Advertisement
E-Paper

আলোকশিখা

ঐতিহ্যগত ভাবেই চার্চ এমন একটি প্রতিষ্ঠান যাহা সাধারণ মানুষকে পাপক্ষালনের সুযোগ দেয় পাপের স্বীকারোক্তি শুনিবার মাধ্যমে। এ বারের বৈঠকটির হেতু ও লক্ষ্য তাই চার্চের কার্যক্রমের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ।

শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:০০
শিশুদের উপর যৌন নির্যাতন মূলক শীর্ষবৈঠকে পোপ ফ্রান্সিস।—ছবি এএফপি।

শিশুদের উপর যৌন নির্যাতন মূলক শীর্ষবৈঠকে পোপ ফ্রান্সিস।—ছবি এএফপি।

কিছু কিছু কাজ কী ভাবে হইতেছে, তাহার হইতে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ তাহা যে হইতেছে, এইটুকুই। ঠিক এই কারণেই ভ্যাটিকান সিটিতে বৃহস্পতিবার সকালে যে ‘সামিট’ বা শীর্ষবৈঠকটি শুরু হইল, তাহা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সংবাদ। বিশ্বের নানা প্রান্তে নানা দেশের বহু চার্চ হইতে ডাকিয়া আনা হইয়াছে ফাদারদের। সকলে একত্র বসিয়া আলোচনা করিবেন চার্চের বিরুদ্ধে উঠিয়া আসা একটি অভিযোগ বিষয়ে: শিশুদের উপর যৌন নির্যাতন। এই ঐতিহাসিক বৈঠকটির কৃতিত্ব দাবি করিতে পারেন পোপ ফ্রান্সিস। কৃতিত্ব— এমন একটি সংবেদনশীল বিষয়ে বৈঠক আহ্বান করিবার সাহসের জন্য। কৃতিত্ব— ‘হিয়ার দ্য ক্রাই অব দ্য লিটল ওয়ানস’ নামের ধ্বনিটিকে বৈঠকের প্রধান স্বর করিয়া তুলিবার জন্য। যদি এই বৈঠকের কোনও সুদূর ফলাফল না-ও ফলে, তবু এত গুরুতর ও অতি-অবহেলিত বিষয়ে কাজ আরম্ভ করিবার মুহূর্ত হিসাবেই পোপ ফ্রান্সিসের প্রয়াসটি স্মরণীয় হইয়া থাকিবে।

ঐতিহ্যগত ভাবেই চার্চ এমন একটি প্রতিষ্ঠান যাহা সাধারণ মানুষকে পাপক্ষালনের সুযোগ দেয় পাপের স্বীকারোক্তি শুনিবার মাধ্যমে। এ বারের বৈঠকটির হেতু ও লক্ষ্য তাই চার্চের কার্যক্রমের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ। পোপ ব্যাখ্যা করিয়াছেন যে, সমস্ত খ্রিস্টীয় যাজকদের কাছে তিনি প্রত্যাশা করেন— নিজেদের দোষ-দুর্বলতার স্বীকারোক্তি, এবং অন্যদের স্বীকারোক্তি গ্রহণ করিবার উদারতা। বাস্তবিক, আত্মসংস্কারের প্রথম ধাপটিই স্বীকারোক্তি, এবং পরবর্তী ধাপটি, সংস্কার। কোনও শাস্তিবিধানের মধ্য দিয়া না গিয়া সংস্কারের মাধ্যমে অভিযুক্তের সংশোধন— আদর্শ হিসাবে গ্রহণযোগ্য। প্রসঙ্গত অনেকে মনে করেন যে শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনের বিষয়টি নেহাত পাশ্চাত্য প্রবণতা। যুক্তিটি তাই অর্থহীন। পশ্চিম-পূর্ব দিয়া, কিংবা সভ্যতার উন্নতির প্রচলিত মাত্রা দিয়া শিশুনির্যাতনের মতো বিষয়ের বিবেচনা চলে না। পোপ যে এই বিশ্বাসটিকে গ্রহণ করেননি, বৈঠকের মূল ভাবনাটিই তাহা বলিয়া দেয়। বলিয়া দেয় যে সকল দেশে সকল প্রকারের সভ্যতার অন্দরেই অপরাধ কর্মসূচি একই গতিতে চলিতে পারে, তাহা আটকাইবার ইচ্ছার উপরই নির্ভর করে সভ্যতার প্রকৃতি।

চার্চ যাহা করিতে পারে, স্টেট তাহার বেশি করিতে পারে, এমন একটি দাবি উঠিয়াছিল প্রাক-আধুনিক ইতিহাসে— ইউরোপীয় ইতিহাসের পড়ুয়ারা জানেন। আজ উত্তর-আধুনিক বিশ্বে ইহার আর একটি পরীক্ষা হইতে পারে। বহু দেশের সমাজে প্রায়-প্রকাশ্য ভাবে শিশু নির্যাতন ও শিশু পাচারের যে ‘সমৃদ্ধ’ ধারা, তাহা আটকাইবার জন্য রাষ্ট্রীয় কর্তারা আজও তেমন উদ্যোগী নহেন। ভারতের দৃষ্টান্ত দিলেই দুর্বলতাটি সহজে পরিস্ফুট হইবে। এ দেশে একটি শিশু পাচার প্রতিষ্ঠানের খোঁজ মিলিবার পরও প্রধান রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা তাহার তদন্তে নানা প্রকার ঢিলা দিতে পারে, অপরাধীকে ধরিবার জন্য উদ্যোগ না দেখাইতে পারে। এই অন্যায়ের প্রতিকারে সক্রিয় হইতে হয় সর্বোচ্চ বিচারালয়কে। এই সামান্য তথ্য হইতে সামান্যতর যে সত্যের ইশারা পান আমজনতা, তাহা হইল, এমনকি রাষ্ট্রের উচ্চতম মহলও কদর্যতম অত্যাচারের প্রতিকারে যথেষ্ট কঠোর হইবার প্রয়োজন বোধ করে না। পোপের কথাটি আলোকশিখার মতো জ্বলুক, ইহাই এখন কাম্য। অসহায় নির্যাতিত শিশুর ক্রন্দন যেন সকলের হৃদয়ে গিয়া পৌঁছায়।

Pope Francis Vatican City Summit Child Abuse
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy