Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
National News

আধার আদৌ নিরাপদ তো? সংশয় আরও বাড়ল

নিজের পরিচয়ের প্রমাণ দাখিল করার জন্য কোনও সংস্থাকে বা কোনও কর্তৃপক্ষকে নিজের আধার নম্বর জানাতে যাঁরা দ্বিধান্বিত, তাঁদের জন্যই নাকি এই বন্দোবস্ত।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:৩৫
Share: Save:

কথায় আর কার্যকলাপে ফারাক হয়ে যাচ্ছে বড্ড। ফলে বিশ্বাস রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আধার প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ যা বলছেন এবং বাস্তবে যা করছেন, তাতে বিস্তর ফারাক। প্রকাশ্য এবং পরিস্ফুট দ্বিচারিতা চলছে— এমন ধারণা অত্যন্ত স্বাভাবিক ভাবেই তৈরি হচ্ছে। আর তার কারণ খুঁজতে গেলে ধরা পড়ছে আত্মবিশ্বাসের অভাব।

দ্বাদশ অঙ্কের আধার নম্বরে আর থেমে থাকতে চায় না সরকার। এ বার ষোড়শ অঙ্কের ‘বর্ম’ তৈরি হচ্ছে। নিজের পরিচয়ের প্রমাণ দাখিল করার জন্য কোনও সংস্থাকে বা কোনও কর্তৃপক্ষকে নিজের আধার নম্বর জানাতে যাঁরা দ্বিধান্বিত, তাঁদের জন্যই নাকি এই বন্দোবস্ত। আধার কার্ড রয়েছে যাঁদের, তাঁরা আধার কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে ঢুকে নিজেরাই জোগাড় করে ফেলতে পারবেন সেই ‘পরাবাস্তব’ ষোড়শ অঙ্ক। সে সংখ্যা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বাস্তব পরিচয়ের প্রমাণটুকু দিয়ে দেবে। কিন্তু বাস্তব আধার নম্বরটি গোপন থাকবে। এমনই এক বন্দোবস্তের কথা জানানো হয়েছে।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

প্রথম প্রশ্ন হল, দ্বাদশ অঙ্কের আধার নম্বরটিকে লুকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করা দরকার, এমনটা আধার কর্তৃপক্ষের মনে হল কেন? আধার নম্বরকে কাজে লাগিয়ে যে নাগরিকের নিতান্ত ব্যক্তিগত তথা গোপনীয় তথ্য হাতিয়ে নেওয়া সম্ভব, সে কথা বহু বার বহু মুখ থেকে শোনা গিয়েছে। নানা মহল থেকে, নানা শিবির থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। নাগরিক তাঁর নিতান্ত ব্যক্তিগত পরিসর সংক্রান্ত বিষয়ে যে গোপনতা বজায় রাখতে চান, আধার সেই গোপনতাকে নষ্ট করছে— এমন অভিযোগ বার বার উঠেছে। আর আধার কর্তৃপক্ষ তথা সরকার বার বার জোর গলায় বলেছেন, গোপনতার অধিকারকে কোনও ভাবে ক্ষুণ্ণ করছে না আধার, গোপন তথ্য ফাঁস হওয়ার মতো কোনও রন্ধ্র রাখছে না আধার। এই দাবি যে ভিত্তিহীন, রন্ধ্রপথ যে অনেক, গোপন তথ্য যে নানা উপায়ে ফাঁস হচ্ছে, সে সবের অকাট্য প্রমাণ তুলে ধরা হয়েছে একাধিক বার। কিন্তু সে সব প্রমাণকে স্বীকৃতি দিতে রাজি হয়নি সরকার। গোপনতার সঙ্গে আপস কী ভাবে হচ্ছে, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ায় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ধারায় অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে। এত কাণ্ডের পরে তা হলে ‘ভার্চুয়াল আইডি’-র প্রয়োজন পড়ছে কেন? আধার নম্বরকে কাজে লাগিয়ে নাগরিকের গোপন পরিসরে উঁকি দেওয়া যদি সম্ভব না-ই হবে, তা হলে আধার নম্বরকে লুকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করতে হচ্ছে কেন? নিজের দাবিতে কি নিজেই বিশ্বাস রাখতে পারছেন না আধার কর্তৃপক্ষ? যতটা জোর গলায় ‘সম্পূর্ণ সুরক্ষিত’ শব্দবন্ধটি উচ্চারণ করা হচ্ছে, সুরক্ষা বলয়ের উপরে ততটা মজবুত আস্থা কি রাখতে পারছেন না আধার কর্তৃপক্ষ?

দ্বিতীয় প্রশ্ন, দু’রকম বন্দোবস্ত কেন হবে? যাঁরা আধার নম্বর অন্যকে জানাতে চান না, তাঁরা ভার্চুয়াল নম্বর নিয়ে নিন— এ আবার কী ধরনের সংস্থান! আধারে সমন্বিত তথ্যাদি নিরাপদ, না অনিরাপদ? সরকারকে স্পষ্ট অবস্থান নিতে হবে এই প্রশ্নে। যদি নিরাপদ হয় তথ্যাদি, তা হলে আধার নম্বরকে ঘিরে কোনও বর্মের বন্দোবস্ত করার প্রয়োজন নেই। আর যদি নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় থাকে কর্তৃপক্ষের, তা হলে প্রত্যেকটি আধার নম্বরের জন্যই বর্মের ব্যবস্থা করতে হবে।

আরও পড়ুন: আবার নতুন বন্দোবস্ত, আধার নম্বরের বদলে ১৬ অঙ্কের ভার্চুয়াল নম্বর

কাঁধ থেকে দায় নামিয়ে ফেলার চেষ্টা খুব দৃষ্টিকটূ ভাবে ধরা পড়ল আধার কর্তৃপক্ষের নতুন ঘোষণায়। ‘আধার নিরাপদ’, এই বিবৃতিতে আপনি বিশ্বাস রাখুন, যদি বিশ্বাস না রাখেন, তা হলে ইউআইডিএআই ওয়েবসাইট থেকে জোগাড় করে নিন ভার্চুয়াল নম্বর— আধার কর্তৃপক্ষের অবস্থানটা ঠিক এই রকম দাঁড়াল। অর্থাত্ আধারকে যে নিরাপদ বলা হয়েছে, সেই অবস্থান থেকে কর্তৃপক্ষ পিছু হঠছেন না। আবার কারও আধার সংক্রান্ত তথ্যাদি যদি ফাঁস হয়ে যায়, তা হলে সে দায় ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলার পথও কর্তৃপক্ষ খোলা রাখছেন। এই বন্দোবস্তের মধ্যে একটা ধূর্ততা ধরা পড়ে। রাষ্ট্র এবং নাগরিকের মধ্যে যে সম্পর্ক, তাতে কোথাও এই ধূর্ততার স্থান নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE