Advertisement
E-Paper

দেশকে কোন পথে নিয়ে যেতে চাইছেন এঁরা!

মশানজোড় বাঁধকে কেন্দ্র করে একই দেশের দু’টি অঙ্গরাজ্য যে রকম প্রকাশ্য বিসম্বাদে জড়াল, তা হাস্যকর তো বটেই।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৮ ০০:০৬
মশানজোড় বাঁধে এই সাদা-নীল রং করা নিয়েই হুমকি। নিজস্ব চিত্র

মশানজোড় বাঁধে এই সাদা-নীল রং করা নিয়েই হুমকি। নিজস্ব চিত্র

অত্যন্ত হাস্যকর হয়ে উঠছে বিষয়টা। তবে শুধু হাস্যকর বলে থেমে গেলে কিছুই বলা হয় না। দায়বদ্ধতা বা কাণ্ডজ্ঞানের অভাব যেন মহামারীর মতো ছড়িয়েছে। রাজনীতি বা রাষ্ট্রচালনার প্রকৃত ধারণাটিতে যে গাম্ভীর্য, গুরুত্ব এবং ভার রয়েছে, সে সম্পর্কে ক’জন রাজনীতিক আজকাল সচেতন, বোঝা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মশানজোড় বাঁধকে কেন্দ্র করে একই দেশের দু’টি অঙ্গরাজ্য যে রকম প্রকাশ্য বিসম্বাদে জড়াল, তা হাস্যকর তো বটেই। সমপরিমাণে দুর্ভাগ্যজনকও।

মশানজোড় বাঁধ ঝাড়খণ্ডের সীমানার মধ্যে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে হওয়া চুক্তির ভিত্তিতে ওই বাঁধের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পশ্চিমবঙ্গ সরকারের। সঙ্ঘাতের উদ্ভব ঘটে গেল সেখান থেকেই।

কী নিয়ে সঙ্ঘাত? বাঁধের রং কী হবে, তা নিয়ে। এত দিন বাঁধের রং লাল-সাদা ছিল। এ বার নতুন করে রং হচ্ছে এবং লাল-সাদার বদলে নীল-সাদা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: বাঁধের দিকে তাকালে ‘চোখ তুলে নেওয়ার’ হুমকি ঝাড়খণ্ড-মন্ত্রীর

এতেই বেজায় ক্ষুব্ধ ঝাড়খণ্ডের শাসক দল। যে এলাকায় বাঁধ, সেখানকার বিধায়ক আবার ঝাড়খণ্ড সরকারের মন্ত্রী। তাঁর ‘সাফ কথা’— নীল-সাদা পশ্চিমবঙ্গের সরকারি রং হিসেবে পরিচিত। ঝাড়খণ্ডের ভূখণ্ডে ওই রং লাগানো চলবে না। এতেই থামছেন না তিনি, বাঁধের দিকে তাকালে চোখ তুলে নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিচ্ছেন।

বাংলা আবার নিজের মতো করে যুক্তি সাজাচ্ছে। সেচ মন্ত্রীর যুক্তি— বাংলার সর্বত্রই যে কোনও সরকারি স্থাপনায় নীল-সাদা রং লাগছে। সুতরাং বাংলার তত্ত্বাবধানে থাকা বাঁধেও সেই রঙই লাগবে। তাতেই শেষ নয়। বাংলার শাসক দলের আর এক দাপুটে নেতা বলছেন,প্রতিবেশী রাজ্যের মন্ত্রীদের বুদ্ধিসুদ্ধি কম।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

পাশপাশি বসবাস করা দুই শরিকের মধ্যে জমি নিয়ে যখন বিবাদ হয়, তখন যে স্তরে পৌঁছয় খেউড়, বাঁধের রং নিয়ে বাংলা আর ঝাড়খণ্ডের প্রকাশ্য কলহ প্রায় সেই স্তরেরই। দুই গোঁয়ার এবং অবুঝ শরিক নিজেদের মধ্যে মারামারি করছে, নাকি দু’টি রাজ্যের প্রশাসনের মধ্যে কথোপকথন চলছে, আলাপচারিতার ধরন দেখে তা বোঝা দুষ্কর হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

আইন আছে, সংবিধান আছে, সুনির্দিষ্ট প্রশাসনিক কাঠামো আছে, দুই রাজ্যেই দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ রয়েছেন, যোগাযোগ ও আলোচনার নির্দিষ্ট পথ রয়েছে| কিন্তু সে সব কিছুই কাজে এল না| কাজে লাগানোর কথা কেউ ভাবলেনও না| একটা বাঁধের রং কী হবে, তা নিয়ে আচমকাই প্রকাশ্য এবং কুরুচিকর বাক্য বিনিময় শুরু হয়ে গেল একই দেশের দুটো অঙ্গরাজ্যের মধ্যে| দেশে কি সমস্যার ঘাটতি হল নাকি? না হলে নিতান্ত অকিঞ্চিৎকর একটা ঘটনাকে নিয়ে এত বড় বিবাদ উপস্থিত হচ্ছে কী ভাবে? বিস্ময়ের সীমা থাকে না|

আজও না খেয়ে মৃত্যু হয় নাগরিকের, আজও কোটি কোটি কর্মপ্রাথীর কাজ জোটে না, আজও নারীর উপর নির্যাতন রোখা যায় না, আজও কুসংস্কার প্রাণ নেয় প্রান্তে প্রান্তে, আজও ধর্মের নামে রক্তারক্তি হয়ে যায়, আজও দেশের সীমান্তকে সন্ত্রাসবাদীদের জন্য দুর্ভেদ্য করে তোলা যায় না, আজও গোটা শাসন কাঠামোটার রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি বাসা বেঁধে থাকে| সে সব সমস্যা নিয়ে কোনও রাজনীতিককেই খুব রেগে যেতে দেখা যায় না| কিন্তু একটা বাঁধের রং কী হবে, তা নিয়ে তুমুল লড়াই লেগে যায়| ন্যূনতম লজ্জা থাকলে এ রকম করা যায় না | দেশকে কোন পথে নিয়ে যেতে চাইছেন এঁরা! বিস্ময় নিয়ে ভাবতে হয়, ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা হয়|

Massanjore Dam Jharkhand Newsletter Anjan Bandyopadhyay অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় মশানজোড় ঝাড়খণ্ড
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy