Advertisement
E-Paper

সাংবিধানিক উচ্চতায় পৌঁছনোর আগে রাজনৈতিক উচ্চতা পাওয়া জরুরি

এ দেশে সংখ্যালঘুরা নিরাপদ বোধ করছেন না বলে যাঁরা দাবি করছেন, তাঁরা আসলে রাজনৈতিক অপপ্রচার করছেন, মন্তব্য বেঙ্কাইয়ার। কারও নাম করেননি বেঙ্কাইয়া নায়ডু ঠিকই। কিন্তু তাঁর ইঙ্গিত কোন দিকে, তা বোঝা খুব দুষ্কর নয়।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৭ ০৪:০৯
বেঙ্কাইয়া নায়ডু এবং হামিদ আনসারি। ছবি:সংগৃহীত।

বেঙ্কাইয়া নায়ডু এবং হামিদ আনসারি। ছবি:সংগৃহীত।

স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে এর আগে কবে এই রকম দৃশ্যপট তৈরি হয়েছে, তা মনে করা বেশ শক্ত। এক রাষ্ট্রপতি তাঁর শেষ ভাষণে মনে করিয়ে দিয়ে গেলেন, বহুত্ব এবং সহিষ্ণুতাই ভারতীয়ত্বের ধর্ম। তার পরেই এক উপরাষ্ট্রপতি তাঁর বিদায়ক্ষণে আরও স্পষ্ট করে অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে গোটা দেশকে সতর্ক করলেন। ভারতে সংখ্যালঘুরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন বলেও তিনি মন্তব্য করলেন। দেশের দুই সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদাধিকারী নিজেদের বিদায়ক্ষণে এ ভাবে সতর্ক করে যাচ্ছেন গোটা জাতিকে, এ ছবি কিন্তু বেশ বিরল।

এক দশক ভারতের উপরাষ্ট্রপতি পদে কাটানোর পর বিদায়বেলায় হামিদ আনসারি যে বার্তা দিলেন, তাকে সদর্থক ভাবে গ্রহণ করাই কর্তব্য ছিল। পরিস্থিতির তাৎপর্য অনুধাবন করে আত্মমন্থনের কথা ভাবা উচিত ছিল। দেশের বর্তমান শাসকরা উল্টোটাই করলেন। সংসদের অন্দরে প্রধানমন্ত্রীর মুখে বিদায়ী উপরাষ্ট্রপতির প্রশস্তিই শোনা গেল বটে। কিন্তু সংসদ চত্বরের বাইরে বেরিয়েই সে শিষ্টাচার ভুলে গেল বিজেপি। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে হামিদ আনসারি সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাহীনতা সংক্রান্ত বিতর্ক উস্কে দিয়েছেন বলে মন্তব্য করা হল বিজেপির তরফে।

কোনও সাংবিধানিক পদাধিকারীকে তাঁর বিদায়বেলায় এ ভাবে আক্রমণ করা দস্তুর নয়। বিজেপি নেতার এই আক্রমণে তাই রাজনৈতিক সৌজন্যের পরম্পরাটা বেশ জোরেই ধাক্কা খেল। তবে শুধু বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়র আক্রমণেই যদি সীমাবদ্ধ থাকত অসৌজন্যটা, তা হলে সম্ভবত এত কথা লেখার প্রয়োজন পড়ত না। প্রয়োজনটা আরও বেশি অনুভূত হল বেঙ্কাইয়া নায়ডুর দিক থেকে একটা অযাচিত মন্তব্য উড়ে আসার পর। এ দেশে সংখ্যালঘুরা নিরাপদ বোধ করছেন না বলে যাঁরা দাবি করছেন, তাঁরা আসলে রাজনৈতিক অপপ্রচার করছেন, মন্তব্য বেঙ্কাইয়ার। কারও নাম করেননি বেঙ্কাইয়া নায়ডু ঠিকই। কিন্তু তাঁর ইঙ্গিত কোন দিকে, তা বোঝা খুব দুষ্কর নয়। উপরাষ্ট্রপতি পদের শপথ নেওয়ার আগের দিন নিজের পূর্বসূরির প্রতি এই রকম ইঙ্গিত অসৌজন্যমূলক তো বটেই, ঘোরতর অনাকাঙ্খিতও। ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম যে শীর্ষ সাংবিধানিক পদটির জন্য বেঙ্কাইয়া নায়ডু নির্বাচিত হয়েছেন, নিজেই সেই পদের মর্যাদাহানি ঘটালেন না কি?

খুব সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে যখন কথা বলি আমরা, রাজনৈতিক দৃষ্টিপথটাকে যখন ঘিরে রাখে সঙ্কীর্ণতার কোনও পাঁচিল, তখন এই রকম হয়। বৃহত্তর পরিসরটাকে তখন আমরা দেখতেই পাই না। দৃষ্টিপথকে আবদ্ধ করে রাখা সঙ্কীর্ণ পাঁচিলটার ও পারে কী রয়েছে, তা দেখার জন্য একটু উঁচু হতে হয়, রাজনৈতিক ভাবে দীর্ঘদেহী হতে হয়। দেশের শীর্ষ সাংবিধানিক পদগুলোয় আসীন হওয়ার আগে সেই রাজনৈতিক উচ্চতায় পৌঁছনো সত্যিই খুব জরুরি।

Minority Minorities insecure Vice President Venkaiah Naidu Hamid Ansari Anjan Bandyopadhyay Newsletter BJP Kailash Vijayvargiya অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় হামিদ আনসারি বেঙ্কাইয়া নায়ডু
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy