Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয় ১

আর কত হারিবেন

মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানায় কংগ্রেস হারিয়াছে, ইহা কোনও সংবাদই নয়। সংবাদ আসলে, মহারাষ্ট্র কিংবা হরিয়ানায় কংগ্রেস ভোটে লড়েই নাই। আগে হইতে হারিয়া বসিয়া থাকিলে আর লড়িবার দরকার হয় না। কংগ্রেস সেই সিদ্ধান্ত লইয়াছিল। হারিবার আগেই প্রমাণ করিয়াছে যে তাহারা আসলে খেলাতেই ছিল না। ফলে এই দুই নির্বাচনের ফলাফল বাহির হইবার পর নূতন করিয়া কংগ্রেসের মধ্যে আত্মসন্ধান, আত্মসংশোধন ইত্যাদি শুরু হইবে, এমন দুরাশা অর্থহীন। যাহা ঘটে নাই, তাহার জন্য অনুতাপই বা কেন, আর সংশোধনই বা কেন।

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০৩
Share: Save:

মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানায় কংগ্রেস হারিয়াছে, ইহা কোনও সংবাদই নয়। সংবাদ আসলে, মহারাষ্ট্র কিংবা হরিয়ানায় কংগ্রেস ভোটে লড়েই নাই। আগে হইতে হারিয়া বসিয়া থাকিলে আর লড়িবার দরকার হয় না। কংগ্রেস সেই সিদ্ধান্ত লইয়াছিল। হারিবার আগেই প্রমাণ করিয়াছে যে তাহারা আসলে খেলাতেই ছিল না। ফলে এই দুই নির্বাচনের ফলাফল বাহির হইবার পর নূতন করিয়া কংগ্রেসের মধ্যে আত্মসন্ধান, আত্মসংশোধন ইত্যাদি শুরু হইবে, এমন দুরাশা অর্থহীন। যাহা ঘটে নাই, তাহার জন্য অনুতাপই বা কেন, আর সংশোধনই বা কেন। বরং কংগ্রেসের জন্য অন্য এক রকম ভাবনার সময় আসিয়াছে। একশত ঊনত্রিশ বৎসর পর ভারতের রাজনীতিতে তাঁহারা সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক হইয়া পড়িয়াছেন, এত বড় সংকট-মুহূর্ত সওয়াশো বৎসরে তাঁহাদের প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞতা করে নাই, কত সংঘর্ষ কত জটিলতা কত ধাক্কা সহিতে হইয়াছে, কিন্তু সম্পূর্ণত এলেবেলে হইয়া যাইবার এই অনাস্বাদিত ভূমিকায় অবতীর্ণ হইবার সরল সত্যটি সহজে গ্রহণ করিয়া তাঁহারা বরং ভাবুন, এই অস্তাচলপানে অনলস যাত্রার রূপরেখাটি কেমন ভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। দলের নেতা-নেত্রী মাতা-পুত্র খামখা অন্যান্য বিষয়ে মাথা না ঘামাইয়া এই ব্যাখ্যাটির দিকেই আপাতত মন দিন। তাহাতে তাঁহাদের অবস্থার ইতরবিশেষ হইবে না, তবে কি না, কংগ্রেসের (হয়তো মরণোত্তর) ইতিহাসের একটি অধ্যায়ের কাজ অন্তত শুরু হইয়া থাকিবে।

দলের অন্দরে নাকি নির্বাচনের ফলাফলের পর নূতন করিয়া নেতা ও নেত্রীর দিকে প্রশ্ন ও সংশয়ের বাণ ধাবিত হইতেছে। মহারাষ্ট্রে কয়েক বৎসর যাবৎ দলের ছোট নেতারা বলিয়া আসিতেছেন, সমস্যা গভীর, সমাধান জরুরি। বড় নেতারা কান দেন নাই। রাহুল গাঁধী এমনও বলিয়াছেন যে পনেরো বৎসর রাজ্যপাটের পর পরাজয় ঘটিতেই পারে। তাঁহার এই সারল্যে ও ঔদাসীন্যে মরাঠাভূমির কংগ্রেস হতচকিত হইয়া জানিতে চাহিয়াছে, তবে সেই যুক্তিতে গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ বা ওড়িশায় কেন ফল শাসক দলের বিপরীতে গেল না। নীরবতা শুধু হিরণ্ময় হইয়াছে। ইতিমধ্যে চোখ এড়ায় নাই যে, নরেন্দ্র মোদী ও তাঁহার যোগ্য সেনাপতি অমিত শাহ যখন নির্বাচনী যুদ্ধে কোমর বাঁধিয়া নামিয়াছেন, রাহুল গাঁধী কিন্তু অবিচলিত, অনুদ্বিগ্ন ও নিশ্চেষ্ট।

সুতরাং ‘পরিবার’তন্ত্রের আগল না ঘুচিলে যে আশা নাই, এ আর এখন শুধু বিক্ষুব্ধ কংগ্রেসিদের কথা নয়, দলের নিবেদিতপ্রাণ কর্মী ও নেতারাও একমত। প্রশ্ন হইল, পরিবারকে পরিত্যাগেই কি আলোর পথের আশা? লক্ষণীয়, যে রাজ্যে হাইকমান্ড মাথা ঘামান নাই সেখানেও অবস্থা যতটা মন্দ, যে রাজ্যে নেতৃত্বে রদবদল হইয়াছে, সেখানেও তথৈবচ। বিহারে রাহুল গাঁধীর নিজহস্তে নির্বাচিত নেতার বিরুদ্ধে রাজ্যের প্রতি স্তরে প্রতি অঞ্চলে অভিযোগের পাহাড়। পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেসের শীর্ষনেতা এখনও রাজ্য-রাজনীতিনাট্যে পার্শ্বচরিত্রের অধিকারটুকু পাইবার জন্য দিবারাত্র প্রয়াসী। এবং সেই সুযোগে, তৎসহ সূর্যকান্ত মিশ্র ও তাঁহার সহকর্মীদের অতুলনীয় নিষ্ক্রিয়তার কল্যাণে, শাসক তৃণমূলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হইয়া উঠিতে পশ্চিমবঙ্গে এতকাল কার্যত অস্তিত্বহীন বিজেপিকে কুটোটিও নাড়াইতে হইতেছে না। মহারাষ্ট্রের মতো যে রাজ্যে কংগ্রেসের সরকার ছিল, সেখানে তাহারা ধুইয়া-মুছিয়া সাফ। ওড়িশার মতো যে রাজ্যে কংগ্রেস ২০০০ সালের পর ক্ষমতার মুখও দেখে নাই, সেখানেও প্রতি নির্বাচনে তাহাদের আসন কমিতে কমিতে তলানিতে। ঠিক ২০০৪ সালে রাহুল গাঁধী কংগ্রেসের মুখ্যমঞ্চে পা রাখিয়াছিলেন। এক দশক আত্মোপলব্ধির যথেষ্ট উপযুক্ত সময়কাল। এ বার সেই উপলব্ধির আলোক তাঁহার ও তাঁহার দলের সম্মুখে উদ্ভাসিত হইবার কোনও আশা আছে কি?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

editorial anandabazar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE