কয়েক দিন আগে বন্দে ভারত ট্রেনে আমরা দু’জন প্রবীণ হাওড়ায় নামি রাত ন’টা নাগাদ। নতুন প্ল্যাটফর্ম থেকে বেরিয়ে যাত্রী সাথী-র বুকিং-এর লাইনে দাঁড়াই। কিন্তু গাড়ি কোথায়? দেখি, দু’-তিনটি গাড়ি রয়েছে, কিন্তু কেউই যেতে রাজি নয়। এ দিকে, লাইনে অন্তত ৫০-৬০ জন যাত্রী। নতুন কোনও গাড়িও আসছিল না। তা-ও কুড়ি-পঁচিশ মিনিট অপেক্ষা করার পর মোবাইলে বুক করে একটা ওটিপি পাই। কাউন্টারে বসা ভদ্রলোককে সেই ওটিপি দিলে উনি একটা গাড়ি ডেকে আমাদের নিয়ে যেতে বলেন। ড্রাইভার প্রথমেই জানতে চান, কোথায় যাব? বলি, এয়ারপোর্ট। পরের প্রশ্ন, ভাড়া কত দেখাচ্ছে? বললাম, ৩৯১ টাকা। সঙ্গে সঙ্গে যেতে অস্বীকার করলেন। কাছাকাছি এক জন মাত্র পুলিশকর্মী ছিলেন। তাঁকে একটু কড়া ভাবে পরিস্থিতির কথা জানাতে তিনি ওই ড্রাইভারকে রিফিউজ়াল-এর কেস দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আমাদের নিয়ে যেতে নিমরাজি করালেন।
গাড়িতে যেতে যেতে ওই ড্রাইভার আমাদের বোঝাতে চাইলেন কেন ওঁরা যাত্রী তুলতে চান না— যাত্রী সাথীর ভাড়া অনেক কম অন্যান্য গাড়ির তুলনায়। এও বললেন যে, প্রশাসন কিছুই করতে পারবে না। যা-ই হোক, হাওড়া ব্রিজ পার হওয়ার পরে হঠাৎ গাড়ি থামিয়ে দিয়ে তিনি জানিয়ে দিলেন আর যাবেন না। অন্য গাড়ি ডেকে দিচ্ছেন। অনেক জোরাজুরি করেও কাজ হল না। উনি আমাদের রাস্তায় নামিয়ে চলে গেলেন। সে দিন অনেক কষ্ট করে বাড়ি ফিরি। প্রশাসনের কাছে প্রশ্ন, হাওড়ার মতো ব্যস্ততম স্টেশনে যাত্রী সাথীর চালকরা কেন এমন আচরণ করবেন? পুলিশের সংখ্যাই বা রাতে এত কম কেন? পরিবহণের এমন হাল হলে যাত্রীরা কোথায় যাবেন?
সমীর বরণ সাহা, কলকাতা-৮১
ক্ষতিপূরণ চাই
কেন্দ্রীয় সরকারের বীজ আইন (২০২৫) বিষয়ে কিছু তথ্য ইতিমধ্যেই সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্য ফসলের বীজ ব্যবহারকারী কৃষকের স্বার্থ সুরক্ষার পাশাপাশি নিম্নমানের বীজ সরবরাহকারী সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান। এ বিষয়ে ‘সমস্যার বীজ’ (১২-১২) শীর্ষক সম্পাদকীয়তে কতকগুলি সমস্যা তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, নিম্নমানের বীজ ব্যবহারের ফলে ফসল মার খেলে তাঁর ক্ষতিপূরণের বিষয়টি রয়েছে সেই বিশ বাঁও জলে। এই আইন বলছে, বীজ ব্যর্থ হলে জরিমানা পাবে সরকার, চাষি নয়। তা ছাড়া, বীজ নিয়ে সমস্যা হলে সে ক্ষেত্রে চাষিকেই আদালতে যেতে হবে। সে ক্ষমতা সব চাষির নেই।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের আমন ধান চাষের জন্য পাথরপ্রতিমা ব্লকের সহকারী কৃষি আধিকারিকের অফিস থেকে বিনামূল্যে ধানের বীজ আরও অনেক গ্রামের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছিল। স্বল্পমেয়াদি ধানের জাত হওয়ায় চারা রোপণের অল্প দিনের মধ্যেই ধানের ফসল জন্মায় এবং গড় ফলন হয় বিঘাপ্রতি ১০০ কিলো। উপকার প্রাপক কৃষকরা ক্ষতিপূরণের দাবি জানালে কৃষক অধিকারের পক্ষ থেকে সরেজমিনে সমীক্ষা করে এর সত্যতা স্বীকার করে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেওয়া হয়। দুর্ভাগ্যের বিষয়, কৃষকরা কোনও ক্ষতিপূরণ পাননি এবং তার কারণও জানানো হয়নি। সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন থেকেই যায়, সরকার কর্তৃক বিতরণ করা বীজ চাষ করে চাষি যদি ক্ষতিগ্রস্ত হন, তা হলে তার ক্ষতিপূরণ কী ভাবে পাওয়া যাবে?
সুভাষচন্দ্র আচার্য, সোনারপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
বিস্মৃত ইতিহাস
পলাশি যুদ্ধের চরম পরিণতি হল বক্সার যুদ্ধ। বাংলার নবাব মির কাশিম, অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা এবং মোগল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের মিলিত জোটের যুদ্ধ হয় হেক্টর মনরো-র নেতৃত্বাধীন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনার সঙ্গে। এই যুদ্ধের ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী, কারণ এর পরে ভারতীয় উপমহাদেশে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিরাট পরিবর্তন দেখা যায়।
সম্প্রতি এই স্থানে বেড়াতে গিয়েছিলাম। দেখলাম, এই স্থানের বিভিন্ন জায়গা ভেঙেচুরে গিয়েছে। বন-জঙ্গল গজিয়ে গিয়েছে নানা জায়গায়। এমন দর্শনীয় স্থানটির বিষয়ে বিহার সরকার এবং ভারত সরকার— উভয়ই সমান উদাসীন। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, আলো লাগিয়ে, বন জঙ্গল সাফ করে নানা রকম মরসুমি ফুল গাছ লাগিয়ে জায়গাটা সুন্দর করে গড়ে তোলা হোক, যাতে এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র হয়ে ওঠে। ঐতিহাসিক স্থানের এমন দুরবস্থা মানা যায় কি?
তমাল মুখোপাধ্যায়, ডানকুনি, হুগলি
বালি চুরি
মানুষ-নদী-বন, এই তিন নিয়ে সুন্দরবন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার এক শ্রেণির মানুষ সুন্দরবনের পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের ধ্বংসের খেলায় মেতেছে। কেউ কেউ বন কেটে মাছের ভেড়ি নির্মাণ করছে। অনেকে ম্যানগ্রোভ নিধনে মেতে উঠেছে। নদীর পার্শ্ববর্তী জায়গা দখল করে বাড়ি তৈরি করছে। তেমনই কিছু মানুষ অবৈধ বালি চুরির কারবার শুরু করেছে। নদীর এক কূল ভাঙে, অপর কূল গড়ে। আবার প্রাকৃতিক নিয়মে চর গড়ে ওঠে। অথচ, লোভের বশে মানুষ যখন চরের বালি চুরিতে লিপ্ত হয়, তখন আগামী দিনে প্রবল বিপর্যয়ের আশঙ্কা করতেই হয়।
চরের বালি ইচ্ছেমতো তুললে নদীর গতিপথ বদলাতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা দেখা দিতে পারে সুন্দরবনের মানুষদের। নদী বাঁধ ভেঙে ধানখেত, মাঠ, মিষ্টি জলের পুকুর, লোকালয় প্লাবিত হতে পারে। আগে এই সব ঘটেছে। হাতানিয়া দোয়ানিয়া, মুড়িগঙ্গা নদী থেকে বালি সংগ্রহ করে কাকদ্বীপ, নামখানা, পাথরপ্রতিমার বিভিন্ন জায়গায় চলে যাচ্ছে ইঞ্জিন ভ্যানের মাধ্যমে। সেই চর থেকে সংগ্রহ করা বালি চড়া দামে বিক্রি করে কিছু লোক ফুলে ফেঁপে উঠছে। ফলে নদীকেন্দ্রিক বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস হচ্ছে। শুধু কাকদ্বীপ নয়, সুন্দরবনের ১৯টি ব্লকের নানা জায়গায় এই ভাবে অবৈধ সাদা বালি সংগ্রহ চলছে।
যদি সংশ্লিষ্ট এলাকার পঞ্চায়েত, বিডিও অফিস, সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদ সক্রিয় হয়, তা হলে এই সমস্যা থেকে সুন্দরবনবাসীদের মুক্তি মিলবে। তবে এদের সঙ্গে বন দফতরের দায়িত্বও থেকে যায়। শুধু তা-ই নয়, অবৈধ বালি কারবারিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে অন্যদের তা দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়ায়। না হলে কতিপয় ব্যক্তির স্বার্থ বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে ভয়ানক বিপর্যয় ডেকে আনবে অদূর ভবিষ্যতে।
রতন নস্করসরিষা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
নালা-যন্ত্রণা
রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার ৩৩ নম্বর ওয়র্ডের খোলা নর্দমায় সারা বছর জল জমে থাকে। বছরে এক-দু’বার রাস্তার ধারের আগাছা-গাছালি পরিষ্কার হলেও নর্দমার হাল এমনই রয়েছে গত কয়েক বছর ধরে। কোনও নিকাশি ব্যবস্থা কাজ করে না এই ওয়র্ডে, সন্নিহিত ওয়র্ড ৩৪ নম্বরেও। স্বাভাবিকই মশার আঁতুড়ঘর হয়ে ওঠে এই খোলা নর্দমার জমা জল। বর্ষাকালে নালাগুলো টইটম্বুর থাকে অনেক দিন। খোলা নর্দমার মাটি যেটুকু শুষে নেয়, ওই অবধি। গৃহস্থ বাড়ির ব্যবহৃত জলও ওই নর্দমায় পড়ে ও জমে। এখন তো সন্ধেবেলা ঘরে বসা যায় না দরজা-জানলা খুলে। মশা মারার বিষাক্ত কয়েল বা মশা তাড়ানোর তরল বা ধূপ জ্বেলে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে শিশু থেকে নবতিপর বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে বন্ধ ঘরে কাটাতে হয়। কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি স্থানীয় সমস্যাগুলোর আশু সমাধানের জন্য।
সৌম্যেন্দ্র নাথ জানা, কলকাতা-১৫৪
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)