Advertisement
E-Paper

এ বার আসল কাজ

সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের ফলে কয়লা খনি সংক্রান্ত নীতি পরিবর্তনের একটি সুযোগ মিলিয়াছিল, কেন্দ্রীয় সরকার সেই সুযোগ অন্তত অংশত কাজে লাগাইয়াছে। কয়লার ব্লক বণ্টনে দুর্নীতির অভিযোগ বিচার করিয়া সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয় যে, ১৯৯৩ সাল হইতে বণ্টিত দুই শতাধিক ব্লকের প্রায় সব কয়টিই নূতন করিয়া বণ্টন করিতে হইবে।

শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০১

সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের ফলে কয়লা খনি সংক্রান্ত নীতি পরিবর্তনের একটি সুযোগ মিলিয়াছিল, কেন্দ্রীয় সরকার সেই সুযোগ অন্তত অংশত কাজে লাগাইয়াছে। কয়লার ব্লক বণ্টনে দুর্নীতির অভিযোগ বিচার করিয়া সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয় যে, ১৯৯৩ সাল হইতে বণ্টিত দুই শতাধিক ব্লকের প্রায় সব কয়টিই নূতন করিয়া বণ্টন করিতে হইবে। অতঃপর নরেন্দ্র মোদীর সরকার বৈদ্যুতিন নিলামের পথে সেই পুনর্বণ্টনের সিদ্ধান্ত লইয়াছে। এ জন্য প্রয়োজনীয় অর্ডিনান্সও জারি হইয়াছে। সেই অর্ডিনান্স কেবল পুনর্বণ্টনের নূতন নিয়ম নির্ধারণেই ক্ষান্ত থাকে নাই, সংশ্লিষ্ট ব্লকগুলি হইতে তোলা কয়লার ব্যবহার সম্পর্কেও নূতন নীতির পথ খুলিয়া দিয়াছে। বিভিন্ন সংস্থা তাহাদের নিজস্ব প্রয়োজন মিটাইবার জন্য এই ব্লকগুলি পাইয়াছিল। নূতন ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ, ইস্পাত বা সিমেন্টের মতো শিল্পক্ষেত্রে সক্রিয় সংস্থাগুলির প্রয়োজন মিটাইবার পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগে বাজারে কয়লা বিক্রয়ের সুযোগও আছে। ১৯৭৩ সালে প্রণীত কয়লা খনি জাতীয়করণ আইনে ‘নিজস্ব ব্যবহার, বিক্রয় বা অন্য কোনও উদ্দেশ্যে’ খনির কাজ চালাইবার কথা সংযোজন করা হইয়াছে।

সরাসরি বাজারে বিক্রয়ের জন্য কয়লা খনি চালাইবার অধিকার ১৯৭৩ সালেরআইনটিতে রাষ্ট্রায়ত্ত কোল ইন্ডিয়া-র একচেটিয়া অধিকারে আনা হইয়াছিল। তাহা ছিল ইন্দিরা গাঁধীর প্রধানমন্ত্রিত্বে জাতীয়করণের ‘সমাজতান্ত্রিক’ অভিযানের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। নব্বইয়ের দশকে আরব্ধ আর্থিক সংস্কারের পরে চার দশক কাটিয়া গিয়াছে, ‘নিজস্ব ব্যবহার’-এর জন্য কয়লার ব্লক অর্থাৎ বিভিন্ন খনির নির্দিষ্ট অংশ বেসরকারি উদ্যোগীকে দেওয়া হইয়া আসিতেছে, কিন্তু কয়লার বাজারকে খুলিয়া দেওয়া হয় নাই, ফলে নীতিগত ভাবে কোল ইন্ডিয়ার সাম্রাজ্য বহাল রহিয়াছে। নূতন অর্ডিনান্সেও সরাসরি জাতীয়করণের অবসান ঘটে নাই, কিন্তু কিছু ব্লকের ক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থাকে বাজারে বিক্রয়ের অনুমতি দানের সুযোগ রাখা হইয়াছে। বলা চলে, কয়লাখনির বেসরকারিকরণ হয় নাই, কিন্তু তাহার জন্য খিড়কির দরজা খুলিয়া দেওয়া হইয়াছে। নীতি পরিবর্তনের কাজ খিড়কির বদলে সম্মুখের দরজা দিয়া সাধন করাই শ্রেয়। তবে এ কথাও সত্য যে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের প্রেক্ষিতটি এই বিতর্কিত ব্লকগুলির ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ ছিল, সুতরাং সরকারকে আপাতত সেগুলির জন্যই নূতন ব্যবস্থা করিতে হইয়াছে। আশা করা যায়, এই সুযোগে সরকার যে সংস্কারের সংকেত দিয়াছে, অচিরে তাহা অনুসরণ করিয়া বৃহত্তর এবং গভীরতর সংস্কারটি সাধিত হইবে, কয়লাখনি জাতীয়করণের আইনটি এ বার বিসর্জন দেওয়া হইবে।

সে কাজ করিতে চাহিলে প্রধানমন্ত্রী সংসদে ও বৃহত্তর রাজনৈতিক পরিসরে সমালোচনার সম্মুখীন হইবেন, অর্ডিনান্সটির বিরুদ্ধে বামপন্থীরা ইতিমধ্যেই সমাজতান্ত্রিক জেহাদের পূর্বাভাস দিয়াছেন। কিন্তু আর্থিক সংস্কার যে বীরভোগ্য, তাহা নিশ্চয়ই নরেন্দ্র মোদী বিলক্ষণ জানেন। তাঁহার পূর্বসূরি আপন অর্থমন্ত্রিত্বের কালে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর বীরত্বের সুবাদে, সংকটের মুহূর্তকে সংস্কারের মুহূর্তে পরিণত করিয়া ইতিহাস রচনা করিয়াছিলেন। আপন প্রধানমন্ত্রিত্বের কালে নিজে সেই বীরত্বের বিশেষ পরিচয় রাখিতে পারেন নাই, আর্থিক সংস্কারের ক্ষেত্রে তো একেবারেই নয়। মোদীর সম্মুখে তেমন সংকট নাই। কিন্তু সংকটে না পড়িলেও যে সংস্কার করা যায়, তাহা প্রমাণ করিবার সুযোগ আছে। ক্ষমতায় অধিষ্ঠানের পরে চার মাস অতিক্রান্ত। সচল না হইলে লগ্ন বহিয়া যাইবে। রাজনীতিতে মধুচন্দ্রিমা দাম্পত্য অপেক্ষাও চঞ্চলা।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy