Advertisement
E-Paper

নির্যাতনের পাঠ

ছাত্রী আন্দোলনের উপর পুলিশবাহিনী বার বার যে ভাবে ঝাঁপাইয়া পড়ে, তাহাতে সংবিধান, আইন, সবই প্রহসনে পরিণত হয়। মেয়েদের জামা ছিঁড়িয়া, চুল টানিয়া গাড়িতে তুলিবার যে দৃশ্যটি রাজপথের উপর নির্মাণ করা হয়, তাহা সাবেকি ভারতীয় পুরুষতন্ত্রের পরিচিত দৃশ্য। তাহার সহিত ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষা’ নামক কর্তব্যটির সম্পর্ক নাই।

শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৮ ০০:১৭
প্রতিবাদ: হস্টেলের দাবিতে বিক্ষোভে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র।

প্রতিবাদ: হস্টেলের দাবিতে বিক্ষোভে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র।

হস্টেল দাবি করিয়া পুলিশের হাতে প্রহৃত হইলেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা। আর বিহারে স্কুলছাত্রীদের হস্টেলে প্রবেশ করিয়া তাহাদের মাথা ফাটাইয়া গেল দুর্বৃত্তেরা। যে দেশের সরকার ‘বেটি বঁচাও, বেটি পঢ়াও’ ডাক দিয়াছে, সেখানে ইহাই প্রত্যাশিত বটে। পঠনরত কন্যাদের ন্যূনতম সুরক্ষা দিবার ক্ষমতা নাই প্রশাসনের। শিক্ষার অধিকারের মধ্যে কি স্কুল বা ছাত্রী আবাসে মেয়েদের সুরক্ষিত থাকিবার অধিকার পড়ে না? যাহারা পড়িতে গিয়া নিয়ত আক্রান্ত হয়, তাহারা পড়াশোনা করিবে কী রূপে? বালিকা ও তরুণীদের নিরাপত্তার প্রতি রাষ্ট্রের এই উদাসীনতা দেখাইয়া দেয়, শিক্ষাদানের অঙ্গীকার করা যত সহজ, তাহার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা তত সহজ নহে। প্রথমত, শিক্ষালাভ করিতে বাহির হইতে হইবে। আর ঘরের বাহিরে যে বিশ্ব, তাহাকে মেয়েদের জন্য কী রূপে নিরাপদ করিয়া তোলা যায়, এই ‘শিক্ষা’ নেতা-মন্ত্রী, আমলা-সান্ত্রিরা আজও পান নাই। বিহারের ঘটনাটিতেই তাহা স্পষ্ট। সংবাদে প্রকাশ, সুপৌল জেলার কস্তুরবা আবাসিক বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা প্রতি দিনই যৌন হয়রানির শিকার হইতেছিল। তাহাদের প্রতি যাহারা রোজ কটূক্তি ছুড়িয়া দেয়, অপশব্দ লিখিয়া রাখে, এত দিনের মধ্যে তাহাদের নিবৃত্ত করিবার চেষ্টা কেহ করে নাই। এই চিত্র গোটা দেশে পরিচিত। স্কুল-কলেজের পথে প্রতি দিন কিছু পরিচিত দুর্বৃত্ত নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়াইয়া ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করিয়া থাকে। পুলিশ-প্রশাসন দেখিয়াও দেখে না, তাহাদের নিবৃত্ত করিবার কোনও চেষ্টাই করে না। ছাত্রীরা অতিষ্ঠ হইয়া প্রতিবাদ করিলে তাহাদেরই উল্টে মারধর খাইতে হয়। ত্রিবেণীগঞ্জের হস্টেলে দুর্বৃত্তদের হানায় পঞ্চান্ন জন ছাত্রী আহত হইয়াছেন, বারো জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

দিল্লিতে পুলিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভরত ছাত্রীদের শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠিয়াছে। মার্চ মাসে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভেও মর্যাদাহানির অভিযোগ উঠিয়াছিল। হস্টেলের দাবি সঙ্গত, বিক্ষোভের কর্মসূচিও পুলিশ-প্রশাসনের অজানা নহে। তৎসত্ত্বেও যথেষ্ট মহিলা পুলিশ ছিল না। আন্দোলন নিয়ন্ত্রণের এই কি উপায়? নিরস্ত্র সমাবেশের অধিকার দিয়াছে সংবিধান, মহিলাদের মর্যাদারক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করিবার নির্দেশ দিয়াছে আইন। কিন্তু ছাত্রী আন্দোলনের উপর পুলিশবাহিনী বার বার যে ভাবে ঝাঁপাইয়া পড়ে, তাহাতে সংবিধান, আইন, সবই প্রহসনে পরিণত হয়। মেয়েদের জামা ছিঁড়িয়া, চুল টানিয়া গাড়িতে তুলিবার যে দৃশ্যটি রাজপথের উপর নির্মাণ করা হয়, তাহা সাবেকি ভারতীয় পুরুষতন্ত্রের পরিচিত দৃশ্য। তাহার সহিত ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষা’ নামক কর্তব্যটির সম্পর্ক নাই।

নগ্ন হিংসা ছাড়া নীরব উপেক্ষা মেয়েদের উপর নির্যাতনের আর এক পথ। তাহার নিদর্শন মিলিল লখনউ-এর বিজ্ঞানমেলায়। মহিলা বিজ্ঞানীরা দাবি করিয়াছেন, স্কুল-কলেজ, পরিবার ও সমাজ, সর্বত্র বিজ্ঞান পড়িতে উৎসাহ দিবার পরিবর্তে মেয়েদের নিয়ত নিরুদ্যম করা হয়। বাহিরে নিরাপত্তাহীনতা, ঘরে গৃহস্থালির কাজ, এই দুই চাপের মধ্যে ভারতীয় মহিলাবিজ্ঞানীদের পক্ষে উদ্ভাবনের কাজে মনোনিবেশ করা দুঃসাধ্য। অস্যার্থ, রাষ্ট্র একই সঙ্গে মেয়েদের সক্ষমতার বাণী শুনাইতেছে, এবং তাহাদের নির্যাতন ও বঞ্চনার ব্যবস্থায় নীরব সম্মতি দিতেছে। শিক্ষা বটে।

Women Right Hostel Demand Women Enlightment
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy