Advertisement
E-Paper

ঐতিহাসিক নয় সিঙ্গুরের এই রায়?

কোনও সংশয় নেই, বুধবার সুপ্রিম কোর্টের সিঙ্গুর-রায় ঐতিহাসিক হয়ে গেল। এই দেশের জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া এবং তাকে ঘিরে যাবতীয় বিবাদ-বিতর্কের রাস্তায় এই রায় মাইলস্টোন হয়ে গেল বলেই একে ঐতিহাসিক বললাম না।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৩৪
রায় শোনার পর সিঙ্গুরবাসীদের উচ্ছ্বাস। ছবি: পিটিআই।

রায় শোনার পর সিঙ্গুরবাসীদের উচ্ছ্বাস। ছবি: পিটিআই।

কোনও সংশয় নেই, বুধবার সুপ্রিম কোর্টের সিঙ্গুর-রায় ঐতিহাসিক হয়ে গেল। এই দেশের জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া এবং তাকে ঘিরে যাবতীয় বিবাদ-বিতর্কের রাস্তায় এই রায় মাইলস্টোন হয়ে গেল বলেই একে ঐতিহাসিক বললাম না। দশ বছর ধরে লড়াই করে আসা অনিচ্ছুক কৃষক পরিবারগুলো এত দিনে আইনি পথে জমি ফেরতের কথা শুনলেন, ঐতিহাসিক সে কারণেও নয়। বিপুল ক্ষমতা নিয়ে ২০০৬-এ ক্ষমতায় ফেরা এক মহিমান্বিত সরকার এবং দোর্দণ্ডপ্রতাপ শিল্পপতির যৌথ প্রয়াস রাজনৈতিক ভাবে আগেই প্রতিহত হয়েছিল, এবার আইনি পথেও একই পরিণতির কথা শোনাল সুপ্রিম কোর্ট, ঐতিহাসিক সে কারণেও নয়। আবেগের যে জমিকে ঘিরে দশ বছরের এই টানাপড়েন, পালাবদল ইত্যাদি, সেই জমি আবার ফিরবে কৃষকের কাছে বুধবারের রায়ের ফলে, এমনকী সেই কারণেও ঐতিহাসিক নয় এই রায়।

অন্যতর এক কারণে ঐতিহাসিক হয়ে গেল সিঙ্গুর-নির্দেশ। টাটাদের আমন্ত্রণ ও জমি অধিগ্রহণ হয়েছিল সিঙ্গুর তথা রাজ্যের মানুষের স্বার্থেই— প্রথম দিন থেকে অদ্যাবধি সিপিএমের বক্তব্যের মূল সুর থেকে এসেছে এটাই। এর সত্যাসত্যে সংশয়ের পথে না হেঁটেও সিঙ্গুর-রায় বুঝিয়ে দিল, জনস্বার্থেও জন অর্থাত্ মানুষের কথা শুনতে হবে, তাঁর সঙ্গে কথা বলতে হবে, তাঁর আপত্তির কারণ বুঝতে হবে, না হলে তা বৈধতার সার্টিফিকেটের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। ৫১=১০০ এবং ৪৯=০, গণতন্ত্রের এই স্ববিরোধী প্রথাও বুধবারের রায়ে ভিন্ন ভাবে যেন সামনে এসেছে। বামেদের যুক্তি ছিল, অধিকাংশ কৃষকই ইচ্ছুক, অনিচ্ছুক নিতান্তই অল্প কিছু লোক। অস্যার্থ, অধিকাংশের যদি মত থাকে কারখানার পথে, তবে অল্পের আপত্তিতে তা আটকে যাবে কেন? বুধবারের রায় স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দিল, ওই অল্পাংশের মতটিও শোনা আবশ্যক ছিল। সেটা হয়নি, অতএব অবৈধ।

আবারও দৃশ্যটা কল্পনা করা যাক। সরকারের মতো প্রবল প্রতাপান্বিত এক প্রতিষ্ঠান রতন টাটার মতো মহাপরাক্রমশালী এক শিল্পপতিকে নিয়ে আসছে সিঙ্গুরের জমিতে। প্রান্তিক, দরিদ্র এক অনিচ্ছুক কৃষক লড়ছেন তাঁদের সঙ্গে। তাঁর কথাটুকুও শুনছে না কেউ। অবৈধ হয়ে গেল প্রতিপক্ষের যাবতীয় পরিকল্পনা। এই জমি ফেরত পাওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু হয়ে গেল আরও একবার। স্বপ্নটা ছিলই, এবার যেন দেখাও যাচ্ছে তার আলো।

ঐতিহাসিক নয় সিঙ্গুরের এই রায়?

Anjan Bandyopadhyay Newsletter Singur Singur Verdict
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy