রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
সারকথাটা বলা রয়েছে দু’তিনটে বাক্যে। ভিন্ন রাজনৈতিক দল, ভিন্ন মতাদর্শ, ভিন্ন রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থেকে আসা সত্ত্বেও দুই ব্যক্তি যখন রাষ্ট্রের দুই শীর্ষ সাংবিধানিক পদে থাকেন, তখন পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতেই তাঁরা কাজ করেন— দু’তিনটে বাক্যে এই কথাটাই লিখেছেন নরেন্দ্র মোদী। লিখেছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়কে পাঠানো চিঠিতে। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সম্পর্ক কতটা মসৃণ ছিল, চিঠির বয়ানে শুধু সেটুকুই প্রতীত হয়, এমনটা ভাবলে সে বড্ড অগভীর ভাবনা হবে। এই চিঠিতে আসলে ভারতীয় গণতন্ত্রের অনন্য সৌন্দর্যটা প্রতীত হয়।
সৌহার্দ্য, সঙ্ঘাত, সহযোগিতা— এই তিনের ভারসাম্য তথা সহাবস্থানই হল ভারতীয় গণতন্ত্রের মূল সুর।
প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে সুসম্পর্ক, তিন বছর একসঙ্গে মসৃণ ভাবে কাজ করা, রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মেয়াদ শেষ হওয়ার মুহূর্তেও নরেন্দ্র মোদীর দফতর থেকে আসা লিপিবদ্ধ আন্তরিকতা— সৌন্দর্যের নিহিতি এখানে। দীর্ঘ বাম জমানায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে জ্যোতি বসু-বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যদের তোলা বঞ্চনার অভিযোগ বা চলতি তৃণমূল জমানায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা বৈষম্যের অভিযোগ এবং তা সত্ত্বেও দেশে নতুন কর ব্যবস্থা চালুর স্বার্থে মতানৈক্য দূরে সরিয়ে রেখেও কেন্দ্র-রাজ্য সহযোগিতা ও সমন্বয়— সৌন্দর্যের নিহিতি এখানেও।
পরিণত গণতন্ত্রের ছবিটা এই রকমই হওয়া উচিত। রাজনীতিতে সঙ্ঘাত থাকবেই, কিন্তু দায়িত্বশীলতাও থাকবে। রাজনীতিতে ক্ষমতা ধরে রাখার বা ক্ষমতা দখল করার অদম্য প্রয়াস থাকবেই, কিন্তু সাংবিধানিক কর্তব্যের প্রতি অটল শ্রদ্ধাও থাকবে। যে কোনও পরিণত গণতন্ত্রে তেমনটাই হয়।
সেই পরিণতমনস্কতা ভারত দেখিয়েছে। দেখিয়েছে বলেই ভারতের সাংবিধানিক কাঠামো সার্থকতা পেয়েছে। দেখিয়েছে বলেই পারিপার্শ্বিকতায় গণতন্ত্রের একের পর এক নিধন যজ্ঞ দেখেও সাত দশক ধরে ভারতীয় গণতন্ত্র মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
তবু সতর্ক থাকতে হবে আমাদের। সুদীর্ঘ-লালিত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধগুলোর উপর অনৈতিকতার ছায়াপাতও আজ উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে। এই ছায়া আরও গাঢ় হলে আমাদের গণতন্ত্র তার সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলবে। অতএব, সজাগ আমাদের থাকতেই হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy