E-Paper

দায়সারা

অপরাধ দমন এবং টেলিকম ক্ষেত্রে নিরাপত্তা জোরদার করার অছিলায় সরকার সিম সুরক্ষিত রাখার দায়িত্বটি সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের উপরেই চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে?

শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৭:২৩

সাইবার প্রতারণার ক্রমবর্ধমান ঘটনায় জর্জরিত সাধারণ মানুষ। এরই মাঝে টেলিকম দফতর (ডট)-এর সাম্প্রতিক বিবৃতি তাঁদের উদ্বেগ আরও খানিক বাড়াতে বাধ্য। তাদের বক্তব্য, বর্তমানে আর্থিক প্রতারণা-সহ নানা দুষ্কর্ম পরিচালিত হয় জাল পরিচয়পত্র দিয়ে কেনা সিম কার্ডের মাধ্যমে। তাই নাগরিকদের সচেতনতা জরুরি। যদি দেখা যায় কোনও এক ব্যক্তির নামে থাকা সিম কাজে লাগিয়ে অন্য কেউ অপরাধ করেছে, তবে আইনি জটিলতায় জড়িয়ে পড়তে পারেন সিমের আসল মালিক। একই ভাবে, মোবাইল বা মোডেমের মতো অন্য কোনও টেলি যোগাযোগ যন্ত্র কেনার সময় তার চিহ্নিতকরণ (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি অথবা আইএমইআই) নম্বর আসল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখতে বলেছে টেলিকম দফতর। এই নম্বর এই ধরনের প্রতিটি যন্ত্রের ক্ষেত্রে আলাদা হয় এবং তা সরকারের কাছে নথিভুক্ত থাকে। কোনও ভাবে আইএমইআই নম্বরে কারচুপি করা হলে ভুয়ো সিম-এর মতো তিন বছর পর্যন্ত জেল বা ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা দুটোই হতে পারে। লক্ষণীয়, গত বছর ডিজিটাল প্রতারণায় দেশের মানুষ হারিয়েছেন ২২,৮৪৫ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ২০৬ শতাংশ বেশি। ন্যাশনাল সাইবার ক্রাইম রিপোর্টিং পোর্টাল (এনসিআরপি)-এ অভিযোগ জমা পড়ে ৩৬ লক্ষের উপর। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ বছর কয়েক মাস আগে পর্যন্ত সাইবার জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত ৯.৪২ লক্ষেরও বেশি সিম কার্ড এবং ২,৬৩,৩৪৮টি আইএমইআই ব্লক করা হয়েছে। জাল পরিচয়পত্র জমা দিয়ে সিম কার্ড কিনে আর্থিক প্রতারণা আটকাতেই এই পদক্ষেপ, দাবি ডট-এর। অভিযোগ জানাতে তাই সরকারের উদ্যোগে তৈরি ‘সঞ্চারসাথী’ অ্যাপ বা ওয়েবসাইটের সাহায্য নিতে পরামর্শ দিচ্ছে তারা। সেই সঙ্গে আগামী দিনে সব নতুন মোবাইলে এই অ্যাপ বাধ্যতামূলক ভাবে রাখারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তার মানে কি অপরাধ দমন এবং টেলিকম ক্ষেত্রে নিরাপত্তা জোরদার করার অছিলায় সরকার সিম সুরক্ষিত রাখার দায়িত্বটি সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের উপরেই চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে? অথচ, গ্রাহক পরিচয় চুরির শিকার হতে পারেন, যেখানে তাঁর নথিপত্র ব্যবহার করে তাঁর অজানতে বা সম্মতি ছাড়াই সিম কার্ড সংগ্রহ করা হয়েছিল। এক জন সাধারণ নাগরিকের পক্ষে তাঁর নামে নিবন্ধিত প্রতিটি সিম কার্ড ক্রমাগত পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণ করা কি সম্ভব, যেখানে সরকারি উদ্যোগকে পাশ কাটিয়ে প্রতারকরা জালিয়াতির জন্য প্রতিনিয়ত নতুন পথ নিচ্ছে? টেলিকম কোম্পানিগুলির প্রাথমিক দায়িত্ব সিম কার্ড দেওয়ার আগে গ্রাহকের পরিচয় যাচাই করা। অপারেটর বা তাদের এজেন্টের গাফিলতির কারণে জাল সিম চালু হলে দায়বদ্ধতা অবশ্যই বর্তায় সেই ব্যক্তি বা সংস্থাটির উপর। ডট-এর মাধ্যমে সরকার স্বয়ং এই যাচাই করার নিয়মগুলি বলবৎ করে। যদি জালিয়াতি ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়ে, তবে তা শুধুমাত্র গ্রাহকের ব্যক্তিগত অবহেলার চেয়েও পদ্ধতিগত ব্যর্থতার দিকে আঙুল ওঠে বেশি। ভুয়ো ফোন-মেসেজের ফলে জালিয়াতদের খপ্পরে পড়ে এমনিতেই মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। তাই গ্রাহকদের শাস্তি দেওয়ার চেয়ে জরুরি বিকল্প পদ্ধতি, যেমন যান্ত্রিক-স্তরের নিরাপত্তা বৃদ্ধি, বিক্রয়ের স্থানে কেওয়াইসি প্রক্রিয়া উন্নত করা এবং আরও শক্তিশালী আইনের প্রয়োগ। জালিয়াতি রোখার ক্ষেত্রে সরকার নিজের দায়িত্ব এড়াতে পারে না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Telecom Cyber fraud

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy