Advertisement
E-Paper

কোনটি বেশি জরুরি

কূ টনীতি যেহেতু কেবল নীতি নহে, কূট-পনাও বটে, কোন ‘নীতি’ লইয়া কতখানি লড়িলে কাজের কাজ বেশি হইবে, সেই বিবেচনাটি কিন্তু খুবই প্রয়োজনীয়। ভারতের ক্ষেত্রে সম্প্রতি সেই বিবেচনা কিছু অস্বচ্ছ হইয়া পড়িয়াছে বলিয়া সংশয় হয়। এনএসজি প্রসঙ্গে চিন ভারতের সঙ্গে শত্রুতা

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৬ ০০:০০

কূ টনীতি যেহেতু কেবল নীতি নহে, কূট-পনাও বটে, কোন ‘নীতি’ লইয়া কতখানি লড়িলে কাজের কাজ বেশি হইবে, সেই বিবেচনাটি কিন্তু খুবই প্রয়োজনীয়। ভারতের ক্ষেত্রে সম্প্রতি সেই বিবেচনা কিছু অস্বচ্ছ হইয়া পড়িয়াছে বলিয়া সংশয় হয়। এনএসজি প্রসঙ্গে চিন ভারতের সঙ্গে শত্রুতা করিতেছে বলিয়া দিল্লির কূটনৈতিক মহল যে উত্তাপে জ্বলিতেছে, তাহার তুলনায় পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন বিষয়ে চিনের লাগাতার ভারত-বিরোধিতার বিষয়টি যেন আগাগোড়া কম গুরুত্ব পাইতেছে। কয়েক বৎসর যাবৎ জইশ-এ-মহম্মদের প্রধান মাসুদ আজহার এবং লস্কর-এ-তইবার প্রধান জাকিউর রহমান লাকভিকে রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফে ‘জঙ্গি’ তালিকাভুক্ত করিতে ভারত সমানে চেষ্টা করিতেছে। এবং চিন সমানে তাহাতে জল ঢালিতেছে। ‘পদ্ধতিগত অসংগতি’ দেখাইয়া জঙ্গি সংগঠনগুলিকে আড়াল করিবার চেষ্টা করিতেছে। এই বৎসর পাঠানকোট হানার পর আবারও একই উদ্যোগ লওয়া হয়। আবারও একই ভাবে চিন তাহা আটকায়, আক্ষরিক অর্থে একার প্রচেষ্টায়। অথচ এনএসজি লইয়া ভারতীয় কূটনীতিক মহলের যে প্রবল আক্ষেপ, এই বিষয়ে ততখানি নহে। বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ গতকাল সেই দিকে নির্দেশ করিয়া কাজের কাজ করিয়াছেন। এনএসজি-তে অংশগ্রহণের অপেক্ষা জঙ্গি হামলার বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফে এক পা অগ্রসর হইলেও অনেক বেশি লাভ।

চিন যাহা করিতেছে, তাহাতে চিন কী পাইবে, পাকিস্তান কী পাইবে ইত্যাদির আগে একটি কথা স্পষ্ট হওয়া দরকার। চিনের পদক্ষেপটি বিশেষ ভাবে লক্ষণীয়, কেননা খুব কম ক্ষেত্রে তাহারা আগাইয়া আসিয়া এমন নেতিবাচক অবস্থান লইয়াছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও রাশিয়া, সকলের বিপক্ষে গিয়া একার ‘ভেটো’-তে কোনও প্রস্তাব আটকানো চিনের প্রাত্যহিক অভ্যাস নহে। বাস্তবিক, রাষ্ট্রপুঞ্জের অন্দরে চিন খানিকটা অ-বিতর্কিত অবস্থান লইবার জন্যই পরিচিত। রাষ্ট্রপুঞ্জের সত্তর বৎসরের ইতিহাসে চিন দশ বারের বেশি ভেটো প্রয়োগ করে নাই। সুতরাং পাক জঙ্গি নেতৃত্ব বিষয়ক চিনা অবস্থানের গুরুত্বকে কোনওমতেই কম করিয়া দেখা চলে না। ইহা যে একটি স্ট্র্যাটেজি, এবং ভারত-বিরুদ্ধতার স্ট্র্যাটেজি, তাহা বিস্তারিত প্রমাণ করিতে কোনও তথ্যপ্রমাণ দরকার নাই।

খুবই নিয়মিত ভাবে প্রযুক্ত হইয়া আসিতেছে এই স্ট্র্যাটেজি। নিরাপত্তা পরিষদের কাছে পাকিস্তানের অনুরোধ ছিল, উপরি-উক্ত দুই সন্ত্রাসী সংগঠনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপুঞ্জ যেন নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ না করে: চিনের চেষ্টায় সেই অনুরোধ পাশ হইয়াছিল। ভারত চেষ্টা করিয়াছিল জামাত-উদ্-দওয়াকে (লস্কর-এর রাজনৈতিক মুখপাত্র দল) রাষ্ট্রপুঞ্জের জঙ্গি তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা: চিন তাহা হইতে দেয় নাই। বেজিং যে কূটনৈতিক আলাপের ক্ষেত্রে বিশদতা ও সুবোধ্যতায় বিশ্বাস করে না, তাহা একটি স্বীকৃত সত্য। সুতরাং চিনের সহিত এই বিষয়ে ‘আলোচনা’ করিয়া যে লাভ নাই, দিল্লি, ওয়াশিংটন, ইসলামাবাদ, সকলেই তাহা জানে। ফলে ভারতের কাছে একটি পথই বাকি। কূটনৈতিক চাপের পথ বাড়ানো। অন্যান্য প্রধান দেশের কাছে বারংবার বিষয়টি তোলা। চিনের উপর পরোক্ষ চাপ তৈরি করা। সেই কাজ যে হইতেছে না, বিদেশমন্ত্রী নিজেই অঙ্গুলিনির্দেশ করিয়াছেন। প্রশ্ন হইল, সন্ত্রাসবিরোধিতার প্রশ্নটিই যদি এত গৌণ হইয়া যায়, তাঁহার দফতর করিতেছে কী?

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy