Advertisement
১৮ মে ২০২৪
Congress

যত বদলায়

কংগ্রেসের প্রকৃত পরীক্ষা একটি বা দু’টি রাজ্য নয়, সর্বভারতীয় স্তরে। সেই পরীক্ষা কেবল দলের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ গণতন্ত্রের পক্ষেও।

মল্লিকার্জুন খড়্গে।

মল্লিকার্জুন খড়্গে।

শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২২ ০৫:০৬
Share: Save:

চব্বিশ বছরে দুই যুগ। দুই যুগ পরে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি পদে আসীন হলেন গান্ধী-নেহরু পরিবারের বাইরের মানুষ। আক্ষরিক অর্থে যুগান্তকারী ঘটনা। কিন্তু আক্ষরিক অর্থের বাইরে যুগ কি আদৌ বদলাবে? মল্লিকার্জুন খড়্গেকে সনিয়া ও রাহুল গান্ধীর মনোনীত বা প্রস্তাবিত প্রার্থী বলা ব্যাকরণসম্মত হবে না, কিন্তু সত্যের স্থান ব্যাকরণের উপরে। সত্য এই যে, নতুন কংগ্রেস সভাপতি ‘হাই কমান্ড’-এর আশীর্বাদধন্য। তার বহুবিধ লক্ষণ এই ‘নির্বাচন’ পর্বে প্রকট ছিল। বস্তুত, নির্বাচন প্রক্রিয়াটির অস্বচ্ছ ও ‘নিয়ন্ত্রিত’ চরিত্র নিয়ে যে সব প্রশ্ন উঠেছে, বিশেষত প্রতিনিধি-তালিকা জনসমক্ষে প্রকাশ করার জন্য প্রতিস্পর্ধী প্রার্থী শশী তারুরের দাবি যে ভাবে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করা হয়েছে, তা গান্ধী পরিবারের পক্ষে গৌরবের নয়, নতুন দলনায়কের পক্ষেও শ্লাঘার নয়। উপরমহলের দাক্ষিণ্যে নেতৃত্বের আসনে বসে স্বতন্ত্র, এমনকি বিদ্রোহী সত্তা প্রদর্শনের দৃষ্টান্ত অবশ্যই আছে, কিন্তু মল্লিকার্জুনের কাছে বিদ্রোহ দূরস্থান, স্বাতন্ত্র্যের প্রত্যাশা করলেও তাঁর প্রতি অবিচার করা হবে।

পিছন থেকে গান্ধী পরিবারের দল-শাসনের এই প্রবল সম্ভাবনাটি কি কংগ্রেসের পুনরুজ্জীবনের পথে বড় বাধা? পরিবারতন্ত্রের ঐতিহ্য থেকে মুক্তি পেলেই কি ক্রমশ হীনবল এবং কার্যত প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত হওয়া এই দল নতুন উদ্যমে ও সামর্থ্যে ভারতীয় রাজনীতির মাঝমাঠে ফিরে আসতে পারবে? তেমন কথা মনে করারও কোনও যুক্তি নেই। হাই কমান্ড তথা গান্ধী পরিবারের নিয়ন্ত্রণ অনেক কাল যাবৎ কংগ্রেসের একটি সমস্যা, কিন্তু আজ আর সেই সমস্যার পুরনো গুরুত্ব নেই। তার কারণ, অন্য এবং গভীরতর সমস্যা অনেক বেশি গুরুভার হয়ে উঠেছে। বস্তুত, সমস্যা না বলে তাকে সঙ্কট বলাই বিধেয়। কার্যত, অস্তিত্বের সঙ্কট। মাত্র দু’টি রাজ্যের শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকার বাস্তব সেই সঙ্কটের একটি পরিচয়। কিন্তু তার থেকেও অনেক বড় পরিচয় এই যে, অল্প কয়েকটি ব্যতিক্রম বাদ দিলে ভারত জুড়ে কংগ্রেসের রাজনৈতিক অস্তিত্ব দেখতে এখন অণুবীক্ষণ যন্ত্রের প্রয়োজন হয়। এবং, গুজরাত বা পঞ্জাবের মতো ব্যতিক্রমী রাজ্যগুলিতেও তার ওজন আপ-এর মতো নবাগত দলের প্রতাপে নিম্নগামী।

এই ধারাবাহিক অধঃপতন রোধ করে কংগ্রেসকে আবার যথার্থ প্রতিযোগিতায় ফিরিয়ে আনাই নতুন সভাপতি এবং তাঁর পাশে বা পিছনে থাকা নায়কনায়িকাদের প্রকৃত সমস্যা। গুজরাত এবং হিমাচল প্রদেশের অদূরবর্তী নির্বাচনে তাঁর প্রথম পরীক্ষা, কিন্তু সেই পরীক্ষায় সাফল্য বা ব্যর্থতা কোনওটাই দলের দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যতের যথেষ্ট পরিচয় দিতে পারবে না। কংগ্রেসের প্রকৃত পরীক্ষা একটি বা দু’টি রাজ্য নয়, সর্বভারতীয় স্তরে। সেই পরীক্ষা কেবল দলের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ ভারতীয় গণতন্ত্রের পক্ষেও। তার কারণ, দেশের রাজনীতিতে কংগ্রেসের প্রয়োজন আছে। বহুত্ববাদী গণতন্ত্রের স্বার্থে প্রয়োজন আছে। বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবারের সঙ্কীর্ণ ও আধিপত্যবাদী সংখ্যাগুরুতন্ত্রের বিপ্রতীপ মঞ্চ গড়ে তুলতে বিভিন্ন আঞ্চলিক ও গোষ্ঠী-ভিত্তিক দলের ভূমিকা যেমন অনস্বীকার্য, সেই বহুদলধারী মঞ্চে যোগসূত্র হিসাবে কংগ্রেসের প্রয়োজনও তেমনই অস্বীকার করা চলে না। কিন্তু সেই প্রয়োজন মেটানোর জন্য প্রয়োজনীয় মর্যাদা ও সামর্থ্য জোগাড় করবার দায় কংগ্রেসেরই, আজ আর আঞ্চলিক শক্তিগুলির কাছে তার কোনও ‘স্বাভাবিক’ নেতৃত্বের মর্যাদা নেই, স্বীকৃতিও নেই। হাই কমান্ড যদি মল্লিকার্জুন খড়্গেকে সেই মর্যাদা ফিরে পাওয়ার কাজটি যথাযথ ভাবে সম্পাদনের সুযোগ ও স্বাধীনতা দিতে পারেন, দলের পুনরুজ্জীবনের একটি সম্ভাবনা অবশ্যই থাকবে। কিন্তু তা নিয়ে আশাবাদী হওয়ার অবকাশ এই মুহূর্তে নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Congress Mallikarjun Kharge
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE