Advertisement
E-Paper

কিন্তু সমাজতন্ত্র কেন

রবিশংকর প্রসাদ কি তবে অমিত শাহের সহিত বিতর্কে প্রবৃত্ত হইবেন? কেন্দ্রীয় সরকারের টেলিকমিউনিকেশনস মন্ত্রী বলিয়াছিলেন, ‘সেকুলার’ ও ‘সোশ্যালিস্ট’ শব্দ দুইটি ভারতীয় সংবিধানের আদি রূপে ছিল না, পরবর্তী কালে ১৯৭৬ সালে জরুরি অবস্থার সময়ে সংশোধনীর মাধ্যমেই যুক্ত হইয়াছে, সুতরাং শব্দ দুইটি লইয়া দেশ বিতর্ক করুক, ক্ষতি কী? প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত এক সরকারি বিজ্ঞাপনে এই দুইটি শব্দ ‘বাদ পড়িয়া যাওয়া’য় শোরগোল উঠিয়াছে।

শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:০৫

রবিশংকর প্রসাদ কি তবে অমিত শাহের সহিত বিতর্কে প্রবৃত্ত হইবেন? কেন্দ্রীয় সরকারের টেলিকমিউনিকেশনস মন্ত্রী বলিয়াছিলেন, ‘সেকুলার’ ও ‘সোশ্যালিস্ট’ শব্দ দুইটি ভারতীয় সংবিধানের আদি রূপে ছিল না, পরবর্তী কালে ১৯৭৬ সালে জরুরি অবস্থার সময়ে সংশোধনীর মাধ্যমেই যুক্ত হইয়াছে, সুতরাং শব্দ দুইটি লইয়া দেশ বিতর্ক করুক, ক্ষতি কী? প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত এক সরকারি বিজ্ঞাপনে এই দুইটি শব্দ ‘বাদ পড়িয়া যাওয়া’য় শোরগোল উঠিয়াছে। এক দিকে কংগ্রেস সহ বিবিধ বিরোধী দল শাসক বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দাগিয়াছে, অন্য দিকে শিব সেনা নেতারা সোৎসাহে ‘ভুল’টিকেই সিলমোহর দিয়া ধর্মনিরপেক্ষ ও সমাজতান্ত্রিক শব্দ দুইটিকে চিরতরে বিসর্জন দিতে চাহিতেছেন। এই প্রেক্ষিতেই রবিশংকর প্রসাদের বিতর্কের প্রস্তাবে গোলযোগ আরও বাড়িয়াছিল। বিজেপির সভাপতি তাহাতে জল ঢালিতে চাহিয়াছেন, বলিয়াছেন: শব্দ দুইটি লইয়া তর্কের কোনও প্রশ্ন নাই, উহারা সংবিধানের প্রস্তাবনায় যেমন আছে, থাকিবে।

সমাজতন্ত্র লইয়া কাহারও মাথাব্যথা আছে বলিয়া মনে হয় না, গোলযোগের প্রকৃত উৎস ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’। শব্দটি পরে প্রস্তাবনায় যুক্ত হইয়াছে বটে, কিন্তু সেই সংযুক্তির কারণ সংবিধানে নিহিত ছিল। যে সমস্ত ভাব ও ভাবনা ভারতীয় সংবিধান তথা ভারতীয় রাষ্ট্রের মৌলিক চারিত্রলক্ষণ, ধর্মনিরপেক্ষতা তাহাদের অন্যতম। সেগুলি কেবল একটি শব্দ বা ধারণা মাত্র নহে, সমগ্র সংবিধানে তাহার অনুরণন ধ্বনিত হইতেছে। সত্য বটে, সংবিধানের যাহা কিছু আদর্শ, সকলই প্রস্তাবনায় সংযোজনের প্রয়োজন নাই। ইহাও সত্য যে, আদিতে ধর্মনিরপেক্ষতার উল্লেখ সেখানে ছিলও না। কিন্তু শব্দটি প্রস্তাবনায় যোগ না করিলেও যেমন সংবিধান অশুদ্ধ হইত না, আজ তাহাকে বাদ দিবার জন্য শোরগোল তুলিবারও তেমনই কোনও প্রয়োজন নাই। বিজেপি’র প্রবীণ নেতা বেঙ্কাইয়া নাইডু বলিয়াছেন, ধর্মনিরপেক্ষতা ‘আমাদের রক্তে’ আছে। তাঁহার সঙ্ঘ-পারিবারিক সতীর্থরা সকলে রক্তের সম্পর্ক মানিবেন কি না, বলা শক্ত, কিন্তু আপাতত দেশের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতাকে তাহার আসনে অক্ষত অবস্থায় রাখিলেই চলিবে।

সমাজতন্ত্র সম্পর্কে কিন্তু একই কথা বলা চলে না। এই শব্দটি কেবল সংবিধানে সংযোজিত নহে, প্রক্ষিপ্ত। তদুপরি ইহা ভারতীয় সংবিধান তথা শাসনতন্ত্রের সহিত যথেষ্ট সামঞ্জস্যপূর্ণও নহে। ইন্দিরা গাঁধী তাঁহার ‘বামপন্থী পর্বে’ ইহাকে সংবিধানে যোগ করিয়াছিলেন। তাহার পিছনে কংগ্রেসের আবাদি অধিবেশনের (১৯৫৫) প্রেরণা ছিল বটে, কিন্তু সংযোজনের কারণটি ছিল রাজনৈতিক। সনিয়া ও রাহুল গাঁধী মানিতে পারিবেন না, কিন্তু সত্য ইহাই যে, সমাজতান্ত্রিকতার সেই রাজনীতি ভারতের বিস্তর ক্ষতি সাধন করিয়াছে। নরসিংহ রাও তাহা মুখে না মানিলেও কাজে প্রমাণ করিয়াছিলেন। বস্তুত, গত কুড়ি বছরে ভারতীয় অর্থনীতি সমাজতন্ত্রের আঁচল ছাড়িয়া বাজারের পথে চলিয়াছে। গতি এখনও যথেষ্ট দ্রুত নহে, কিন্তু দিশা যথাযথ। নরেন্দ্র মোদীর রাজত্বে সেই গতিও দ্রুততর হইবার আশা আছে, অন্তত এখনও আছে। সংবিধানের প্রস্তাবনা হইতে অবাঞ্ছিত শব্দটিকে বিতাড়ন করিলে সেই আশায় বাড়তি ইন্ধন পড়িতে পারে। সন্দেহ নাই, সমাজতান্ত্রিকতার নেশা এখনও অনেক রাজনৈতিক দলের ঘোচে নাই, তাহারা সংবিধান সংশোধনে বাধা দিবে। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী এই উপলক্ষে অন্তত একটি প্রয়োজনীয় বিতর্ক গড়িয়া তুলিতে পারেন। তাহাতেও দেশের কম উপকার হইবে না। অবান্তর কথাসরিৎসাগর মন্থন হইতেও যদি এমন একটি সুফল উঠিয়া আসে, ক্ষতি কী?

editorial anandabazar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy