Advertisement
E-Paper

গডসে ও দেশপ্রেম

অতঃপর সাধ্বী প্রজ্ঞা গডসেকে আরও এক বার দেশপ্রেমী বলিলেন

শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৯ ০১:৩৩
নাথুরাম গডসে

নাথুরাম গডসে

সেই গৈরিক প্রভাত হইতে তবে এখনও খানিক বিলম্ব আছে, যখন নাথুরাম গডসেকে দেশপ্রেমী অথবা জাতির প্রকৃত জনক বলিলেও আর কাহাকে ক্ষমাপ্রার্থনার দৃশ্যে অনিচ্ছুক অভিনয় করিতে হইবে না। এই বিলম্বের সংবাদটি চমৎকৃত করে, কারণ মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর যাবতীয় আদর্শকে আজিকার ভারত ইতিমধ্যেই ধূলিসাৎ করিয়াছে। তাঁহার নিধন সম্পূর্ণ হইয়াছে। তবুও, তাঁহাকে অপমান করিলে এখনও— বাম হস্তে হইলেও— ক্ষমাপ্রার্থনার বিল্বপত্রটি ছুড়িয়া দিতে হয়, ইহা আশ্চর্য হইবার মতো কথাই বটে। গডসের প্রতি প্রজ্ঞা সিংহ ঠাকুরের ভক্তি এই প্রথম প্রকাশ পায় নাই। মে মাসে তাঁহার প্রথম গডসে-বন্দনার পর অমিত শাহ বলিয়াছিলেন, দশ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে দল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দশ দিন এখনও পূর্ণ হয় নাই। তিনি বা তাঁহারা স্বভাবতই দীর্ঘসূত্রী, বলা মুশকিল। তেমন প্রয়োজন হইলে তাঁহারা রাজ্যপাল-রাষ্ট্রপতিকে রাত জাগাইয়া ভোর হইবার পূর্বেই সরকার গড়িয়া ফেলিতে পারেন। অর্থাৎ, বিলম্ব তাঁহাদের স্বভাবের পরিচায়ক নহে— কোন প্রশ্নটি তাঁহাদের নিকট গুরুত্বপূর্ণ, আর কোনটি নহে, বিলম্ব কেবল তাহার নির্দেশক মাত্র। তাঁহাদের নিকট গাঁধীর গুরুত্ব বাতিল হওয়া হাজার টাকার নোটের ন্যায়। নরেন্দ্র মোদী বলিয়াছিলেন, তিনি সাধ্বীকে কখনও ক্ষমা করিতে পারিবেন না। তিনিও বিস্মৃতিপ্রবণ, এমন দাবি করা চলিবে না— প্রত্যেক ক্রিয়ার সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকিবেই, ২০০২ সালে তাঁহার এই কথাটি বিলক্ষণ স্মরণে ছিল। সাধ্বীর ‘ক্রিয়া’-র প্রতিক্রিয়াতেই সম্ভবত তাঁহাকে কিছু দিন আগে প্রতিরক্ষা বিষয়ক প্যানেলের অন্তর্ভুক্ত করা হইল।

অতঃপর সাধ্বী প্রজ্ঞা গডসেকে আরও এক বার দেশপ্রেমী বলিলেন। কে জানে, মহারাষ্ট্রের ঘটনাক্রম হইতে দেশের নজর সরাইবার তাড়নাতেই কি না, এই বার তাঁহাকে সংসদে ক্ষমা চাহিতে হইল। প্রতিরক্ষা প্যানেল হইতেও তাঁহার নাম কাটা গেল। সাংসদ পদ কাড়িয়া লওয়া? লঘু পাপে এ-হেন গুরুদণ্ডের কথা কর্তারা সম্ভবত ভাবিতেই পারেন না। বস্তুত, গাঁধীর অবমাননা বা গডসে-বন্দনার মধ্যে যে কোনও অপরাধ আছে, নাগপুরের হৃদয় কি আদৌ এই কথাটি মানে? মোহন ভাগবত গাঁধীর সার্ধশতবর্ষে তাঁহাকে ‘আপনার লোক’ হিসাবে দাবি করিতে পারেন, রাজনাথ সিংহ বলিতে পারেন যে গাঁধীই তাঁহাদের আদর্শ— কিন্তু, এগুলি কথার কথা মাত্র। সঙ্ঘ পরিবারের আদর্শ গাঁধীর দর্শনের সম্পূর্ণ বিপ্রতীপ। বলা চলে, গাঁধী যাহা যাহা নহেন, সঙ্ঘ ঠিক তাহাই। গাঁধীর রামরাজ্যের সহিত সঙ্ঘের হিন্দুরাষ্ট্রের দূরত্ব যে অসেতুসম্ভব, এই কথাটি তাঁহারা বিলক্ষণ জানেন। গাঁধীর সনাতন ভারতের ধারণা, উদ্‌ভ্রান্ত আধুনিকতার বিরোধিতার সহিত সঙ্ঘের অ-মুসলমান ভারতীয়ত্বের কল্পিত অতীতের যে বিন্দুমাত্র মিল নাই, এই সত্যটিও ভাগবত-মোদীদের পক্ষে অস্বীকার করা অসম্ভব। গাঁধী যে সর্বজনীনতার পথিক, যে গ্রহণশীলতার প্রবক্তা, তাহার সহিত সঙ্ঘের খণ্ডিত ভারতীয়ত্বের আদর্শের বিরোধ অনতিক্রম্য। তাঁহারা যে হিন্দুত্বের, যে উগ্রতার সাধনায় রত, তাহা নাথুরাম গডসেরই পথ। কাজেই, সাধ্বী প্রজ্ঞাদের নিকট গডসে যে দেশপ্রেমী, রাষ্ট্রনায়ক হইবেন— তাহাতে আশ্চর্য হইবার কোনও কারণ নাই। মন যত ক্ষণ না বদলাইতেছে, তাহাতে গডসের উপাসনাই চলিবে। বরং, আশ্চর্য হইতে হয় যে এখনও গাঁধীকে অপমান করিলে বহু বিলম্বে হইলেও ক্ষমা চাহিতে হয়। সেই ক্ষমাপ্রার্থনা যদি শুধু লোক দেখাইতে হয়, তবুও। কেহ ইহাতে আশার আলো দেখিতে পারেন— গাঁধীর আদর্শ হইতে সম্পূর্ণ চ্যুত হইবার পরও যখন তাঁহাকে অবজ্ঞা করা যাইতেছে না, তবে হয়তো তাঁহার বিশ্বাসে ফিরিবারও উপায় রহিল। আবার, কেহ ভাবিতে পারেন, ধ্বংসের প্রক্রিয়া এখনও শেষ হয় নাই, এইমাত্র।

Nathuram Godse Pragya Singh Thakur bjp Patriot
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy