Advertisement
E-Paper

অসংযম

অতিরিক্ত আগ্রাসী হইলে সহজ খেলাও কঠিন হইয়া যাইতে পারে। ক্রিকেটেও, রাজনীতিতেও। শ্রীলঙ্কায় নূতন সরকার কায়েম হওয়ার পর তামিল-প্রধান উত্তর প্রদেশের নির্বাচিত পরিষদ তামিল প্রশ্নটিকে জাতীয় এজেন্ডার শীর্ষে তুলিয়া আনিয়াছে। এক আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাশ করিয়া রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কমিশনকে গত ছয় দশক ধরিয়া দ্বীপরাষ্ট্রে তামিলদের বিরুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যার তদন্ত করার এবং তাহাতে দোষীদের আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে বিচার ও শাস্তির দাবি তুলিয়াছেন পরিষদের মুখ্যমন্ত্রী সি ভি বিঘ্নেশ্বরণ।

শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:০১

অতিরিক্ত আগ্রাসী হইলে সহজ খেলাও কঠিন হইয়া যাইতে পারে। ক্রিকেটেও, রাজনীতিতেও। শ্রীলঙ্কায় নূতন সরকার কায়েম হওয়ার পর তামিল-প্রধান উত্তর প্রদেশের নির্বাচিত পরিষদ তামিল প্রশ্নটিকে জাতীয় এজেন্ডার শীর্ষে তুলিয়া আনিয়াছে। এক আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাশ করিয়া রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কমিশনকে গত ছয় দশক ধরিয়া দ্বীপরাষ্ট্রে তামিলদের বিরুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যার তদন্ত করার এবং তাহাতে দোষীদের আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে বিচার ও শাস্তির দাবি তুলিয়াছেন পরিষদের মুখ্যমন্ত্রী সি ভি বিঘ্নেশ্বরণ। স্বভাবতই নূতন প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপাল সিরিসেনার সরকার এই ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়িতে পারে, যাহা ভবিষ্যতে দ্বীপবাসী তামিলদের সুবিচার প্রাপ্তির পথটাই বিড়ম্বিত করিবে। বিশেষত এমন একটা সময় তামিল প্রাদেশিক পরিষদ এই প্রস্তাব লইয়াছে, যখন শ্রীলঙ্কার মার্কিন সফররত বিদেশমন্ত্রী রাষ্ট্রপুঞ্জের কাছে গৃহযুদ্ধের অন্তিম পর্যায়ে অসামরিক তামিলদের হত্যা ও নির্যাতনের তদন্ত-রিপোর্ট প্রকাশ কিছু কাল স্থগিত রাখার আর্জি জানাইয়াছেন।

এ কথা সত্য যে, ওই যুদ্ধশেষের দিনগুলি এবং পরবর্তী কয়েকটি বছর শ্রীলঙ্কার তামিলদের জীবনে দুঃস্বপ্ন ঘনাইয়া আনিয়াছে। কিন্তু সে জন্য যিনি দায়ী, সেই মহিন্দা রাজাপক্ষে এক্ষণে পরাস্ত, ক্ষমতাচ্যুত। তাঁহার স্থলাভিষিক্ত মৈত্রীপাল সিরিসেনা কেবল তামিল ভোটারদের জনাদেশই পান নাই, জয়ী হইয়াই তিনি সেনাবাহিনীর অপকর্মের এবং তামিলদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করার আশ্বাস দিয়াছেন। মৈত্রীপালের সরকার তামিলদের ক্ষতে প্রলেপ দিতে আন্তরিক সদিচ্ছার প্রমাণ দিয়াছে। এই অবস্থায় আগ বাড়াইয়া আন্তর্জাতিক মঞ্চে তামিল প্রশ্নে এই সরকারকে বিব্রত করা কি খুব সময়োচিত কাজ হইতেছে? নূতন সরকারের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টির জন্যই বিঘ্নেশ্বরণ হয়তো সহসা এমন একটি প্রস্তাব আনুষ্ঠানিক ভাবে পাশ করাইয়াছেন। কিন্তু নূতন সরকারের কাছে অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি প্রশ্নে এ ধরনের চাপ সৃষ্টি বিপরীত ফল দিবে না তো?

মৈত্রীপাল তামিলদের ভোট পাইলেও প্রধানত সিংহলিদের ভোটেই রাজাপক্ষেকে পর্যুদস্ত করিতে পারিয়াছেন। সিংহলিদের জাতীয়তাবাদী, দক্ষিণপন্থী অংশটি তামিলদের প্রতি কৃত অপরাধের জন্য অনুতাপ বোধ করে না। বৌদ্ধ শ্রমণদের মধ্যেও তামিলদের জন্য কোনও সহানুভূতি অবশিষ্ট নাই। প্রধানত কয়েক দশক ব্যাপী এলটিটিই তাণ্ডব ও সন্ত্রাস, সিংহলি রাষ্ট্রনায়কদের গুপ্তহত্যা, নিরস্ত্র সিংহলি মানুষদের উপর বিস্ফোরক লইয়া জঙ্গি হামলাই তাহার কারণ। বিঘ্নেশ্বরণের প্রস্তাবে কিন্তু এলটিটিই-র সন্ত্রাস ও নির্বিচার সিংহলি হত্যার উল্লেখ নাই। স্পষ্টতই, তিনি বিশ্বমঞ্চে তামিল প্রশ্নটিকে তুলিয়া ধরার রাজনীতিই করিতেছেন। করিতেই পারেন। কিন্তু কলম্বো যখন জাফ্নার সহিত বোঝাপড়ায় উপনীত হওয়ার সদিচ্ছা দেখাইতেছে, তখন ধৈর্য ও সংযম দেখানোই বুদ্ধির পরিচায়ক হইত। আগামী সপ্তাহেই প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপাল ভারত সফরে আসিতেছেন। সেখানে তাঁহার সহিত তামিল স্বশাসনের ব্যাপ্তি ও সীমা লইয়া ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সহিত আলোচনা হওয়ার কথা। এখন সেই আলোচনার মঞ্চেও তামিলদের পক্ষে নয়াদিল্লির সওয়াল খানিকটা বেসুর লাগিতে পারে।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy