Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Covid-19

মুখচ্ছদহীন

প্রেসিডেন্টের তর্জনে অভ্যস্ত মার্কিন নাগরিকদের রাষ্ট্রপ্রধানের ভাষণকে এত গুরুত্ব না দিলেও চলিত। কিন্তু গুরুত্ব দিতেই হয়, কারণ ট্রাম্প ক্রমাগত এক বিপজ্জনক কাজ করিতেছেন।

ছবি: এএফপি।

ছবি: এএফপি।

শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২০ ০০:১৮
Share: Save:

বেফাঁস, উস্কানিমূলক মন্তব্য। এবং ভুল তথ্য প্রচার। দুই-ই অভ্যাসে পরিণত করিয়াছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই বছর ৪ জুলাইয়ের আনুষ্ঠানিক ভাষণও ব্যতিক্রম হইল না। স্বাধীনতা দিবসের আগের সন্ধ্যায় মাউন্ট রাশমোরে কয়েক হাজার জনতার সামনে সাম্প্রতিক কালের বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনকে বামপন্থী অরাজকতা বলিয়া দাগাইয়াছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। মার্কিন জনগণ পূর্বে নাৎসিদের পরাস্ত, ফ্যাসিস্টদের উৎখাত এবং কমিউনিস্টদের ক্ষমতাচ্যুত করিয়া মার্কিন মূল্যবোধ রক্ষা করিয়াছে, এই বারও তাঁহারা বামপন্থী, মার্ক্সিস্ট, বিক্ষোভকারী, লুণ্ঠনকারী সন্ত্রাসবাদীদের শেষ দেখিয়া ছাড়িবেন— এ হেন ইন্ধন দিয়া সমর্থকদের উস্কাইতেও দ্বিধা করেন নাই। হোয়াইট হাউসের সাউথ লন হইতেও পর দিন একই সুর চড়াইলেন। উপরন্তু এই বৎসর কোভিড-আবহে তাঁহার দাবি, আমেরিকায় কোভিড-আক্রান্ত মানুষের ৯৯ শতাংশেরই কোনও ক্ষতি হয় নাই!

প্রেসিডেন্টের তর্জনে অভ্যস্ত মার্কিন নাগরিকদের রাষ্ট্রপ্রধানের ভাষণকে এত গুরুত্ব না দিলেও চলিত। কিন্তু গুরুত্ব দিতেই হয়, কারণ ট্রাম্প ক্রমাগত এক বিপজ্জনক কাজ করিতেছেন। ক্রান্তিকালকে নিজ রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি করিতে কাজে লাগাইতেছেন। জর্জ ফ্লয়েড হত্যার জেরে মার্কিন নাগরিকরা বর্ণনির্বিশেষে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের দাবিতে পথে নামিয়াছেন, সমাজ-রাজনীতির বিশারদরা যাহাকে এক গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বিপ্লব বলিতেছেন। স্থানে স্থানে লুটপাট বিশৃঙ্খলা হইয়াছে সত্য, কিন্তু আক্ষরিক অর্থেই এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের সাক্ষী হইয়াছে আমেরিকা। শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যে বিশ্বাসী ট্রাম্প ও তাঁহার সমর্থকদের পক্ষে ইহা মানিয়া লওয়া মুশকিল। নভেম্বরে আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, তাহার আগে এই গণতান্ত্রিক জোয়ার রুখিতে ট্রাম্প বদ্ধপরিকর। তাঁহার জনসমর্থন চাই, আর বর্ণবাদ নামক তাসটি আস্তিন হইতে বাহির করিয়া চালাইয়া দিলে শ্বেতাঙ্গ জনসমর্থন তাঁহার দিকে ঢলিতে বাধ্য। সেই কারণেই গণবিক্ষোভ ও মূর্তি ভাঙার আন্দোলনকে অরাজকতা বলিয়া চালাইবার চেষ্টা, কৃষ্ণাঙ্গদের বিরুদ্ধে শ্বেতাঙ্গদের বিষাইয়া দিয়া কাজ হাসিল করিবার মতলব। আবার অতিমারিপীড়িত দেশে যেখানে প্রায় এক লক্ষ ত্রিশ হাজার মানুষ কোভিডে মারা গিয়াছেন, আঠাশ কোটি নাগরিক করোনায় আক্রান্ত, সেখানে ট্রাম্প বলিতেছেন সব ঠিক আছে। করোনা মোকাবিলায় চিন্তাকুল তাঁহার দলের রাজনীতিকরাও যখন নাগরিকদের স্বাস্থ্যবিধি মানিতে বলিতেছেন, স্বয়ং প্রেসিডেন্ট তখন মুখচ্ছদহীন বেপরোয়া।

ঝোপ বুঝিয়া কোপটি মারিবার এই ছক সুপরিকল্পিত। ইহা ইতিহাসের কোনও সন্ধিক্ষণে বা দুর্যোগকালে নাগরিকদের ব্যবহার করিবার ছক; সঙ্কটকেই কাজে লাগাইয়া, ভুল তথ্য বা ব্যাখ্যায় নাগরিকদের বিভ্রান্ত ও বিভক্ত করিয়া রাজনৈতিক লাভের গুড়টি খাইবার ফন্দি। এই ছকের সন্ধান পাইতে ট্রাম্পের আমেরিকায় যাইতে হইবে না, ভারতেই মিলিবে। বিদেশে যাহা শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ, স্বদেশে তাহা হিন্দু-মুসলমান; অন্যত্র গণআন্দোলনকে অরাজকতা বলিবার হিড়িক, এই দেশে বিরুদ্ধ স্বরকে দেশদ্রোহে ফাঁসাইবার হুজুগ। দুর্ভাগ্য, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নাগরিকের ভোটে নির্বাচিত নেতার হাতে দুর্ভোগ পোহাইতে হয় নাগরিককেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

COVID-19 Donald Trump US
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE