Advertisement
০২ মে ২০২৪
Specially Abled Children

বিভেদ নয়

দাবিগুলির মধ্যে অ-সাধারণত্ব কিছু নেই, যা প্রশাসন ও সমাজ তাদের দিতে অপারগ। অথচ, নানা অজুহাতে তাদের বিচ্ছিন্ন করে রাখার প্রচেষ্টাই চোখে পড়ে অধিক।

শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০২৩ ০৪:৩৫
Share: Save:

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে একটু বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। প্রয়োজন, একটু সচেতন উদ্যোগের। অথচ এখনও সমাজ এই জায়গাটিতে বহু পিছিয়ে। মানসিকতার দিক থেকেও, উদ্যোগের অভাবেও। সম্প্রতি সেই চিত্রটিই আবার ধরা পড়ল যখন কিছু বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থী তাদের নিজস্ব দাবিগুলিকে স্পষ্ট ভাষায় তুলে ধরল পশ্চিমবঙ্গ শিশু-অধিকার সুরক্ষা কমিশনের মঞ্চে। তাদের মধ্যে এক জন, অষ্টম শ্রেণির রিয়া সর্দার একটি দিনের জন্য কমিশনের চেয়ারপার্সনের পদটি অলঙ্কৃত করেছিল। সঙ্গে ছিল আরও চার শিক্ষার্থী। প্রসঙ্গত, প্রতি বছর ৩০ জুলাই আন্তর্জাতিক মানব পাচার প্রতিরোধী দিবসে এই অভিনব পদ্ধতিটি কমিশনের পক্ষ থেকে অনুসরণ করা হয়। সমাজের নানা স্তর থেকে আগতরা এক দিনের জন্য এই পদে বসেন এবং তাঁদের নিজস্ব দাবিগুলি তুলে ধরেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের মন্ত্রীর কাছে। সেই ধারাতেই রিয়া ও তার সঙ্গীরা জোর দিয়েছে তাদের প্রয়োজনগুলির উপরে— স্কুল-অফিসে র‌্যাম্পের ব্যবস্থা, গণপরিবহণের সুবিধা লাভ, যৌন নির্যাতন ও শিশুশ্রমিক হিসাবে ব্যবহারের হাত থেকে বাঁচাতে উপযুক্ত সুরক্ষাবর্ম ইত্যাদি। এবং তারা চেয়েছে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াতে তাদেরও যেন শামিল করা হয়। “আমাদের ছাড়া, আমাদের জন্য কিছু নয়”, এমনটাই জানিয়েছে তারা।

দাবিগুলির মধ্যে অ-সাধারণত্ব কিছু নেই, যা প্রশাসন ও সমাজ তাদের দিতে অপারগ। অথচ, নানা অজুহাতে তাদের বিচ্ছিন্ন করে রাখার প্রচেষ্টাই চোখে পড়ে অধিক। স্কুলগুলো শিশুর জীবন গড়ার প্রথম সোপান। অথচ, সেখানেই তাদের খামতি নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ সহ্য করতে হয়। তাদের সমস্যাগুলিকে যত্ন করে সমাধান করার পরিবর্তে সেগুলি অগ্রাহ্য করাই নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়। যারা সাঙ্কেতিক ভাষায় অভ্যস্ত, তাদের কথা শোনা ও বোঝার মতো কেউ থাকে না। বিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠান থেকে ব্রাত্য করে রাখা হয় তাদের। সর্বোপরি, অনেক ক্ষেত্রে স্কুলই জোর দেয় আলাদা স্কুলের ব্যবস্থা করার জন্য। অথচ, তাদের সকলের বিশেষ স্কুলে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। যাদের সমস্যাগুলি মৃদু থেকে মাঝারি, তাদের সাধারণ স্কুলেই পড়ার উপর বিশেষজ্ঞরা বারংবার জোর দিয়েছেন। সেই পরামর্শ মানা হয় কতগুলি স্কুলে? ২০১২ সালের শিক্ষার অধিকার আইন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের শিক্ষার মূল স্রোতে যুক্ত করার কথা বলেছে। তাতেও পরিস্থিতি বিশেষ পাল্টায়নি।

শুধু তো বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরা নয়, সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যেও যারা পড়ার গতির সঙ্গে তাল রাখতে পারে না, তাদের জন্য আলাদা ক্লাস, আলাদা ব্যবস্থা করার কথা ভাবে কতগুলি স্কুল? স্কুলের অনুষ্ঠান, স্পোর্টসেও সেরাদেরই জয়জয়কার। দুর্বলদের উপস্থিতি অনুষ্ঠান সর্বাঙ্গসুন্দর করতে দেবে না— এই ভয় অলক্ষ্যে কাজ করে। ফলে ক্রমাগত অনুৎসাহ প্রদান, অসহযোগিতার কারণে বিভেদ তীব্র হয়, বিচ্ছিন্নতাবোধ আরও বাড়ে। সমাজ এখনও ‘অপর’কে স্বাভাবিক ভাবে গ্রহণ করতে শেখেনি। সেই শিক্ষার প্রাথমিক ভারও কিন্তু শিক্ষালয়ের উপরেই বর্তায়। এক আদর্শ বিদ্যালয় সকল শিক্ষার্থীকে সমান সুযোগ দেবে, যারা পারল না তাদের এগিয়ে যাওয়ার সঠিক পথ দেখাবে, সেটাই কাম্য। এমন উদ্যোগ যে প্রায় চোখেই পড়ে না— সেই মর্মান্তিক সত্যটিই সামনে আনল রিয়া ও তার সঙ্গীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Specially Abled Children physically challenged
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE