Advertisement
E-Paper

মূর্তিকীর্তন

সর্দার বল্লভভাই পটেল গুজরাতের বডোদরায় কেবল সুউচ্চ মূর্তিই লাভ করিতেছেন না, তাঁহার নামে নাকি আরও কিছু নূতন নির্মাণ হইতে চলিয়াছে। নির্মীয়মাণের তালিকায় তিন-তারা হোটেল, জাদুঘরের সঙ্গে একটি আধুনিক গবেষণাকেন্দ্রও রহিয়াছে।

শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৮ ০১:২৫
গুজরাতে সর্দার পটেলের ‘বিশাল’ মূর্তি উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: রয়টার্স।

গুজরাতে সর্দার পটেলের ‘বিশাল’ মূর্তি উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: রয়টার্স।

সর্দার বল্লভভাই পটেল গুজরাতের বডোদরায় কেবল সুউচ্চ মূর্তিই লাভ করিতেছেন না, তাঁহার নামে নাকি আরও কিছু নূতন নির্মাণ হইতে চলিয়াছে। নির্মীয়মাণের তালিকায় তিন-তারা হোটেল, জাদুঘরের সঙ্গে একটি আধুনিক গবেষণাকেন্দ্রও রহিয়াছে। এই গবেষণাকেন্দ্র নাকি সর্দারের প্রধান দুই আগ্রহ-স্থল, সুশাসনব্যবস্থা এবং কৃষি-উন্নয়নের উপর মনঃসংযোগ করিবে। সংবাদটি শুনিয়া সামান্য ভাবিত হইতে হয়। সুশাসন ও কৃষিব্যবস্থার উন্নতির প্রতি মনোযোগ যে সর্দার পটেলের ঐতিহ্য বলিয়া স্বীকৃত, কৃষি-উন্নয়নকে যিনি সুশাসনের জরুরি অগ্রাধিকার বলিয়া মনে করিতেন, প্রায় তিন হাজার কোটির মূর্তিটি দেখিয়া তিনি কী ভাবিতে পারিতেন? অবশ্য মানিতেই হয় যে, নিন্দুকদের সহিত গলা মিলাইয়া ‘যে দেশে এত দারিদ্র...’ বলিয়া কাঁদুনির মধ্যে কিঞ্চিৎ তঞ্চকতা আছে, কারণ এমন ‘অপচয়’ মোদীর রাজত্বে প্রথম হইল না। কিন্তু এই মূর্তির ব্যয়বাহুল্য যে অতুলনীয় উচ্চতায় উঠিয়াছে এবং ইহার নির্মাণ উপলক্ষে বিলাসী গরিমা প্রদর্শনের রাষ্ট্রীয় আবেগ যে মাত্রায় পৌঁছাইয়াছে, তাহাকে অভূতপূর্ব বলিলে অত্যুক্তি হয় না। বিশেষত, প্রয়োজনের অগ্রাধিকার এবং ব্যয়ের মধ্যে যদি একটি সমীকরণ ভাবা যায়, মূর্তিটির অচিন্ত্যপূর্ব মূল্য মাত্রাটি সে ক্ষেত্রে ভাবাইয়া তোলে বইকি। সর্দার পটেলের সুশাসক হিসাবে সুখ্যাতি ছিল। কিন্তু তাঁহার অপেক্ষা

দক্ষতায় ন্যূন শাসকও জানেন যে, শাসনকার্য পরিচালনার প্রথম শর্ত যথার্থ অগ্রাধিকার স্থির করিবার বিচক্ষণতা। সেই মাপকাঠিতে বিচার করিলে মূর্তিনির্মাতাদের সুশাসক বলিবার কোনও উপায় নাই।

যে রাষ্ট্রীয় শিল্প বা বাণিজ্য সংস্থাগুলি এই প্রকল্পের জন্য অর্থসহায়তা দিতে বাধ্য হইয়াছে, এই প্রেক্ষিতেই তাহাদের কথা আসে। ওএনজিসি, আইওসিএল, বিপিসিএল-এর মতো কেন্দ্রীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন সংস্থাগুলির নিকট অর্থসাহায্য চাওয়া হইয়াছিল সর্দার পটেলের জন্য নামাঙ্কিত ট্রাস্টটির দিক হইতে। স্পষ্টত বলিয়া দেওয়া হইয়াছিল, তাহাদের কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি বা সিএসআর অর্থভাণ্ডার হইতেই যেন সেই অর্থ প্রদান করা হয়। প্রশ্নটি এই সামাজিক দায়ের ভাণ্ডার ঘিরিয়াই। সামাজিক দায়বোধের সামনে দাঁড়াইয়া অগ্রাধিকার নিশ্চিত করাটাই তো প্রধান কাজ! বিশালাকার মূর্তি নির্মাণই সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক দায় হইল? তাহার আগে অন্য কিছুই ছিল না? সংস্থাগুলির উপরে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণের রূপটি লইয়াও প্রশ্ন ওঠে। কোন সরকারি সংস্থা কী ভাবে তাহার সামাজিক দায় পালন করিবে, কেন্দ্রীয় সরকারের অঙ্গুলিহেলনই তাহা স্থির করিবে? সত্য, এই হস্তক্ষেপই এই দেশের আবহমান ঐতিহ্য। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী তো নির্বাচনের বাজারে নূতন ঐতিহ্য সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি দিয়াছিলেন! ‘মিনিমাম গভর্নমেন্ট’ও জুমলামাত্র?

ব্রিটেনের সমালোচনাটি এই প্রসঙ্গে স্মরণীয়। সত্য, কোনও সার্বভৌম রাষ্ট্রকে অর্থসহায়তা দান করিবার পর সেই রাষ্ট্র কী ভাবে তাহা ব্যয় করিতেছে, তাহার তত্ত্বাবধান আন্তর্জাতিক বিধিসম্মত নহে। তবু কোন দেশকে কতখানি সহায়তা দেওয়া হইবে, সে বিষয়ে একটি রাষ্ট্রের নিজস্ব বিবেচনা থাকা সঙ্গত। সে ক্ষেত্রে প্রদাতা দেশের নাগরিকদের কাছে ওই রাষ্ট্রের একটি দায়বদ্ধতাও থাকিবার কথা। অর্থাৎ, এইটুকু বলা চলে যে, ভারত সরকার মূর্তি নির্মাণ করিলে ব্রিটেন কিছুই বলিতে পারে না, কিন্তু ব্রিটেন সেই ভারতকে নিজের প্রদেয় সহায়তার মূল্যটি পুনর্বিবেচনা করিলেও ভারত সরকারের কিছু বলিবার থাকে না। ভারত যদি আন্তর্জাতিক দানগ্রহণের অপেক্ষা মূর্তিগরিমার প্রদর্শনকে অধিক বাঞ্ছনীয় বলিয়া মনে করে, তাহাতে বিশ্বপৃথিবীর কিছুই বলার নাই! প্রশ্নটি, এক অর্থে আবারও, অগ্রাধিকারের।

Patel Statue Narmada Tribals Statue of Unity
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy