Advertisement
১৯ মে ২০২৪
Vultures

শকুনদের কি ফেরানো যাবে বাংলার আকাশে!

শনিবার ছিল আন্তর্জাতিক শকুন সচেতনতা দিবস। জেলায় লুপ্ত হতে বসা এই পাখির খোঁজে আনন্দবাজার বর্তমানে ভারতে চারটি শকুন সংরক্ষণ ও প্রজনন কেন্দ্র রয়েছে। অসম, পশ্চিমবঙ্গ, হরিয়ানা ও মধ্যপ্রদেশে।

শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০২:৫৪
Share: Save:

গত বছর ‘বম্বে ন্যাচরাল হিস্ট্রি সোসাইটি’কে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা এএনআই একটি খবর করেছিল। খবরে জানানো হয়েছিল, বছর কুড়ি আগেও ভারতে চার কোটি শকুন ছিল। কিন্তু বর্তমানে শকুনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মাত্র ২২ হাজার।

বর্তমানে ভারতে চারটি শকুন সংরক্ষণ ও প্রজনন কেন্দ্র রয়েছে। অসম, পশ্চিমবঙ্গ, হরিয়ানা ও মধ্যপ্রদেশে। অসমের কেন্দ্রে ১৩০টি শকুন রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের রাজাভাতখাওয়ায় রয়েছে ১১৮টি শকুন। হরিয়ানার পিঞ্জোরে ৫০০টি শকুন রয়েছে। মধ্যপ্রদেশের ভোপালের কেন্দ্রে রয়েছে ৬০টি শকুন।

পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট, ভারতে শকুনের অবস্থা মোটেও ভাল নয়। সারা পৃথিবীতেই ভাল নয়। শকুন বাঁচাতে নানা উদ্যোগ করা হয়েছে। সচেতনতা বাড়াতে তৈরি হয়েছে আস্ত একটি দিন। কিন্তু শকুনের কিছু উন্নতি হয়েছে কী? আশাব্যঞ্জক কিছু উত্তর নেই। তবে ঝাড়গ্রামের পক্ষী বিশারদ বর্তমানে ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা শিবশঙ্কর গোস্বামী জানাচ্ছেন, হাজারিবাগে বেশ কিছু শকুন তিনি প্রতি বছরই দেখতে পান। প্রায় অদেখা প্রজাতির শকুনের ছবিও তিনি তুলেছেন। হাজারিবাগে এত শকুন থাকার কারণ কী? শিবশঙ্করের মতে, এখানে শকুনেরা খাবার প্রচুর পায়। আর পরিবেশটা ওদের অনুকূল। বড় গাছের সংখ্যা বেশি। এলাকায় পাহাড়ও রয়েছে। ফলে মনোমত পরিবেশটাও পায়।

ঝাড়খণ্ডের পাশের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ। আর পশ্চিমবঙ্গের অবিভক্ত মেদিনীপুর ঝাড়খণ্ড সংলগ্ন। কিন্তু এখানে শকুন কি দেখা যায়? শিবশঙ্কর জানিয়েছেন, তিনি সেই ১৯৮৩-৮৪ সাল নাগাদ শকুন দেখেছেন ঝাড়গ্রামে। পশ্চিম মেদিনীপুরেও সচরাচর শকুনের দেখা মেলে না। এক সময়ে একাধিক জায়গায় শকুনের বাসাও ছিল। শালবনির কুলডিহা পাখির গ্রাম বলে পরিচিত। এখানে কখনওসখনও শকুন দেখা যায়। কেশপুর কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক সুমন প্রতিহার পাখি নিয়ে চর্চা করেন। তিনি বললেন, ‘‘মেদিনীপুরের এই অঞ্চলে এখন সে ভাবে শকুনের দেখা মেলে না। বছর কুড়ি আগেও দেখা মিলত। তখন শকুনের বাসা ছিল।’’ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বন কর্মাধ্যক্ষ নেপাল সিংহ বলেন, ‘‘আগে অনেক শকুনের দেখা যেত। এখন খুব বেশি দেখা মেলে না।’’

তবে আশার কথা শোনালেন অভীক দত্ত। বেলপাহাড়ির এই তরুণ পাখি নিয়ে চর্চা করেন। তিনি জানিয়েছেন, বছর কুড়ি আগে তিনি বাড়ির পাশে একটি বড় গাছে শকুন থাকতে দেখেছেন। কিন্তু গাছটা কাটা পড়ায় শকুনেরা হারিয়ে যায়। তার আবার বছর পাঁচেক আগে শকুনের দেখা পান। এলাকারই এক বাসিন্দার বাড়িতে একটা শকুন পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু তাঁর সবচেয়ে ভাল অভিজ্ঞতা হয় গত বছরে। ঝাড়গ্রামের কাঁকড়াঝোর এলাকায় আকাশে এক দল শকুন উড়তে দেখেন। উড়তে উড়তে দলটি ঝাড়খণ্ডের দিকে চলে যায়। তিনি ছবি তোলার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সফল হননি। অভীকও মানছেন, ঝাড়গ্রামে শকুনের সংখ্যা বেশ কমে গিয়েছে।

কিন্তু কেন কমে গিয়েছে। একটা কারণের কথা তো সবচেয়ে বেশি চর্চিত। গবাদি পশুকে খাওয়ানো এক ধরনের ওষুধের কারণে অসুস্থ হয়ে মারা যায় শকুন। অন্য কারণও রয়েছে। ঝাড়গ্রামে পাখি নিয়ে চর্চা করেন বিশ্বরূপ মণ্ডল। তিনি বললেন, ‘‘শকুনেরা মূলত গরু বা অন্যান্য মৃত পশুর মাংস এরা খেয়ে থাকে। আর এখানেই এদের খাদ্য সংকট দেখা দিচ্ছে। বয়সজনিত কারণে গরু মরার আগেই তাদের বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। আর বনের শুয়োর, হরিণ বা এ জাতীয় পশুর সংখ্যা মারাত্মক ভাবে কমে যাওয়ায় এদের খাদ্যের অভাব এখানে চরম। এ ছাড়া সারা বিশ্বেই শকুনের সংখ্যা মারাত্মক কমে গিয়েছে।’’ সুমনও বললেন, ‘‘মূলত খাদ্যের অভাবেই শকুন আর এই অঞ্চলে তেমন আসে না বলে মনে হয়।’’

ঝাড়গ্রামের জঙ্গলমহল জুলজিক্যাল পার্কে রয়েছে একটি শকুন। শকুনটি অবশ্য পশ্চিম মেদিনীপুর বন বিভাগের বাঘাশোল বিট থেকে বছর চারেক আগে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়েছিল। শকুন নিয়ে দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে তেমন কোনও উদ্যোগ এখনও পর্যন্ত চোখে পড়েনি অবশ্য।

তথ্য সহায়তা: বরুণ দে, কিংশুক গুপ্ত

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Vultures West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE