E-Paper

আশার কারণ

দলগত পরিসংখ্যান এবং ক্রিকেটীয় সাহস— দুই-ই ভারতের পক্ষে। সর্বাধিক রান ও উইকেট সংগ্রাহক ছাড়াও, সেঞ্চুরির সংখ্যায়, নতুন রেকর্ডের কৃতিত্বে ইংল্যান্ডকে পিছনে ফেলেছে ভারতশক্তি।

শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০২৫ ০৬:৪০

ইংল্যান্ডের মাটিতে— ক্রিকেটীয় পরিভাষায় ‘ইংলিশ কন্ডিশন’-এ— দল কেমন খেলল, তা দক্ষতার অন্যতম সূচক। ভারতের ক্ষেত্রে এই সফরে সঙ্গে চলে গরিমার উত্তাপও। ক্রিকেটবিশ্বের রাশ যে ধাত্রীভূমি থেকে উপমহাদেশে কুক্ষিগত, সেই মান রক্ষার দায় থাকে। এ বারের ইংল্যান্ড সফরের আগে ভারতের ক্রিকেটদল নিয়ে ঘোর শঙ্কা ছিল। সদ্য-অবসৃত মহারথীদের শূন্য আসন নিয়ে দীর্ঘশ্বাসে, চোট-আঘাতে জেরবার প্রজন্মান্তরের পরের বাহিনীটিকে অতীতের ছায়ামাত্র জ্ঞানে সফর নিয়ে আশাবাদীর সংখ্যা ছিল নগণ্য। নতুন অধিনায়কের মুকুটে, ব্যক্তিত্বে, শৈলীতে— দীপ্তির অভাবে মুষড়ে ছিল ক্রিকেটমহলও। অথচ, প্রজন্ম-বদলের অন্ধকার হতেই ভারতের ক্রিকেটসূর্যটি আবার উদিত ইংল্যান্ডের মাঠে, যেখানে একদা শ্রেষ্ঠত্বের ট্রফি তুলেছিলেন কপিলদেব নিখাঞ্জ, ভারতের হুঙ্কারে বিশ্বকে শিহরিত করেছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, প্রথম শতকের মাধ্যমে নিজের আগমন-বার্তা পৃথিবীতে ধ্বনিত করেছিলেন সচিন তেন্ডুলকর। সিরিজ় অমীমাংসিত— এই ফলের মাপকাঠিতে সফরের প্রাপ্তির খতিয়ান স্পষ্ট হয় না। এই সফর ভারতীয় ক্রিকেটকে নিয়ে গেল নতুন তর মাত্রায়।

দলগত পরিসংখ্যান এবং ক্রিকেটীয় সাহস— দুই-ই ভারতের পক্ষে। সর্বাধিক রান ও উইকেট সংগ্রাহক ছাড়াও, সেঞ্চুরির সংখ্যায়, নতুন রেকর্ডের কৃতিত্বে ইংল্যান্ডকে পিছনে ফেলেছে ভারতশক্তি। প্রাথমিক দোদুল্যমানতা কাটিয়ে অধিনায়কের কাঙ্ক্ষিত স্থিতি ও ধী-তে ভাস্বর হয়েছেন শুভমন গিল। ঋষভ পন্থ শুধু তাঁর প্রতিভার প্রতি সুবিচারই করেননি, ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ভাঙা পায়ে ব্যাট হাতে তাঁর পিচে প্রত্যাবর্তন অনিল কুম্বলের স্মৃতি ফিরিয়েছে। কে এল রাহুল ও যশস্বী জায়সওয়ালের ওপেনিং জুটি জমাট, সাই সুদর্শন ভারতীয় রক্ষণের পরবর্তী স্তম্ভ হয়ে ওঠার চিহ্ন দেখিয়েছেন, ওয়াশিংটন সুন্দরের অলরাউন্ড দক্ষতা দলের সম্পদ। মহম্মদ সিরাজ ও আকাশদীপের সাফল্য বুমরা-নির্ভরতা থেকে দলকে মুক্ত করবে এবং সামগ্রিক ভাবে তাঁরা বিশ্বের ভয়ঙ্করতম পেস-ব্যাটারি হওয়ার দাবিদার।

পাঁচ টেস্টের সিরিজ়ে প্রতিটি ম্যাচ পাঁচ দিনে গড়িয়েছে এবং বহু বার খাদ থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ভারত। প্রথম টেস্টে ইংল্যান্ড ৩৭৩ রান তাড়া করে জেতার পরও যে মনোবলে চিড়মাত্র ধরেনি, এজবাস্টনের দ্বিতীয় টেস্টে ভারতের বিশাল জয়েই তার প্রমাণ। শুধু দক্ষতাই নয়, চরিত্রের এই দার্ঢ্যও এই দলটির পাথেয়। টি২০ জমানায় টেস্ট ক্রিকেটে নবযৌবন আনলেন এই তরুণদল। পাঁচ দিনেই এ খেলার দক্ষতার অগ্নিপরীক্ষা, অতএব ভরসা জাগে অচিরে বাকি ফর্ম্যাটগুলিতেও তাঁদের প্রতিপত্তির রেশ বইবে। ব্যস্ত পৃথিবীর গতির সঙ্গে তাল মেলাতে ব্যর্থ, পাঁচ দিন ধরে শুধু টিকে থাকা ও মাঝেমধ্যে বাউন্ডারির ক্লান্তিকর বিগত যুগের ক্রিকেট— দেখা যাচ্ছে, এই দুর্নামের কুণ্ড থেকে পুনরুত্থান ঘটেছে টেস্ট ক্রিকেটের। সাম্প্রতিক কালে ম্যাচ অমীমাংসিত থাকার প্রবণতা কমেছে। আসলে যে টি২০ টেস্ট ও এক দিনের খেলার ঘাতক বলে চিহ্নিত, দেখা যাচ্ছে পরোক্ষে সেই ‘অভিশাপ’ই টেস্ট ক্রিকেটের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। সেখানে খেলোয়াড়দের মধ্যে যে দ্রুত অনেক রান তোলার, জেতার তাগিদ— সেই একই খেলোয়াড় যখন টেস্ট খেলছেন সেই চারিত্রিক গুণাবলি সেখানেও তাঁকে এগিয়ে দিচ্ছে। টি২০-ই টেস্ট ক্রিকেটকে অক্সিজেন জোগাচ্ছে। তবে সে তো খেলাটির ক্ষুদ্রতম সংস্করণ। টেস্ট-এর চাহিদা অনেক বেশি। বৃহত্তম অঙ্গনটিতে দেখা যাচ্ছে, উপর্যুপরি টি২০-র অভিজ্ঞতার লাভের ফসল তোলার পরও, আগ্রাসন আত্তীকরণের পাশাপাশি, টানা পাঁচ দিন যে ক্রিকেটার সক্ষমতার শিখরে থাকার দম দেখাচ্ছেন, তিনি এবং তাঁর দলেরই শাসন চলছে। সব মিলিয়ে, টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে ফের আশাবাদী হওয়ার কারণ দেখা যাচ্ছে। এবং, সেই নবদিগন্তে নেতার ভূমিকায় রয়েছে ভারত।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

indian cricketers India-England Test Series

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy