Advertisement
E-Paper

গুরুতর

তৃণমূল কংগ্রেসের বিরোধীরা অবশ্যই বলবেন, পশ্চিমবঙ্গে সিবিআই-ইডির সাম্প্রতিক তৎপরতা কেন্দ্রীয় শাসকদের রাজনীতির কারণে নয়।

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৫:৩৬
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

কেন্দ্রীয় সরকার তাদের তদন্ত সংস্থাগুলিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য অপব্যবহার করছে, এই মর্মে রাজ্যের শাসক দল বিধানসভায় প্রস্তাব আনলে তাকে গুরুতর ব্যাপার বলে মানতেই হয়। তৃণমূল কংগ্রেসের বিরোধীরা অবশ্যই বলবেন, পশ্চিমবঙ্গে সিবিআই-ইডির সাম্প্রতিক তৎপরতা কেন্দ্রীয় শাসকদের রাজনীতির কারণে নয়, রাজ্যের শাসক ও সংশ্লিষ্ট ক্ষমতাবানদের বিপুল দুর্নীতিই গোয়েন্দা সংস্থাগুলিকে তৎপর হতে বাধ্য করেছে। আবার তার বিপরীত যুক্তিও সুপরিচিত— কেন্দ্রীয় শাসক দল বা তার মিত্রপক্ষের কারও দুর্নীতির তদন্তে সিবিআই-ইডিকে সচল হতে দেখা যায় না, এমনকি প্রতিপক্ষ থেকে তাদের শিবিরে যোগ দিয়েও অনেকে রাতারাতি রেহাই পেয়ে গিয়েছেন, এটাই কি কেন্দ্রীয় সংস্থার রাজনৈতিক অপব্যবহারের প্রমাণ নয়? কোনও তরফের বক্তব্যই উড়িয়ে দেওয়ার নয়। কিন্তু রাজ্য বিধানসভায় কার্যত কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর প্রস্তাব আনা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনতন্ত্রের প্রেক্ষাপটে এর তাৎপর্য অনস্বীকার্য।

ঠিক সেই কারণেই বিধানসভায় এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখনিঃসৃত একটি কথা যুগপৎ কৌতূহল এবং বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। তিনি নাকি বিশ্বাস করেন না যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাগুলিকে দিয়ে এই সব ‘অন্যায়’ করাচ্ছেন, তাঁর মতে এই কুকীর্তি ‘বিজেপি নেতা’দের (একাংশের) কাজ, এবং এর জন্য দায়ী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। প্রশ্ন উঠেছে, মুখ্যমন্ত্রীর নিশানার তালিকা থেকে প্রধানমন্ত্রী রেহাই পেলেন কেন? বস্তুত, তিনি যদি রাজ্যের বিজেপি নেতাদের এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তথা তার কর্ণধার অমিত শাহের বিরুদ্ধে তোপ দেগেই ক্ষান্ত হতেন, প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে নীরব থাকতেন, সেই নীরবতাও হয়তো আলোচনা এবং জল্পনার বিষয় হয়ে উঠত। কিন্তু তিনি নীরবতার আশ্রয় নেননি, এক পা এগিয়ে গিয়ে সরাসরি নরেন্দ্র মোদীকে দরাজ শংসাপত্র দিয়েছেন! তাঁর দলীয় সহকর্মীরাও হয়তো এই মন্তব্য শুনে কিঞ্চিৎ বিমূঢ় বোধ করছেন। তাঁদের কারও কারও প্রতিক্রিয়ায় তেমন বিমূঢ়তার অভিজ্ঞান মিলেছে— দলনেত্রীর কথার মানে বোঝানোর দায় তাঁরা দলনেত্রীর উপরেই ছেড়ে দিয়েছেন। নেত্রী সেই দায় স্বীকার করবেন, এমন ভরসা অবশ্য তাঁদেরও আছে বলে প্রত্যয় হয় না।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিন্দকরা প্রত্যাশিত তৎপরতায় মন্তব্য করেছেন যে, এক দিকে তদন্তের ঘনঘটায় এবং অন্য দিকে পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধিতার উত্তাপ বৃদ্ধিতে শঙ্কিত হয়ে তিনি এখন প্রধানমন্ত্রীকে খুশি করতে চান, তাই তাঁর কণ্ঠে এমন ‘মোদী ভাল, শাহ মন্দ’ সুর। এই ব্যাখ্যার প্রেক্ষাপটটি সুবিদিত— অতীতে কেন্দ্রীয় সরকার ও শাসক দলের বিভিন্ন পদক্ষেপের, বিশেষত তদন্ত সংস্থার ‘অতিসক্রিয়তা’র প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বারংবার সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করেছেন এবং তাঁর সম্পর্কে তীব্র ও কটু মন্তব্য করেছেন। তার সবটাই নিছক নির্বাচনী প্রচারের ‘স্বাভাবিক’ উত্তাপ ছিল না। আজ সহসা এই ভিন্ন সুর কেন? বিরোধীদের ব্যাখ্যা যা-ই হোক, প্রশ্নটি থেকেই যায়, বিশেষত যখন বিধানসভার গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার অঙ্গ হিসাবে মোদী সম্পর্কে এই ‘ইতিবাচক’ মন্তব্যটি নথিভুক্ত হয়ে থাকল। সর্বভারতীয় রাজনীতিতে এর প্রভাব পড়লেও অবাক হওয়ার কারণ নেই। বিজেপি-বিরোধী সংহতি বা সমন্বয়ের কথা সেই পরিসরে ক্রমশই দানা বাঁধছে। রাহুল গান্ধীর পদযাত্রা, নীতীশ কুমারের নতুন পর্ব, অরবিন্দ কেজরীওয়ালের গতি ও প্রকৃতি ইত্যাদি বিভিন্ন উপকরণের সমাবেশে বিরোধী রাজনীতির চালচিত্র জটিল থেকে জটিলতর। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়— সচেতন ভাবে হোক বা না হোক, সেই জটিলতায় নতুন মাত্রা যোগ করলেন।

Mamata Banerjee West bengal Assembly ED CBI
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy