E-Paper

মহাবিশ্বে মহাকাশে

মহাকাশের ক্ষেত্রে ভারতের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হল দেশেই মানব-বহনকারী মহাকাশযান নির্মাণের সক্ষমতা অর্জন।

শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৫ ০৫:৫৮

আবার চার দশক পরে মহাকাশে ফিরল ভারত। গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্ল-র হাত ধরে। ১৯৮৪ সালে রুশ মহাকাশযান সয়ুজ টি-১১’এ চেপে প্রথম ভারতীয় হিসাবে মহাকাশে পৌঁছনোর কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন উইং কমান্ডার রাকেশ শর্মা। তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে সাম্প্রতিক অ্যাক্সিয়ম-৪ অভিযানে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে (আইএসএস) পৌঁছে এ বার প্রথম ভারতীয় হিসাবে ইতিহাস গড়লেন শুক্লও। বেসরকারি সংস্থা অ্যাক্সিয়ম স্পেস-এর বাণিজ্যিক উড়ান অ্যাক্সিয়ম-৪ চেপে আইএসএস-এ যাওয়ার এই অভিযানটি পরিচালিত হয় আমেরিকান মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা, ভারতের ইসরো, ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ইএসএ) এবং স্পেস এক্স-এর যৌথ উদ্যোগে। প্রায় দু’সপ্তাহের এই অভিযানে আইএসএস-এর ‘এক্সপিডিশন ৭৩’ দলের সঙ্গে মিলে অ্যাক্সিয়ম-৪ সদস্যদের ৬০টিরও বেশি পরীক্ষানিরীক্ষা এবং শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করার কথা।

মহাকাশের ক্ষেত্রে ভারতের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হল দেশেই মানব-বহনকারী মহাকাশযান নির্মাণের সক্ষমতা অর্জন। সেই সঙ্গে ২০৩৫ সালের মধ্যে পৃথিবীর কক্ষপথে ‘ভারতীয় অন্তরিক্ষ স্টেশন’ (সংক্ষেপে, বাস) স্থাপন করারও লক্ষ্য রয়েছে, যেটি গবেষণা ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের পাশাপাশি মহাকাশে দীর্ঘমেয়াদি মানুষের উপস্থিতির কেন্দ্র হিসাবেও কাজ করবে। ভুললে চলবে না, অ্যাক্সিয়ম-৪’এর মতো মহাকাশ অভিযানগুলি এমনিতেই বেশ জটিল। অভিযানের পরিকল্পনা এবং মহাকাশচারীদের প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে জরুরি প্রক্রিয়ায় আচরণবিধি— এগুলি কেবল প্রযুক্তিগত দিক থেকেই নয়, কার্যক্ষমতার দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৭ সালের পরিকল্পিত ‘গগনযান’ অভিযানের আগে ভারতের যতটা সম্ভব মহাকাশচারণের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা জরুরি। এ দিকে, প্রস্তাবিত গগনযান অভিযানের জন্য চার সদস্যের দলে এমনিতেই নির্বাচিত হয়ে আছেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুক্ল। এই অবস্থায়, ভারতের ‘গগনযান’-এর আগে অ্যাক্সিয়ম-৪ মিশন বাস্তবায়িত হওয়ার বিষয়টি ইসরোকে মহাকাশ ভ্রমণে সরাসরি অভিজ্ঞতা অর্জনের একটি চমৎকার সুযোগ এনে দিয়েছে। ভারতের পরবর্তী পদক্ষেপে তা কাজে লাগবে।

এই পর্যায়ে অন্যান্য জাতীয় মহাকাশ সংস্থা এবং বেসরকারি অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বস্তুত, ভারতে মহাকাশ প্রশিক্ষণের বিশেষ সুযোগ সুবিধা না থাকায় শুক্ল এবং গগনযান অভিযানের জন্য নির্বাচিত অন্য তিন নভশ্চরকে রাশিয়ায় প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছিল। মহাকাশ এমনই একটি ক্ষেত্র যেখানে আমেরিকা ও রাশিয়ার মতো রাজনৈতিক চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যেও ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা দেখা গিয়েছে। এর অন্যতম উদাহরণ হল আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রটিই। সে ক্ষেত্রে অ্যাক্সিয়ম-৪’এর মতো অভিযানে ভারতের অন্তর্ভুক্তি মহাকাশ প্রযুক্তিতে ইসরোর অগ্রগতির পরিচায়ক। শুধু তা-ই নয়, এই একই কারণে নাসাও তাদের সঙ্গে একটি কৌশলগত অংশীদারিতে প্রবেশ করেছে, যার মধ্যে মানুষ-সহ মহাকাশ অভিযানের সহযোগিতাও অন্তর্ভুক্ত। ফলে ইঙ্গিত স্পষ্ট— মহাকাশ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ভারতের কাছে সুযোগ অপরিসীম। গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুক্ল-র মহাকাশচারণ সেই পথটিকে আরও কিছুটা প্রশস্ত করে দিল।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

International Space Station Space X

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy