Advertisement
E-Paper

উন্নতির পথ

শ্রীলঙ্কাও এই বত্‌সর আর্থিক বৃদ্ধির হারে চিনকে পিছনে ফেলিয়া দিবে, কথাটি নির্জলা সত্য হইলেও ভারত মহাসাগরের জলে একটি বাড়তি ঢেউ উঠিবে না। তৃণ যতই দ্রুত বাড়ুক, তাহাতে মহীরূহ ঢাকা পড়ে না। ফিলিপিন্স, ভিয়েতনাম বা বাংলাদেশের বৃদ্ধির হার সম্বন্ধেও একই কথা প্রযোজ্য।

শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:০১

শ্রীলঙ্কাও এই বত্‌সর আর্থিক বৃদ্ধির হারে চিনকে পিছনে ফেলিয়া দিবে, কথাটি নির্জলা সত্য হইলেও ভারত মহাসাগরের জলে একটি বাড়তি ঢেউ উঠিবে না। তৃণ যতই দ্রুত বাড়ুক, তাহাতে মহীরূহ ঢাকা পড়ে না। ফিলিপিন্স, ভিয়েতনাম বা বাংলাদেশের বৃদ্ধির হার সম্বন্ধেও একই কথা প্রযোজ্য। বিশ্বের অর্থনৈতিক মানচিত্রে একমাত্র যে দেশটি চিনের সহিত তুলনায় আসিতে পারে, তাহার নাম ভারত। আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার বলিয়াছে, ২০১৬ সালে ভারতীয় অর্থনীতির বৃদ্ধির হার চিনের তুলনায় বেশি হইবে। কিন্তু, জগত্‌সভায় শ্রেষ্ঠ আসন পাইবার সম্ভাবনায় উদ্বেল হইবার পূর্বে দুইটি কথা স্মরণে রাখা বিধেয়। প্রথম, চিনের অর্থনীতির মাপ ভারতের তিন গুণ। অতএব, বৃদ্ধির হারে খানিক আগাইয়া গেলেই চিনকে দশ গোল দেওয়া হইল, এমন সুখস্বপ্ন পরিত্যাজ্য। দ্বিতীয়, ফারাকটি যত্‌সামান্য। অর্থভাণ্ডারের হিসাবে, ২০১৬ ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার ৬.৫ শতাংশ হইবে, চিনের ৬.৩ শতাংশ। চিনের হার ধাক্কা খাইতেছে ঠিকই, কিন্তু ভারতীয় হার যতখানি বাড়িলে আশাবাদী হওয়া যায়, সম্ভাব্য হারটি সেই তুলনায় অনেক কম। কাজেই, চিনকে টপকাইবার সম্ভাবনাটিকে তাহার প্রাপ্য গুরুত্ব দেওয়াই বিধেয়। আত্মহারা হইবার প্রয়োজন নাই।

চিনে আর্থিক সংস্কারের প্রক্রিয়াটি ভারতের দশ বত্‌সর পূর্বে আরম্ভ হইয়াছিল। সেই হিসাবে, ভারত আজ যে পর্যায়ে আছে, চিন দশ বত্‌সর পূর্বে সেখানে ছিল। ২০০৫ সালের চিনের তুলনায় ২০১৫ সালের ভারত কিন্তু সামান্য হইলেও আগাাইয়া আছে। তথ্যটি উত্‌সাহব্যাঞ্জক। কিন্তু, চিনের অভিজ্ঞতা বলিতেছে, গোড়ার বত্‌সরগুলি কার্যত গুরুত্বহীন, কারণ অর্থনীতির উড়ান আরম্ভ হইয়াছিল তাহার পর। চিনকে ছুঁইতে হইলে ভারতেরও তেমনই একটি উড়ান প্রয়োজন, সেখানে আর্থিক বৃদ্ধির হার ধারাবাহিক ভাবে দশ শতাংশের ঊর্ধ্বে থাকিবে। তাহার জন্য ভারতকে নির্মাণক্ষেত্রের দিকে নজর দিতেই হইবে। সংস্কার-পরবর্তী ভারত মূলত পরিষেবা রফতানির উপর নির্ভরশীল ছিল। নির্মাণক্ষেত্রে উত্‌পাদনশীলতা বাড়ানো তুলনায় সহজ। কথাটি ভারতের ক্ষেত্রে আরও বেশি সত্য, কারণ ভারতের উত্‌পাদনশীলতা যথেষ্ট কম। দেশের বাহ্যিক পরিকাঠামোর উন্নতি প্রয়োজন। আর প্রয়োজন সঞ্চয় ও বিনিয়োগের হার বৃদ্ধি। ভারতকে এক দিকে ‘কাপিটাল-আউটপুট রেশিয়ো’ কমাইতে হইবে, আর অন্য দিকে বিনিয়োগ বাড়াইতে হইবে। নরেন্দ্র মোদী যে পথে চলিতেছেন, তাহার অভিমুখ যথার্থ। কিন্তু, গতিবেগ এখনও প্রশ্নাতীত নহে।

এই প্রেক্ষিতে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’-র গুরুত্ব অনস্বীকার্য। তিনি ভারতকে বিশ্বের নির্মাণ-বিনিয়োগের পছন্দের অভিমুখ করিয়া তুলিতে আগ্রহী। চিনকে যদি তাহার খেলায় হারাইতে হয়, তবে ‘ভারতে নির্মাণ’-এর উদ্যোগটিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হইবে। কিন্তু, ভারতে নির্মাণের মুদ্রাটির বিপরীত পার্শ্বে যেন আমদানি-বিমুখতার ছাপ না পড়িয়া যায়। সরকার যেন ভাবিয়া না লয়, ভারতে নির্মাণ করিয়া তাহা বেচিবার জন্য ভারতের বাজারটিকেই ব্যবহার করিতে হইবে, এবং সেই বাজারে প্রতিযোগিতা থাকিলে চলিবে না। আমদানি-বিমুখ আর্থিক নীতির কুফল ভারত অনেক ঠেকিয়া শিখিয়াছে। নেহরু-গাঁধী যুগের এই বদ্ধ অর্থনীতি ভারতীয় শিল্পকে বিশ্ববাজারের অনুপযুক্ত করিয়া তুলিয়াছিল। সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি যেন না হয়। ভারতে নির্মাণ হউক, কিন্তু তাহা বিশ্ববাজারের প্রতিযোগিতার দিকে চোখ রাখিয়া হউক। তাহার জন্য ভারতীয় নির্মাণক্ষেত্রকে কুশলী, উত্‌পাদনশীল এবং উদ্ভাবনী শক্তিসম্পন্ন হইয়া উঠিতে হইবে। চিনের নির্মাণক্ষেত্র বিশ্ববাজার দখল করিয়াছিল তাহার উত্‌পাদনশীলতার জোরেই। লড়াই শুধু এক বত্‌সরের বৃদ্ধির হারের নহে, লড়াই সেরা হইবার।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy