Advertisement
E-Paper

গুরুকুল

সাত দিনের ফাঁসির হুকুম শুনাইবার এক্তিয়ার দলের নাই। অতএব, আরাবুল ইসলামকে ‘ছয় বত্‌সরের জন্য বহিষ্কার’ করা হইল। ছয় বত্‌সরের জন্য সাসপেন্ড করা চলিতে পারে, কিন্তু বহিষ্কারের সময়সীমা বাঁধিয়া দেওয়ার শাস্তি কিঞ্চিত্‌ অভিনব বটে। সন্দেহ হয়, দল ছয় বত্‌সর টিকিলে আরাবুলের সাদর প্রত্যাবর্তন হইবে। রাজ্যের শাসক দলের চালচলন দেখিয়া যাঁহারা শুভনাস্তিক হইয়া উঠিয়াছেন, তাঁহারা হয়তো বলিবেন, তত দিন অপেক্ষা করিতে হইবে না। রাজনৈতিক তাপমাত্রা খানিক কমিলেই ‘তাজা ছেলে’ ঘরে ফিরিবেন।

শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০৫

সাত দিনের ফাঁসির হুকুম শুনাইবার এক্তিয়ার দলের নাই। অতএব, আরাবুল ইসলামকে ‘ছয় বত্‌সরের জন্য বহিষ্কার’ করা হইল। ছয় বত্‌সরের জন্য সাসপেন্ড করা চলিতে পারে, কিন্তু বহিষ্কারের সময়সীমা বাঁধিয়া দেওয়ার শাস্তি কিঞ্চিত্‌ অভিনব বটে। সন্দেহ হয়, দল ছয় বত্‌সর টিকিলে আরাবুলের সাদর প্রত্যাবর্তন হইবে। রাজ্যের শাসক দলের চালচলন দেখিয়া যাঁহারা শুভনাস্তিক হইয়া উঠিয়াছেন, তাঁহারা হয়তো বলিবেন, তত দিন অপেক্ষা করিতে হইবে না। রাজনৈতিক তাপমাত্রা খানিক কমিলেই ‘তাজা ছেলে’ ঘরে ফিরিবেন। তবুও, কালীঘাট হইতে আরাবুল ইসলামের শাস্তি হইল, ইহা সুসংবাদ। কখনও শাস্তি না হওয়া অপেক্ষা বিলম্বিত শাস্তি শ্রেয়, তাহা অনস্বীকার্য। কিন্তু অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ইহাই যে, আরাবুলের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলি গত আট বত্‌সর যাবত্‌ উঠিতেছে, তাহার কোনওটিই নিছক দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ নহে। অভিযোগগুলি ফৌজদারি। এমন অভিযোগ উঠিলে ব্যবস্থা করিবার কথা পুলিশের, দলীয় শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির নহে। এই রাজ্যে শাসকরা দল আর প্রশাসনের মধ্যে ফারাকটি গুলাইয়া ফেলিতে সক্ষম হইয়াছেন বটে, তবুও দলের শাস্তি যথেষ্ট নহে। বস্তুত, সেই শাস্তির কোনও গুরুত্বই নাই। তাপস পাল যেমন দলের নিকট একটি চিঠি পাঠাইয়াই প্রায়শ্চিত্ত সারিয়াছিলেন, আরাবুলের ক্ষেত্রেও তাহার ব্যতিক্রম হইল না। ইহাতে যে আর লোক ভোলানো যায় না, নেতারা তাহা বুঝিলে ভাল।

আরাবুল ইসলামের ক্ষেত্রে দলীয় কুনাট্যের মাত্রা আরও এক পর্দা চড়িল। দলীয় কার্যালয়ে বসিয়া শাস্তির সিদ্ধান্তটি ঘোষণা করিলেন যিনি, তাঁহার নাম পার্থ চট্টোপাধ্যায়। মুকুল রায়-জমানার অবসানে যিনি দলে নিজের হৃত গুরুত্ব পুনরুদ্ধার করিতেছেন। আরাবুল ইসলামের নিকট অবশ্য তাঁহার গুরু-ত্ব চিরকালই ভিন্ন। ভাঙড়ের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা প্রকাশ্যেই পার্থবাবুকে নিজের ‘গুরু’ মানিয়াছেন। আজ সেই সম্পর্ক পার্থবাবুকে অস্বস্তিতে ফেলিয়াছে বটে, কিন্তু সেই অস্বস্তি আজিকারমাত্র। অনুমান করা চলে, পার্থবাবু বা অন্য কোনও ‘গুরু’-র বরাভয় না থাকিলে আরাবুল ইসলাম বা অনুব্রত মণ্ডলরা এমন দাপাইয়া বেড়াইতে পারেন না। আরও অনুমান যে আরাবুল-অনুব্রতরা না থাকিলে এই ‘গুরু’দেরও চলে না। তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয় হইতে এক শিষ্যের শাস্তি ঘোষণা হইল। কিন্তু, কোনও গুরুর গায়েই আঁচড়টিও পড়িল না। ‘শাস্তি’ বিষয়টিকে তৃণমূল কংগ্রেস কতখানি গুরুত্ব দেয়, তাহা বুঝিতে আর কিছু বাকি থাকিল না। আজিকার বহিষ্কৃত শিষ্য ভবিষ্যতে দলে ফিরুন বা না-ই ফিরুন, গুরুকুলের পরম্পরা অটুট থাকিবে। রাজ্যের নৈরাজ্যও।

এই দল-সর্বস্ব রাজ্যে প্রশাসনের অস্তিত্ব সর্বদা স্মরণে থাকে না। অবশ্য, যখন ভাঙড় থানায় বসিয়া আরাবুল ইসলাম স্বীয় মনপসন্দ অভিযোগপত্র রচনা করাইতে পারেন, অথবা অনুব্রত মণ্ডলই বীরভূমের প্রকৃত পুলিশকর্তা কি না, তাহা লইয়া সংশয় দেখা দেয়, তখন প্রশাসন নামক কৌতুকটিতে মানুষের আর আগ্রহও থাকে না। কেন আরাবুল বা অনুব্রতর বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমিলেও পুলিশ তাঁহাদের স্পর্শ করিতে পারে না, সে প্রশ্ন এই রাজ্যে অবান্তর। এখন দেখিবার, দল হইতে বহিষ্কৃত আরাবুল ইসলামের বিরুদ্ধে তদন্তে নামিতে পুলিশের সাহস হয় কি না। হইলে, কালীঘাটের ইচ্ছাময়ীর একটি কর্তব্য আছে। তিনি অনুব্রত মণ্ডল, মনিরুল ইসলাম বা তাপস পালের ন্যায় দলীয় সম্পদকেও এই বার বহিষ্কার করুন। প্রশাসনের মেরুদণ্ড ফিরাইয়া দেওয়া যখন তাঁহার পক্ষে অসম্ভব, অন্তত দুষ্কৃতীদের দলীয় আশ্রয় দিতে অস্বীকার করুন। এটুকুও মুখ্যমন্ত্রী পারেন কি না, এই বার তাহা দেখিবার সময়। তবে, গত সাড়ে তিন বত্‌সরের অভিজ্ঞতা মুখ্যমন্ত্রীর ‘সাফল্য’ সম্বন্ধে আশাবাদী হওয়ার পথে বড় বাধা।

anandabazar editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy