Advertisement
E-Paper

ইন্দিরা গাঁধীর উপাসক

ইন্দিরা গাঁধী ইতিহাসমাত্র, কিন্তু তাঁহার জমানার ভূতটি দুর্মর। ইউপিএ জমানায় কপিল সিব্বলাদিরা সেই ভূতের বাহক ছিলেন। নরেন্দ্র মোদীও সেই পথে হাঁটেন কি না, দেখিবার। ফ্লিপকার্ট নামক ই-রিটেল সংস্থা, যে গোত্রের সংস্থাগুলির নাম হইয়াছে ই-টেল, সম্প্রতি এক অভূতপূর্ব ছাড়ের ব্যবস্থা করিয়াছিল।

শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০১

ইন্দিরা গাঁধী ইতিহাসমাত্র, কিন্তু তাঁহার জমানার ভূতটি দুর্মর। ইউপিএ জমানায় কপিল সিব্বলাদিরা সেই ভূতের বাহক ছিলেন। নরেন্দ্র মোদীও সেই পথে হাঁটেন কি না, দেখিবার। ফ্লিপকার্ট নামক ই-রিটেল সংস্থা, যে গোত্রের সংস্থাগুলির নাম হইয়াছে ই-টেল, সম্প্রতি এক অভূতপূর্ব ছাড়ের ব্যবস্থা করিয়াছিল। মাত্র এক দিনে সংস্থাটি ৬০০ কোটি টাকার অধিক ব্যবসা করিয়াছে। ই-টেল তো বটেই, ভারতের প্রথাগত রিটেলও কখনও এক দিনে এই মাপের ব্যবসা করিতে পারে নাই। ফ্লিপকার্টের ধাক্কাটি যেখানে লাগিবার, লাগিয়াছে। এত দিন সংগঠিত রিটেলের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠিত, আজ সংগঠিত রিটেলের মুখেই সেই অভিযোগের সুর— নিজেদের আর্থিক ক্ষতি স্বীকার করিয়াও অস্বাভাবিক রকম কম দামে পণ্য বেচিয়া ফ্লিপকার্টের ন্যায় ই-টেল সংস্থাগুলি বাজার দখল করিতে চাহিতেছে। তাহারা কম্পিটিশন কমিশনে নালিশ ঠুকিয়াছে। যাহা নিতান্তই বাণিজ্যিক বিরোধ ছিল, তাহাতে অন্য রং লাগাইয়াছেন কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। তিনি বলিয়াছেন, সরকার ঘটনাটি খতাইয়া দেখিতেছে। কোন সংস্থা কোন দামে পণ্য বেচিবে, সরকার তাহাও দেখিতে আরম্ভ করিলে ইন্দিরা গাঁধীর প্রত্যাবর্তনের আর কিছু বাকি থাকে না। যাঁহার নিকট ভারতের মার্গারেট থ্যাচার হইবার প্রত্যাশা ছিল, শেষে তিনি ইন্দিরা গাঁধীর উপাসক হইবেন?

ফ্লিপকার্টের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, তাহারা কম মূল্যে পণ্য বেচিতেছে। কেহ সর্বোচ্চ বিক্রয়মূল্যের কম দামে পণ্য বেচিলে তাহাতে আপত্তি করিবার প্রশ্ন উঠে না। কাজটি প্রায় সব রিটেলরই করিয়া থাকে। কেহ ক্রয়মূল্যের কমে পণ্য বেচিলে প্রশ্নটি অপেক্ষাকৃত জটিল। দেশের আইন বলিতেছে, কোনও সংস্থা যদি কোনও একটি বাজারের সিংহভাগ নিয়ন্ত্রণ করে, তবে সেই সংস্থা ক্রয়মূল্যের নীচে সেই পণ্য বেচিতে পারিবে না। ই-টেল সংস্থাগুলি দেশের মোট রিটেল বাণিজ্যের মাত্র এক শতাংশের অধিকারী। কাজেই, তাহারা ‘ডাম্পিং’ করিতে পারিবে, সেই সম্ভাবনা নাই। অতএব, ফ্লিপকার্ট বা অন্য কোনও সংস্থা নিজেদের লোকসান করিয়া কম দামে পণ্য বেচিলে তাহাতে পাড়াপড়শির যেমন আপত্তি করিবার কারণ নাই, তেমনই প্রতিযোগী সংস্থা বা কেন্দ্রীয় সরকারেরও নাই।

ই-টেলের বিরুদ্ধে আরও দুইটি যুক্তি বেশ স্পষ্ট। এক, তাহারা কম দামে পণ্য বেচিয়া খরিদ্দার টানিয়া লইলে প্রথাগত রিটেল মার খাইবে, ফলে সেখানে কর্মসংস্থানের সমস্যা হইবে। এই যুক্তি মানিয়া লইলে অবিলম্বে ভারত হইতে কম্পিউটার বিদায় করিতে হয়। সংগঠিত খুচরা ব্যবসাগুলিও কম্পিউটারের সহগামী হইবে। দ্বিতীয় যুক্তি, ভারতে খুচরা ব্যবসায়ে যখন বিদেশি বিনিয়োগের ছাড়পত্র নাই, তখন ই-টেল সংস্থাগুলিতে বিদেশের টাকা খাটিতেছে। এমন যুক্তির উত্তরে জগদীশ ভগবতী কী বলিবেন, শুনিতে ইচ্ছা হয়। তবে, তিনি যদি কিছু না-ও বলেন, পল স্যামুয়েলসন নামক নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ এই প্রশ্নের একটি মোক্ষম উত্তর দিয়াছিলেন। ১৯৯০-এর দশকের গোড়ায় আমেরিকা জাপানি জুজুতে আক্রান্ত। উত্‌পাদনের খরচ অপেক্ষাও কম দামে পণ্য ‘ডাম্প’ করিয়া জাপানি ব্যবসায়ীরা মার্কিন বাজার দখল করিয়া লইবেন, এই আশঙ্কায় সরকারি হস্তক্ষেপ প্রার্থনা চলিতেছে। স্যামুয়েলসন বলিয়াছিলেন, জাপানি সংস্থাগুলি তো নিজেদের গাঁটের কড়ি খরচ করিয়া কম দামে পণ্য বেচিতেছে না। তাহারা নিশ্চয়ই ভর্তুকি পাইতেছে সম্ভবত রাজকোষ হইতেই। জাপানের সরকার যদি নিজেদের টাকায় মার্কিন নাগরিকদের সস্তায় বৈদ্যুতিন পণ্য জোগায়, তাহাতে মার্কিন সরকার আপত্তি করিবে কেন? সময় ও দেশ বদলাইয়াছে। যুক্তিটি অম্লান। সনাতন ভারতে অতীত কখনও অতীত হয় না।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy