এবং অসহায় বন্দিদশার অজস্র দৃষ্টান্ত বার বার সামনে এসেছে। অতএব শ্রমিকদের স্বীকৃতি ও সম্মান করতে চাইলে রাষ্ট্রের কর্তব্য— নির্মাণস্থলে কর্মরত শ্রমিকদের বাসস্থান এবং জরুরি পরিষেবার জোগান নিশ্চিত করা। সর্বোপরি, নির্মাণ সংস্থা ও ঠিকাদারদের আইন মানতে বাধ্য করা দরকার। নেতার বদান্যতা নয়, নির্মাণ শ্রমিকের প্রয়োজন আইনের শাসন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.