সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা আর্ত এক বিপুলাকার জনগোষ্ঠী তৈরি হয়েছে এখন। তাঁরা সহায়-সম্বলহীন, ছিন্নমূল। শরণার্থী। জুন মাসের ২০ তারিখ তাঁদের জন্য একটি শরণার্থী দিবসও তৈরি হয়েছে। ২০০১ থেকে প্রতি বছর দিনটিকে সামনে রেখে হু, ইউনাইটেড নেশনস হাই কমিশনার ফর রিফিউজিস (ইউএনএইচসিআর), দ্য ইউএন রিফিউজি এজেন্সি-র মতো আন্তর্জাতিক সংগঠন নীতি-নির্দেশ ঘোষণা করে। কিছু উদ্বাস্তু পরিবারকে দেশে ফেরানোর চেষ্টা করে। শিকে ছিঁড়লে কিছু মানুষের আইনি অবস্থানেরও পরিবর্তন হয়। প্রতি বছর ‘দ্য ইউএন রিফিউজি এজেন্সি’ দিনটির তাৎপর্য তুলে ধরতে একটি স্লোগান তৈরি করে। এ বছরও দিনটি অবহেলিত হয়নি। কোভিড পরিস্থিতি বিচারে স্লোগান ছিল: ‘এভরি অ্যাকশন কাউন্টস’। বাংলা তর্জমায় মোটামুটি দাঁড়ায়: মানুষের প্রতিটি ছোট পদক্ষেপই, নৈতিক অবস্থানের দিক থেকে সমান অধিকারের পৃথিবী গড়ে তুলতে পারে। কিন্তু এ বছরের জুনের আগে কিংবা পরে, কেমন আছেন এই ছিন্নমূল মানুষরা? খোঁজ নিয়েছি কি আমরা?
কয়েক দিন আগে আমাদের দেশে পরিযায়ী শ্রমিকদের করোনাকালীন সঙ্কট বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর অসংবেদনশীল মন্তব্য নিয়ে অনেক কথাবার্তা চলছে। তার মধ্যেই আমাদের মনে পড়তে পারে, অতিমারিতে গোটা বিশ্বের প্রান্তিক মানুষদের অস্তিত্ব কী ভাবে বিরাট প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। এই চরম দুঃসময়ে আশ্রয়প্রার্থী, শরণার্থী, রাষ্ট্রহীন, বিশেষত শিবিরবাসী উদ্বাস্তুদের অবস্থা সঙ্গিন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁরা বেঁচে রয়েছেন কোনওক্রমে। বাসস্থান, খাদ্য, স্বাস্থ্যের জন্য তাঁরা দেশের সরকার, মানবাধিকার রক্ষাকারী সংস্থা ও সহায়ক সংগঠনগুলির উপর নির্ভরশীল। এমন মানুষদের সংখ্যা কত? ইউএনএইচসিআর বা উদ্বাস্তু কল্যাণের কাজে নিয়োজিত আন্তর্জাতিক সংস্থার হিসেব, বিশ্বের ১ শতাংশ মানুষ বাস্তুহারা। নথিভুক্ত বা অনথিভুক্ত শরণার্থী প্রায় ৭.৯৫ কোটি। জবরদস্তি উচ্ছেদ হওয়া গৃহহীনদের মধ্যে ২.৬ কোটি ঘোষিত উদ্বাস্তু, ৪.৫৭ কোটি নিজের দেশের মাটিতেই নাগরিক সুযোগ-সুবিধে ছাড়া পরজীবী হয়ে বাঁচতে বাধ্য, ৪২ লক্ষ অন্য দেশে আশ্রয়প্রার্থী (আইনি ভাষায় ‘অ্যাসাইলাম সিকার’)। মোট উদ্বাস্তু জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ অনূর্ধ্ব ১৮, ৭৩ শতাংশের বেশি পরিবারের অবস্থান দারিদ্র সীমার নীচে।
সিরিয়ার যুদ্ধ শেষ কয়েক বছরে যে অমানবিক অবস্থা তৈরি করেছে, তাতে অন্তত ১.২ কোটি মানুষ সিরিয়ার পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র বা ইউরোপে মাথা গোঁজার চেষ্টা করেছেন। বাস্তুচ্যুতি, অসুস্থতা ও ক্ষুধার সঙ্গে লড়াই করে প্রায় ৬২ লক্ষ সিরীয় উদ্বাস্তু আশ্রয় নিয়েছেন জর্ডন, লেবানন, ইরাক, মিশর, তুরস্ক প্রভৃতি পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলিতে। অনেকে সাময়িক আশ্রয় পেয়েছেন গ্রিস, সুইডেন, অস্ট্রিয়া, জার্মানিতে। কানাডা, আমেরিকা, আয়ারল্যান্ড, আর্জেন্টিনা, স্পেন, নরওয়ে, নিউ জ়িল্যান্ডও উদ্বাস্তু-ত্রাতা রাষ্ট্রগুলির অন্যতম। কেনিয়া, সোমালিয়াতেও উদ্বাস্তু প্রচুর। অধিকাংশ দেশেই তাঁদের শিবিরের বাইরে বেরিয়ে কাজের অধিকার নেই। যাঁরা সামান্য উপার্জন করতেন, তাঁরা এখন কাজ পাচ্ছেন না।