উত্তরণের পথটাকে কিছুটা সহজ করে তুলল দেশের বিচার বিভাগ। —ফাইল চিত্র।
অসঙ্গতির অবসানের দিকে আরও একটা পদক্ষেপ। এ বারও সেই বিচার বিভাগের হাত ধরেই। অযৌক্তিক সংস্কারের শৃঙ্খল থেকে এবং এক নিষ্ঠুর বৈষম্য থেকে অর্ধেক আকাশকে মুক্ত করল ভারতের সর্বোচ্চ আদালত।
শবরীমালা পাহাড়ে আয়াপ্পা স্বামীর মন্দিরে ঋতুমতী নারীর প্রবেশে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, তার অবসান ঘোষণা করেছে সুপ্রিম কোর্ট। এ দেশে স্বাধীন ভাবে ধর্মাচরণের অধিকার প্রত্যেকের রয়েছে, অধিকারের সীমা নাগরিক ভেদে বদলে যেতে পারে না। এই কথাটা আরও এক বার স্পষ্ট হয়ে গেল সুপ্রিম কোর্টের রায়ে।
সব বয়সের পুরুষের প্রবেশাধিকার রয়েছে আয়াপ্পা স্বামীর দরবারে। কিন্তু সব বয়সের নারীর জন্য দরজা খোলা ছিল না। ১০ বছর থেকে ৫০ বছর বয়সী নারী আয়াপ্পা স্বামীর চৌকাঠে ব্রাত্য ছিলেন এত দিন। কারণ কী? কারণ বয়স ১০ থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকাকালীন নারী ঋতুমতী থাকেন।
এমন অবান্তর রীতি নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক ছিল। উঠেওছে গুচ্ছ গুচ্ছ প্রশ্ন। ঋতুমতী নারী কি অপবিত্র? নাকি ঋতুস্রাব কোনও সংক্রামক ব্যাধি? একটা স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াকে এমন অস্বাভাবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার অর্থ কী? দেবালয়-প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা কোন কারণে? ১০ থেকে ৫০-এর মধ্যে নারী ঋতুমতী না হলেই কি ভাল হত তা হলে? তাতেই কি এ ধরাধামের মঙ্গল হত? মানবজাতির অস্তিত্বটা বহাল থাকত তো?
আরও পড়ুন: শবরীমালা মন্দিরে ঢুকতে পারবেন সব বয়সের মহিলারা, রায় সুপ্রিম
কিন্তু এ সব প্রশ্নের উত্তর দেবেন কে? যাঁরা এমন চূড়ান্ত অবান্তর কোনও নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রাখতে পারেন বছরের পর বছর ধরে, তাঁরা নিজেদের অবস্থানের বৈধতা প্রমাণের জন্য কোনও প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করবেন, এমনটা ভাবাই তো অনুচিত। তাই আদালতই ছিল শেষ রণাঙ্গন, সংবিধানই ছিল একমাত্র হাতিয়ার। রণাঙ্গনে যাওয়া সার্থক হয়েছে, সাংবিধানিক হাতিয়ারটারই জয় হয়েছে।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
সামাজিক বিধি-বিধানের আস্তিনে লুকিয়ে রয়েছে যে সব বিষবাষ্প এখনও, সেই সব বিষবাষ্পই এই সামাজিক অসুখগুলোকে বয়ে নিয়ে চলে। তাই রোগমুক্তির জন্য ওই বিষের নিধন দরকার সর্বাগ্রে। সুপ্রিম কোর্ট সেই দিশায় অগ্রসর হতে সাহায্য করল আরও একটা দুয়ার খুলে দিয়ে। কিন্তু আমাদের দৈনন্দিনতায় এবং পারিপার্শ্বিকতায় ছোট-বড়-মাঝারি মাপের এমন আরও অনেক দুয়ার রয়েছে। সেগুলোও একে একে খোলা দরকার। বিষবাষ্পটাকে বার করে দেওয়া দরকার। সে প্রচেষ্টায় বিবাদ আসবে, বিসম্বাদ হবে। কিন্তু সব বিবাদ-বিসম্বাদ নিয়ে হয়তো আদালতের দরজায় পৌঁছনো যাবে না। তাই দায়িত্বটা আমাদেরও নিতে হবে। আঁধার থেকে সমাজের সার্বিক উত্তরণ ঘটানোর দায়িত্ব প্রত্যেককেই নিজের নিজের মতো করে পালন করতে হবে। উত্তরণের পথটাকে কিছুটা সহজ করে তুলল দেশের বিচার বিভাগ। উপরে ওঠার জন্য সুপ্রিম কোর্ট আরও একটা সিঁড়ি দিল। কিন্তু সেই সিঁড়ি বেয়ে ওঠার কাজটা কিন্তু আমাদেরই করতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy