পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট কোদালকে কোদাল বলিয়াছে। হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টরের সরকারকে আদালতের তীব্র ভর্ৎসনা: ডেরা সচ্চা সৌদা ঘটিত তাণ্ডবের মোকাবিলায় তাহারা রাজনৈতিক (ক্ষুদ্রস্বার্থের নিকট) আত্মসমর্পণ করিয়াছে। কথাটি যে এক শত শতাংশ সত্য, নিতান্ত চক্ষুলজ্জা থাকিলে কেহ তাহা অস্বীকার করিবে না। কিন্তু চক্ষুলজ্জা থাকিলে বোধ করি স্বচ্ছ ভারতে রাজনীতি করা অসম্ভব, অতএব বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সুচিন্তিত রায়: পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলিয়া গিয়াছিল, খট্টর তাহা ভালই সামলাইয়াছেন। ধর্ষকের পুণ্যভূমিতে ভয়াবহ ধ্বংসলীলা সুসম্পন্ন, ত্রিশের বেশি প্রাণ বিনষ্ট, তাহার পরেও মুখ্যমন্ত্রী ‘ভালই সমলাইয়াছেন’— দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের জাহানারার কণ্ঠে নির্ঘাত শোনা যাইত: আবার বলি, চমৎকার! পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণের বাহিরে পৌঁছাইতে দেওয়া হইল কেন, হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রীকে সেই প্রশ্ন করিয়া লাভ নাই, তিনি নিশ্চয় দলের কথা ভাবিতেছিলেন— দুষ্ট লোকে বলে, ‘লাভ চার্জার’ ধর্ষক বাবা ও তাঁহার ভক্তবৃন্দ বিজেপির বড় সম্পদ, রাজধর্ম পালন করিতে গিয়া সেই সম্পদ খোয়াইলে দলই বা কী বলিবে, মোদীজিই বা কী বলিবেন! সুতরাং রাম রহিমের হাজার হাজার অনুগামী ১৪৪ ধারা ইত্যাদিকে ফুৎকারে উড়াইয়া জমায়েত হইয়াছে, রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে জমা বারুদ ফাটিয়াছে, তাহাতে বাবাজির ইন্ধন ছিল বলিয়াও অভিযোগ প্রবল। রাজ্য সরকারকে হাইকোর্টের বিচারপতিদের, আবারও, সাফ কথা: আপনারাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাহিরে যাইতে দিয়াছেন।
বিচারপতিরা রাজধর্ম শব্দটি উচ্চারণ করে নাই। ভালই করিয়াছেন— জীর্ণ শব্দ পরিহার করাই বিচক্ষণতার পরিচায়ক। শব্দটি বহুব্যবহারে জীর্ণ হইয়াছে, লঙ্ঘনে জীর্ণতর। ২০০২ সালে প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে রাজধর্ম পালনের পরামর্শ দিয়াছিলেন। ফলাফল সর্বজনবিদিত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শ্রীযুক্ত খট্টরকে রাজধর্ম পালনের আশ্বাস দিয়াছেন বলিয়া শোনা যায় নাই। লোকমুখে প্রচারিত হইয়াছিল যে, তিনি নাকি পরম সুহৃৎ মনোহরলালজির উপর ক্ষুব্ধ। কিন্তু অন্তত এখনও অবধি সেই ক্ষোভ প্রধানমন্ত্রীর শ্রীমুখে বাণীরূপ পরিগ্রহ করে নাই, তাঁহার উচ্চারণে কেবল শোনা গিয়াছে: এই হিংসা মানিয়া লওয়া যায় না। ভক্তরা নিশ্চয়ই মুগ্ধ— এ কী গভীর বাণী! হরিয়ানার তখ্তে খট্টর বহাল তবিয়তে সমাসীন মনোহরলাল খট্টরও একবাক্যে প্রতিধ্বনি তুলিবেন: এই হিংসা মানিয়া লওয়া যায় না। পোস্ট-ট্রুথ কাহাকে বলে, জানিতে গুগল করিবার কোনও প্রয়োজন নাই।
রাম রহিমের মতো একটি পদার্থের প্রতি লক্ষ লক্ষ মানুষ কেন নিবেদিতপ্রাণ, তাহার আলোচনা অন্যত্র। কিন্তু জনতার বিশ্বাস কী বলিতেছে, প্রশাসনের তাহা ধর্তব্য হইতে পারে না। নচেৎ আদালতের দরকার হইত না, সাক্ষী মহারাজের কথাই শেষ কথা হইত। বিজেপির এই সাংসদ বলিয়াছেন: ডেরাধিপতির কোটি কোটি ভক্তের বিশ্বাস অপেক্ষা এক জন অভিযোগকারিণীর কথা বেশি দামি হইল? তিনি এমন আকাট স্পষ্টতায় কথাটি বলিয়াছেন বলিয়া হয়তো কানে লাগিতেছে, কিন্তু এই ঘটনায় যে ভাবে সমস্ত নীতি ও রীতি বিসর্জন দেওয়া হইল, তাহাতে সংশয়ের যথেষ্ট কারণ আছে যে, সাক্ষী মহারাজের মতটি শাসক শিবিরের অনেকেরই মন কি বাত। নরেন্দ্র মোদী যদি এই সংশয়কে ভুল প্রমাণ করিতে চাহেন, তবে অবিলম্বে রাজধর্ম প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করুন। তাঁহার রাজত্বে খট্টরদের উপর কোনও ভরসা নাই, যে প্রধানমন্ত্রীর বীজমন্ত্র ‘মামেকং শরণং ব্রজ’, দলীয় মুখ্যমন্ত্রীর অপরাধের দায়ও তাঁহাকে স্বীকার করিতে হইবে। শুদ্ধির দায়িত্বও। হাইকোর্টের প্রশ্নটি স্মরণীয়: হরিয়ানা কি ভারতের বাহিরে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy