Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে পারার মতো খবর এল

শুধু আক্রোশ, শুধু বিদ্বেষ, শুধু হিংসা, শুধু আঘাত-প্রত্যাঘাতের খবর শুনতে হচ্ছিল দিনের পর দিন। বলা বাহুল্য সে খবর কখনও অনিন্দ্য আনন্দানুভূতি বয়ে আনে না, বিষাদই বয়ে আনে বরং।

এ মহাসংগ্রাম গণতান্ত্রিক ভাবেই শেষ হোক, অগণতান্ত্রিকতা যেন স্পর্শ করতে না পারে, রইল এই প্রার্থনা। ফাইল চিত্র।

এ মহাসংগ্রাম গণতান্ত্রিক ভাবেই শেষ হোক, অগণতান্ত্রিকতা যেন স্পর্শ করতে না পারে, রইল এই প্রার্থনা। ফাইল চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৯ ০০:৫০
Share: Save:

নিরবচ্ছিন্ন বিষাদ সরিয়ে হরষিত হওয়ার অবকাশ পাওয়া গেল যেন অনেক দিন পরে। সন্ত্রাসবাদ তার ঘৃণ্য এবং করাল থাবা হেনেছে জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সম্প্রতি। মানবতার ওই ঘৃণিত শত্রুদের উপযুক্ত জবাব দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু জবাব দেওয়ার সে তাড়না বা সঙ্গত ক্রোধ যখন বিপথগামী হয়ে পড়ে, তখন অনাকাঙ্খিত সঙ্কট ঘনাতে শুরু করে। ঘরোয়া অশান্তি এবং দেশের মানুষকেই ‘দেশদ্রোহী’ বা ‘পাকিস্তানি’ হিসেবে চিহ্নিত করার প্রবণতাটাই হল সেই অনাকাঙ্খিত সঙ্কট। সেই সঙ্কট বিষাদসিন্ধুতে ক্রমশ ডুবিয়ে দিচ্ছিল জাতির বিবেককে যখন, ঠিক তখনই আশার দীপশিখা জ্বলে উঠল। অনেক দিন পরে কোনও উন্মুক্ত পৃথিবীর বাতাস যেন বয়ে এল উঠোনে। শ্বাস নেওয়া গেল উন্মুক্ত বাতাসে।

শুধু আক্রোশ, শুধু বিদ্বেষ, শুধু হিংসা, শুধু আঘাত-প্রত্যাঘাতের খবর শুনতে হচ্ছিল দিনের পর দিন। বলা বাহুল্য সে খবর কখনও অনিন্দ্য আনন্দানুভূতি বয়ে আনে না, বিষাদই বয়ে আনে বরং। সে বিষাদকে গভীরতর করে তুলছিল ঘরোয়া বিদ্বেষ। পাক ভূখণ্ডে ভারতের সামরিক অভিযানের খুঁটিনাটি নিয়ে কোনও প্রশ্ন তুললেই ‘দেশদ্রোহী’ বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। যুদ্ধের বিরুদ্ধে সরব হতে চাইলেই ‘দেশবিরোধী’ আখ্যা দেওয়া হচ্ছিল। দেশেরই কোনও জনগোষ্ঠীকে ‘পাকিস্তানি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছিল। সেই অবান্তর, অযৌক্তিক এবং অন্ধ বিদ্বেষের শিকার হচ্ছিলেন কাশ্মীরিরা। কর্মসূত্রে দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা কাশ্মীরিরা আক্রান্ত হচ্ছিলেন বার বার। কখনও বাংলা থেকে, কখনও উত্তরপ্রদেশ থেকে, কখনও দেশের অন্য কোনও প্রান্ত থেকে কাশ্মীরিদের উপরে আক্রমণের খবর আসছিল। সেই বাংলাই আবার মন জুড়িয়ে দিল। বাঙালি হিন্দু পরিবারের মেয়ের বিয়েতে আত্মার আত্মীয় হিসেবে হাজির থাকতে হল কাশ্মীরি মুসলিম বস্ত্র বিক্রেতার পরিবারকে।

হুগলি জেলার উত্তরপাড়ায় বাঙালির বিবাহ বাসরে পরম কাঙ্খিত অতিথি কাশ্মীরি আফাক শাহ এবং তাঁর পরিবার। ‘বোনের’ জন্য আফাকের বহু মূল্য উপহার বা ‘দাদার’ জন্য মিমির পরিবারের আন্তরিক আত্মীয়তার আখ্যান আজকের তারিখে যেন রূপকথার মতো শোনায়। কিন্তু রূপকথা নয়, ভারতের বাস্তবতা এটাই। কাশ্মীর যতটা ভারত, কন্যাকুমারীও ততটাই। কচ্ছ যতটা ভারত, কোহিমাও ততটাই। আক্রোশ বা বিদ্বেষে দ্বিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে কেউ কেউ হয়ত ভুলে যান সে কথা। কিন্তু ভারতের বাস্তবতা তাতে বদলায় না। ভারতীয়ত্বে নিহিত অপার ঔদার্যের অমোঘ আত্মপ্রকাশ ঘটে।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন​

আরও পড়ুন: উত্তরপাড়ার বিয়েতে অতিথি তালিকায় প্রধান আকর্ষণ কাশ্মীরি শালওয়ালা​

আরও পড়ুন: ঘরে পাকিস্তানি কনে আনলেন পঞ্জাবি বর, সৌজন্যে সমঝোতা এক্সপ্রেস

হিংসা, বিদ্বেষ, আক্রোশ কখনও শেষ কথা বলেনি সভ্যতার ইতিহাসে। অভাবনীয় হিংসার পর্বও পরিসমাপ্তির বিন্দুতে পৌঁছে ভালবাসার তথা মানবতার সীমায় উপনীত হয়েছে। পৃথিবীর ঊষর প্রান্তগুলোর জন্যও এ কথা সত্য। অতএব সৃষ্টির অপার স্নেহে সিঞ্চিত ভারতভূমির জন্য এ কথা আরও বেশি করে সত্য। ভারত-পাক সম্পর্কে সুতীব্র টানাপড়েনের মাঝেও তাই পাকিস্তানের কনে ভারতীয় গৃহস্থালির অঙ্গ হয়ে ওঠেন। হুগলি জেলার হিন্দমোটরে আক্রান্ত হওয়া কাশ্মীরি সেই জেলারই উত্তরপাড়ায় পরম আত্মীয়ের আসন পান। ভরসা জাগে ভারতীয়ত্বের গভীরতায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE