Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Newsletter

অশান্তি দুর্ভাগ্যজনক, কিন্তু প্রশাসনও পারদর্শিতার প্রমাণ দিল

রাজ্য সরকারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তরফে বড়সড় ব্যর্থতা না থাকলে যে, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা পাহাড়কে অতখানি অশান্ত করে তুলতে পারত না, সে কথা স্বীকার করতেই হবে।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৭ ০৪:০৪
Share: Save:

অপরিসীম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছিল পুলিশ। গোয়েন্দা ব্যর্থতা কোন পর্যায়ে পৌঁছলে দার্জিলিং-এর বুকে ক্যাবিনেট বৈঠক চলাকালীন পাহাড়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়, সে আন্দাজ করা খুব শক্ত নয়। কিন্তু, সেই ভয়ঙ্কর অগ্নুত্পাতের ঠিক ২৪ ঘণ্টার মাথায় পাহাড় ফের স্বাভাবিকতার পথে। গোলমাল পাকানোর চেষ্টা যে হয়নি, তা নয়। বন্‌ধের ডাক আগেই দেওয়া হয়েছিল। কোথাও চোখরাঙানি, কোথাও অগ্নিসংযোগও চলছিল। কিন্তু, খুব দ্রুতই পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিল প্রশাসন। দিনের শেষে দেখা গেল, অপ্রীতিকর ঘটনাগুলোর খতিয়ান নেহাত্ বিক্ষিপ্ত এবং বিচ্ছিন্নই।

সেনা এবং পুলিশ যে শুক্রবার পাহাড়ে পারদর্শিতার পরিচয় দিয়েছে, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। কিন্তু, অত্যন্ত মসৃণ প্রক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রণ পুনর্বহাল করা এবং স্বাভাবিকতা ফেরানোর জন্য যে সুচারু নেতৃত্বের প্রয়োজন হয়, এ রাজ্যের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক প্রশাসন যে সেই নেতৃত্ব দিতে পেরেছে, সে কথাও স্বীকার করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে পাহাড়ে থেকে গিয়েছেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির হাল-হকিকতে সর্ব ক্ষণ নজর রেখেছেন, পর্যটকদের নির্বিঘ্নে ফেরানোর ব্যবস্থা করেছেন, উপদ্রুত এলাকায় নিজে হাজির হয়েছেন, জনসাধারণের সঙ্গে কথা বলেছেন, অত্যন্ত সংযমের সঙ্গে পদক্ষেপ করেছেন। ফলে শুক্রবার সন্ধ্যার ম্যালকে দেখে বোঝা যায়নি, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সেখানকার ছবিটা কতটা আতঙ্কের ছিল।

রাজ্য সরকারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তরফে বড়সড় ব্যর্থতা না থাকলে যে, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা পাহাড়কে অতখানি অশান্ত করে তুলতে পারত না, সে কথা স্বীকার করতেই হবে। পুলিশের এই গোয়েন্দা ব্যর্থতায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও অত্যন্ত রুষ্ট ছিলেন। কিন্তু, রাত পোহাতেই যে ভাবে নিজে হাজির হলেন উপদ্রুত এলাকায়, যে ভাবে মনোবল বাড়ালেন সরকারি বাহিনীর, যে ভাবে ব্যক্তিগত তত্পরতায় ও সক্রিয়তায় সচল করে তুললেন আচমকা শীতঘুমে চলে যাওয়া প্রশাসনকে, তা সুযোগ্য নেতৃত্বেরই স্বাক্ষর বহন করে। পাহাড়ে আটকে থাকতে হয়নি পর্যটকদের। সরকারি পরিবহণ ব্যবস্থা বন্‌ধের পাহাড়েও সচল থেকেছে এবং পর্যটকদের সমতলে পৌঁছে দিতে বিশেষ পরিষেবার ব্যবস্থা হয়েছে। বেনজির ভাবে পুলিশের মাইক নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী, মাইকিং করেছেন, জনসংযোগ করেছেন, জনসাধারণকে রাস্তায় নামার আহ্বান জানিয়েছেন, আতঙ্ক কাটানোর চেষ্টা করেছেন। দিনের শেষে পাহাড়ের স্বাভাবিকতা পুনরুদ্ধারে রাজ্য প্রসাসন কিন্তু সক্ষম হয়েছে। পরিস্থিতি কিন্তু আরও খারাপ হতে পারত, নিমেষে আগুনটা এ পাহাড় থেকে সে পাহাড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারত। সে দৃশ্যের সাক্ষী দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াং বহু বারই হয়েছে। এ বার অন্তত তেমনটা হল না। সংযম এবং বজ্রমুষ্ঠির ভারসাম্যেই বোধ হয় এমনটা সম্ভব হল।

প্রশ্ন কিন্তু এর পরেও থেকে যায় কিছু। অশান্ত পাহাড়কে মুখ্যমন্ত্রী সুদক্ষ নেতৃত্বে শান্ত করলেন, এ কথা না হয় মানা গেল। পাহাড় অশান্ত হঠাত্ হল কেন, সে কথা কি জানা গেল? রাজনৈতিক শিবিরের বিভিন্ন কোণ থেকে উঠছে প্রশ্নটা। অবান্তর প্রশ্ন নয়। গত কয়েক মাসে পাহাড়ে তৃণমূল নেতৃত্বের নানা পদক্ষেপ নিয়ে সমালোচনা কিন্তু বিস্তর। তৃণমূলের বাইরে শুধু নয়, ভিতরে কান পাতলেও সে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। দলনেত্রী হিসাবে সে দায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পূর্ণ এড়িয়ে যেতে পারেন কি? প্রশ্ন উঠবেই। দায় তিনি এড়িয়ে যাবেন, নাকি পদক্ষেপে সংশোধন আনবেন, সে প্রশ্নের উত্তর খুব দ্রুতই মিলবে আশা করা যায়। কিন্তু সব প্রশ্নের চেয়ে বড় কথা আজ এই যে, পাহাড় ফের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে, অত্যন্ত দ্রুতই ফিরছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE