Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
GST

সম্পর্ক

অতিমারির দু’বছর প্রমাণ করেছে যে, জিএসটি-র অন্তর্নিহিত প্রতিশ্রুতি রক্ষায় কেন্দ্রীয় সরকার তেমন আগ্রহী নয়।

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২২ ০৫:৫৮
Share: Save:

বিতর্কের তিলক কপালে নিয়েই যেন জন্মেছে জিএসটি। সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের এক সাংসদ রাজ্যসভায় অভিযোগ করলেন, বিরোধী-শাসিত রাজ্যগুলিই জিএসটি-র বকেয়া প্রাপ্তির প্রশ্নে পিছিয়ে রয়েছে। বিরোধী দলগুলির ইঙ্গিত, বিজেপি সরকার বিরোধীদের প্রতি বিমাতৃসুলভ আচরণ করাতেই এই ঘটনা ঘটছে। দিনকয়েকের মধ্যেই অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন অভিযোগটি অস্বীকার করলেন। কিন্তু, তাতেই যাবতীয় বিতর্কের ইতি, এমন আশা করার বিন্দুমাত্র কারণ নেই। বিতর্ক জিএসটি-র জন্মলগ্ন থেকেই সঙ্গী, এই কথাটি নেহাত আলঙ্কারিক নয়। ভারতে আর্থিক যুক্তরাষ্ট্রীয়তার যতটুকু অবশিষ্ট ছিল, তাকেও ধ্বংস করে জিএসটি-র জন্ম। রাজ্যগুলির হাতে পরোক্ষ কর আদায়ের যে অধিকার ছিল, তাকে বহুলাংশে খর্ব করে জিএসটি। ফলে, কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কটি আরও অসম হয়ে ওঠে। এই অসমতা থেকেই বিতর্কের সূত্রপাত। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী তাঁর স্বভাবসুলভ কড়া গলায় বলেছেন, জিএসটি-র প্রতি সংশয় প্রকাশ করার অর্থ, জিএসটি পরিষদকে অবমাননা করা। সেই পরিষদে খাতায়-কলমে কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিপত্য নেই— দেশের প্রতিটি রাজ্যের অর্থমন্ত্রী বা অন্য কোনও মনোনীত প্রতিনিধি সেই পরিষদের সদস্য। ফলে, অর্থমন্ত্রীর মন্তব্যকে প্রসারিত করলে দাঁড়ায় যে, এই কাঠামোটির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রীয়তার ঘাটতি নেই। যুক্তিটি বিভিন্ন ভাবে গোলমেলে। যেমন, কোন রাজ্য কোন রাজস্ব নীতি অবলম্বন করবে, প্রকৃত যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় তা কেন্দ্রীয় সরকার বা অন্য কোনও রাজ্যের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল হতে পারে না। জিএসটি কাউন্সিলের মাধ্যমে গৃহীত সিদ্ধান্ত সেই কাজটি করতেই বাধ্য করে। এই অসমতার ভিত্তিতে সম্পর্ক তৈরি হলে তা স্থিতিশীল হবে, সেই সম্ভাবনা নিতান্ত ক্ষীণ।

তবুও হয়তো একটা কার্যকর সম্পর্ক বজায় রাখা যেত, কিন্তু তাতে বাদ সাধল কেন্দ্রীয় সরকারের মনোভাব। বিরোধী-শাসিত রাজ্যগুলির জিএসটি খাতে পাওনা দীর্ঘতর সময় বকেয়া পড়ে থাকছে কি না, সেই তর্কে যদি না-ও ঢোকা যায়, অতিমারির দু’বছর প্রমাণ করেছে যে, জিএসটি-র অন্তর্নিহিত প্রতিশ্রুতি রক্ষায় কেন্দ্রীয় সরকার তেমন আগ্রহী নয়। রাজস্ব আদায় কম, এই অজুহাতে জিএসটি ক্ষতিপূরণ দেওয়া বন্ধ রাখল কেন্দ্রীয় সরকার। তার পর বলল, প্রয়োজনে রাজ্যগুলি বাজার থেকে টাকা ধার করে নিক। শেষ অবধি আংশিক ভাবে ক্ষতিপূরণ দিল বটে, কিন্তু ২০২২ সালের পর ক্ষতিপূরণ চালিয়ে যেতে সম্মত হল না। অতিমারির ফলে রাজ্যগুলির উপর যে আর্থিক চাপ তৈরি হয়েছে, এই মুহূর্তে তা লাঘব করার বিকল্প কোনও রাস্তাও রাজ্যগুলির সামনে নেই। পরিসংখ্যান বলছে, অতিমারির দু’বছরে রাজ্যগুলি অনেক বেশি করে জিএসটি ক্ষতিপূরণের উপর নির্ভরশীল হয়েছে। সব মিলিয়ে, জিএসটি-কে কেন্দ্র করে কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলির মধ্যে যে অবিশ্বাসের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, তা সুস্থ যুক্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের পরিপন্থী। বারে বারেই বিতর্ক তৈরি হবে, তাতে আশ্চর্য কী?

কেন্দ্রীয় শাসকদের বোঝা প্রয়োজন, জিএসটি-র নিয়ন্ত্রণক্ষমতা তাঁদের হাতে একটি রাজনৈতিক অস্ত্র নয়। তাঁদের প্রথম কর্তব্য, (বিরোধী-শাসিত) রাজ্যগুলির সঙ্গে বিশ্বাসের সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। দেশের বহু রাজ্যে বিজেপির সরকার থাকায় কাউন্সিলেও স্বভাবতই বিজেপিই সংখ্যাগরিষ্ঠ। সাম্প্রতিক অতীতের অভিজ্ঞতা বলছে, দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশ মেনে বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলি রাজ্যের স্বার্থ বিসর্জন দিতেও দ্বিধা করে না। মনে রাখা প্রয়োজন, তাতে শেষ অবধি ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাজ্যের মানুষই। ফলে, রাজনৈতিক সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার না করে জিএসটি-কে দেশের সুষম আর্থিক উন্নয়নের কাজে যথাযথ ভাবে ব্যবহার করাই বিধেয়। তার জন্য বিরোধীদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার গণতান্ত্রিক অভ্যাসটি রপ্ত করা প্রয়োজন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

GST Nirmala Sitharaman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE