Advertisement
E-Paper

অস্ত্রাগার

পশ্চিমবঙ্গ একটি ক্ষুদ্র রাজ্য, না এক বিপুল, বিস্তীর্ণ অস্ত্রাগার? অনুমান করা সহজ যে, পাড়ুইয়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মজুত বোমার ভাণ্ডারটি সেই অস্ত্রাগারের অংশমাত্র। ইহাও অতি স্পষ্ট যে, এক দিনে ইহা তৈয়ারি হয় নাই। বোমা, পাইপগান আদি হাতিয়ার নির্মাণের এই ক্ষুদ্রশিল্প এবং অন্যান্য রাজ্য হইতে অস্ত্রশস্ত্র আমদানির বৃহৎ বাণিজ্য পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘদিন যাবৎ বিকশিত হইয়া আসিতেছে।

শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০১

পশ্চিমবঙ্গ একটি ক্ষুদ্র রাজ্য, না এক বিপুল, বিস্তীর্ণ অস্ত্রাগার? অনুমান করা সহজ যে, পাড়ুইয়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মজুত বোমার ভাণ্ডারটি সেই অস্ত্রাগারের অংশমাত্র। ইহাও অতি স্পষ্ট যে, এক দিনে ইহা তৈয়ারি হয় নাই। বোমা, পাইপগান আদি হাতিয়ার নির্মাণের এই ক্ষুদ্রশিল্প এবং অন্যান্য রাজ্য হইতে অস্ত্রশস্ত্র আমদানির বৃহৎ বাণিজ্য পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘদিন যাবৎ বিকশিত হইয়া আসিতেছে। বঙ্গভূমিতে এই আয়ুধস্রোত আনয়নের পিছনে বামপন্থীদের ভূমিকা যথার্থ ঐতিহাসিক, এই বিষয়ে বামফ্রন্ট সরকার ভগীরথের ভূমিকা দাবি করিতে পারে। মহামতি জ্যোতি বসু বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যদের আমলেই রাজ্য জুড়িয়া এই অস্ত্রের উচ্চফলনশীল বীজ রোপিত হইয়াছে, সুফসলও উঠিয়াছে। বামফ্রন্ট আমলে সেই সকল অস্ত্র ব্যবহারের অগণিত কাহিনি পুরানো সংবাদপত্রের পৃষ্ঠা অথবা নাগরিকদের স্মৃতির পাতা উলটাইলেই উঠিয়া আসিবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই জমানা পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়াছিলেন। প্রতিশ্রুতি তিনি রাখিয়াছেন বটে, পূর্ববর্তী আমলে অস্ত্রশিল্পের বিকাশে যেটুকু বা নিয়ন্ত্রণ ছিল, সেই অস্ত্রের প্রয়োগে যেটুকু বা সংযম ছিল, তাঁহার রাজত্বে সকলই মিলাইল স্বপনপ্রায়। বামফ্রন্ট আমলে নেতারা দলীয় বাহুবলীদের অস্ত্রপ্রয়োগের নির্দেশ দিতেন কিঞ্চিৎ আড়ালে, তৃণমূল কংগ্রেস আমলে শাসক দলের নেতারা জনসভায় দাঁড়াইয়া পুলিশকে বোমা মারিবার আদেশ দিয়া থাকেন। পরিবর্তন নহে?

অস্ত্র উদ্ধারের অভিযানে গিয়া পুলিশ অফিসার আক্রান্ত এবং আহত হইতেছেন, ইহার তাৎপর্যও অপরিসীম। পশ্চিমবঙ্গে অস্ত্র উদ্ধারের প্রয়োজন অতীতেও বহু বার বহু উপলক্ষে বোঝা গিয়াছে। প্রাক্নির্বাচনী সংঘর্ষের মরসুমে হোক, নন্দীগ্রাম ‘পুনর্দখল’-এর লগ্নেই হোক, এই পত্রিকার এই স্তম্ভেই বারংবার তৎকালীন রাজ্য প্রশাসনকে বলা হইয়াছে, অস্ত্রের দল বা গোষ্ঠী বিচার করিবেন না, রাজ্য জুড়িয়া কঠোর এবং অনুপুঙ্খ তল্লাশি চালাইয়া সমস্ত বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার করিতে পুলিশকে নির্দেশ দিন। প্রশাসনের কর্তারা কর্ণপাত করেন নাই। ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থ তাঁহাদের পথ রোধ করিয়াছে। দলের ছেলেদের— মার্জনা করিবেন, দলীয় ‘সম্পদ’দের— হাতের অস্ত্র হাতছাড়া হউক, ইহা তাঁহারা চাহেন নাই। আজ তাঁহাদের সম্পদরা অস্ত্রশস্ত্র সহকারেই তৃণমূল কংগ্রেস বা বিজেপির সম্পদ হইয়া গিয়াছে। অস্ত্রের গোত্র বিচার করিতে গেলে ইহাই অনিবার্য। পাড়ুইয়ের ঘটনায় আক্রমণকারী হিসাবে অভিযুক্ত হইয়াছে সিপিআইএম, বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেস, তিনটি দলই। দলবদলের সাম্প্রতিক যথেচ্ছাচারের প্রেক্ষিতে ইহাই স্বাভাবিক।

কিন্তু তাহার পরেও শাসক দলের বিশেষ দায়িত্ব থাকিয়া যায়, কারণ তাহারা শাসক দল। বামফ্রন্ট আমলেও ইহা সত্য ছিল, তৃণমূল কংগ্রেস আমলেও ইহা সত্য। শাসক দলের হাতে ক্ষমতা থাকে, প্রশাসনিক ক্ষমতা। সেই ক্ষমতার সঙ্গে সঙ্গে আসে দায়িত্ব। নিরপেক্ষ প্রশাসন সরবরাহের দায়িত্ব। যে প্রশাসন বলিবে: অস্ত্র, যে দলেরই হোক, ভয়ানক। এবং, সেই নীতি অনুসরণ করিয়া দুষ্কৃতী দমনে তৎপর হইবে। বেআইনি অস্ত্র এই রাজ্যে পরিব্যাপ্ত দুরাচারের ধারক, বাহক এবং প্রতীক। পাড়ুইয়ের ঘটনার পরে যদি শাসকদের বোধোদয় হইয়া থাকে, তবে রাজ্য জুড়িয়া বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারের একটি যথার্থ তল্লাশি অভিযান শুরু এবং শেষ করা তাঁহাদের অবশ্যকর্তব্য। পুলিশ প্রশাসন যাঁহারা চালাইতেছেন, তাঁহাদের বোঝা দরকার, বিষবৃক্ষকে প্রশ্রয় দিয়া চলিলে এক সময় নিজেদেরও সেই গরলের শিকার হইতে হয়। পশ্চিমবঙ্গে বিষবৃক্ষ নির্মূল করার কাজ অত্যন্ত কঠিন হইয়াছে, কারণ দীর্ঘদিনের প্রশাসনিক প্রশ্রয়ে তাহার শিকড় আজ ব্যাপক এবং গভীর।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy