চলতি বছরের মার্চে ভারতে খুচরো পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়ায় ৩.৩৪ শতাংশে, যা গত ছ’বছরে সর্বনিম্ন। গত ফেব্রুয়ারিতেই এই হার ছিল ৩.৬১ শতাংশ। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যান এবং প্রকল্প রূপায়ণ মন্ত্রক এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ২০১৯ সালের অগস্টের পরে এ বছরের অগস্টে খুচরো পণ্যের মূল্যস্ফীতি সবচেয়ে কম হয়েছে। মূলত আনাজ, ডিম, মাছ, মাংস, খাদ্যশস্যের দামে ধারাবাহিক ভাবে পতনের জেরে দেশের খুচরো পণ্যের মূল্যস্ফীতির চাপ কমতে দেখা গিয়েছে। ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির কারণে এক দীর্ঘ সময় ধরে উদ্বেগের মধ্যে কাটাচ্ছিলেন সাধারণ মানুষ। অবশেষে এ বছরের তৃতীয় মাসে এসে খানিক স্বস্তি মিলল। এ দিকে, মার্চে দেশের খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ২.৬৯ শতাংশ, যা ফেব্রুয়ারির (৩.৭৫ শতাংশ) তুলনায় ছিল কম। বস্তুত, ২০২১ সালের নভেম্বরের পরে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি এই প্রথম এতটা কমল। লক্ষণীয়, গত বছরের মার্চে এই হারই ছিল ৮.২৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি হ্রাসের জন্য এপ্রিলেই ভারতের রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক রেপো রেট ০.২৫ শতাংশ কমিয়েছে। আরবিআই-এর পূর্বাভাস, চলতি বছরে দেশের মূল্যস্ফীতি ৪ শতাংশে থাকবে। অন্য দিকে, চলতি বছরের মার্চে আনাজ, আলু এবং অন্য খাদ্যপণ্যের পাইকারি দাম কমার ফলে দেশে পাইকারি মূল্যস্ফীতি ছিল ২.০৫ শতাংশ, যা গত ছ’মাসে সর্বনিম্ন।
গত বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ঘটে একাধিক কারণে। প্রথমত, পেঁয়াজ, আলুর ও টমেটোর মতো কিছু পণ্যের দাম উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির ফলে বাড়ে মূল্যস্ফীতির হার। পাশাপাশি, ভোজ্য তেল এবং পানীয়ের মতো উৎপাদিত খাদ্যপণ্যের উচ্চ মূল্যও ঊর্ধ্বমুখী করে খাদ্যের দাম। তা ছাড়া, ভারতের উৎপাদন কম হওয়ার সম্ভাবনা এবং ব্রাজ়িলে ফসলের উপরে প্রতিকূল আবহাওয়ার প্রভাবের জেরে বিশ্বব্যাপী সরবরাহে টানও এই বৃদ্ধির অন্যতম কারণ ছিল। তুলনায় এ বছর খাদ্যদ্রব্যের দামের এই সহনশীলতা আংশিক ভাবে কৃষি উৎপাদনের উন্নতির কারণে ঘটেছে। তার ফলে খাদ্যদ্রব্য, বিশেষ করে আনাজপাতি ও ডালের সরবরাহ স্থিতিশীল হয়েছে, যা কমিয়েছে মূল্যস্ফীতির চাপ। তা ছাড়া, এ বছর গড় হারের তুলনায় বেশি বর্ষার সরকারি প্রত্যাশা রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের মুদ্রানীতি শিথিল করার সঙ্গে মিলিত হয়ে খাদ্য এবং সামগ্রিক খুচরো মূল্যস্ফীতি হ্রাসে সাহায্য করেছে। অন্য দিকে, ২৫ বেসিস পয়েন্ট করে এ বছর আরবিআই-এর টানা দু’বার রেপো রেট হ্রাস, মূল্যস্ফীতির চেয়ে বৃদ্ধির প্রতি অগ্রাধিকারেরই ইঙ্গিত।
আপাতত পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হলেও, বাজারে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির আশঙ্কা কিন্তু আছেই। এর অন্যতম কারণ, আমেরিকার সাম্প্রতিক শুল্কনীতির জেরে বিশ্ববাজারে পণ্য সরবরাহের অনিশ্চয়তা। তা ছাড়া, অকালবৃষ্টি বা খরার মতো অপ্রত্যাশিত আবহাওয়াও ব্যাহত করতে পারে খাদ্য সরবরাহ। এতে খাবারের দাম যেমন বাড়বে, তেমনই প্রভাবিত হবে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির হারও। অন্য দিকে, তেল ও ধাতু-সহ বিশ্বব্যাপী পণ্যের দামের ওঠাপড়া অভ্যন্তরীণ দামের বৃদ্ধি ঘটাতে পারে। আরবিআই অনুযায়ী, মূল মূল্যস্ফীতি, যার মধ্যে বাদ দেওয়া হয়েছে খাদ্য ও জ্বালানির মতো পণ্য, এ-যাবৎ চড়ে রয়েছে ৪.১ শতাংশে। অতএব, খাদ্যপণ্যের দাম কমলেই সব সমস্যা মিটছে না।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)