Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বন্ধুত্বের কারণ

অনুমান করা চলে, সমরূপ কারণেই বেজিংয়ের প্রতি যত গর্জাইতেছে, তত বর্ষাইতেছে না ট্রাম্প প্রশাসন। টেলিকম সংস্থাটির বিরুদ্ধে তাহাদের মেধাসম্পত্তি হরণের অভিযোগ করিয়া তাহাকে কালো তালিকাভুক্ত করিয়াছিল আমেরিকা।

ছবি এপি।

ছবি এপি।

শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

চলতি মাসের গোড়ায় ক্রেমলিনে গিয়া রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ‘প্রিয় বন্ধু’ আখ্যায় ভূষিত করিয়াছিলেন চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং। উক্ত সফরে শি-র সামান্য বক্তব্যও জরুরি, বন্ধুত্বের প্রকাশ ততোধিক জরুরি, কারণ ইহার প্রেক্ষাপট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহিত ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যযুদ্ধ তথা স্নায়ুযুদ্ধ। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, চিন ও রাশিয়াকে একঘরে করিয়া দিবার যে অভিপ্রায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছিল, তাহারই প্রতিক্রিয়ায় এখন দুই দেশ একযোগে ‘অভিন্ন শত্রু’কে বিঁধিতেছে। ট্রাম্প-নীতির প্রতিক্রিয়ায় দু‌ই বৃহৎ শক্তি নিকটবর্তী হইলে বিশ্বের রাজনীতি ও অর্থনীতিতেও তাহার প্রভাব পড়িবে। লক্ষণীয়, মস্কো সফরে নূতন বাণিজ্য চুক্তির ভেলা ভাসিয়াছে। দুই দেশের বৃহৎ বাণিজ্য সংস্থা সহযোগিতার চুক্তি স্বাক্ষর করিয়াছে। সর্বাপেক্ষা উজ্জ্বল নামটি চিনের এক টেলিকম সংস্থা, যাহা সম্প্রতি আমেরিকার নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক বলিয়া চিহ্নিত হইয়াছে, তাহা অগ্রগণ্য রুশ টেলিকম সংস্থার সহিত আবদ্ধ হইয়াছে। স্পষ্টতই, চিন ও রাশিয়াকে পরস্পরের কাছে টানিতেছে অর্থনীতি।

অনুমান করা চলে, সমরূপ কারণেই বেজিংয়ের প্রতি যত গর্জাইতেছে, তত বর্ষাইতেছে না ট্রাম্প প্রশাসন। টেলিকম সংস্থাটির বিরুদ্ধে তাহাদের মেধাসম্পত্তি হরণের অভিযোগ করিয়া তাহাকে কালো তালিকাভুক্ত করিয়াছিল আমেরিকা। ইহার ফলে সংস্থাটির সহিত মার্কিন সংস্থাগুলি বাণিজ্য করিতে পারিবে না। আপন মিত্রশক্তিগুলির উপরেও আমেরিকার চাপ আসিতেছে। কিন্তু, শেষ অবধি মার্কিন সচিব স্টিভেন মিউচিন জানাইয়াছেন, বাণিজ্য সংক্রান্ত আলোচনায় অগ্রগতি ঘটিলে নিষেধাজ্ঞা নমনীয় হইতে পারে। বস্তুত, বৎসরাধিক কাল ধরিয়া চিনের সহিত বাণিজ্য যুদ্ধ চালাইলেও বাণিজ্য ঘাটতির কথা সম্যক জানে ওয়াশিংটন ডিসি। জানে, আপন স্বার্থেই চিনের সহিত অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখিতে তাহারা বাধ্য। অপর পক্ষে, আমেরিকা-রাশিয়া দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কও বর্তমানে মধুর নহে। সম্প্রতি প্রশান্ত মহাসাগরে দুই দেশের রণতরীর অতি সন্নিকটে আসিয়া পড়া এবং সংঘর্ষ পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় চাপানউতোর চলিতেছে। তবু দুই শত্রুই চিন নামক সাধারণ মিত্রের সহিত বাণিজ্যে আগ্রহী।

সতর্ক পদক্ষেপ করিতেছে ভারতও। চলতি মাসে বিশকেক-এ এসসিও গোষ্ঠীর রাষ্ট্রগুলির শীর্ষ সম্মেলনে চিন এবং রাশিয়া, উভয়ের সহিত পৃথক পৃথক বৈঠক করিয়া দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ঝালাইয়া লন নরেন্দ্র মোদী। পুতিন কিংবা শি-র সহিত বিস্তারে কথা না হইলেও বাণিজ্যিক ও কৌশলগত মৈত্রী স্থাপন করাই যে নয়াদিল্লির উদ্দেশ্য, তাহা স্পষ্ট, কারণ বৎসরভর আদান-প্রদানের রূপরেখাটি স্থির হইয়াছে। ইতিপূর্বে আমেরিকা, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সহিত চতুর্দেশীয় গোষ্ঠীর বৈঠক সারিয়াছে ভারত। তখনও চিনকে চটাইয়া একটি শব্দ উচ্চারণ করে নাই বিদেশ মন্ত্রক। সম্ভবত আগামী দিনে বেজিংয়ের সহিত অসংখ্য কর্মসূচির দিকে লক্ষ্য রাখিয়াই সূচনায় সুর নরম রাখিতেছেন এস জয়শঙ্কর। বাস্তব বলিতেছে, চিনকে লইয়া রাজনৈতিক ভাবে পৃথক পৃথক সমস্যায় জর্জরিত আমেরিকা, রাশিয়া, ভারত। কিন্তু, অর্থনীতির ন্যায় বালাই আর নাই। ফলে, যে অসন্তোষই থাকুক, সকল পথই শেষাবধি বেজিংয়ে মিলিতেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

China Russia Xi Jinping Vladimir Putin
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE