Advertisement
E-Paper

জীবনপ্রভাত

নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁহার সেনাপতি অমিত শাহ যদি হরিয়ানা এবং মহারাষ্ট্রে ভারতীয় জনতা পার্টির সাফল্যকে যুগান্তকারী বলিয়া গৌরব করিতে চাহেন, তাঁহাদের দোষ দেওয়া চলে না। দুই রাজ্যের ফলই বিজেপির পক্ষে অভূতপূর্ব, হয়তো— লোকসভা নির্বাচনের ফলের মতোই— তাঁহাদেরও কল্পনাতীত। হরিয়ানায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার বাস্তব মূল্য অবশ্যই অনন্য, তবে আয়তন এবং রাজনৈতিক গুরুত্বের বিচারে মহারাষ্ট্র জীবনপ্রভাতই নিঃসন্দেহে বিজেপি নেতাদের বিশেষ শ্লাঘার কারণ।

শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০১

নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁহার সেনাপতি অমিত শাহ যদি হরিয়ানা এবং মহারাষ্ট্রে ভারতীয় জনতা পার্টির সাফল্যকে যুগান্তকারী বলিয়া গৌরব করিতে চাহেন, তাঁহাদের দোষ দেওয়া চলে না। দুই রাজ্যের ফলই বিজেপির পক্ষে অভূতপূর্ব, হয়তো— লোকসভা নির্বাচনের ফলের মতোই— তাঁহাদেরও কল্পনাতীত। হরিয়ানায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার বাস্তব মূল্য অবশ্যই অনন্য, তবে আয়তন এবং রাজনৈতিক গুরুত্বের বিচারে মহারাষ্ট্র জীবনপ্রভাতই নিঃসন্দেহে বিজেপি নেতাদের বিশেষ শ্লাঘার কারণ। উদ্ধব ঠাকরে যে মনে মনে আপনাকে দোষ দিয়া চলিয়াছেন, তাহা অনুমান করা কঠিন নহে। প্রায় শেষ মুহূর্তে পঁচিশ বছরের জোট ভাঙিল এবং একা লড়িয়া নরেন্দ্র মোদী ১২২টি আসন লইয়া মহারাষ্ট্র বিজয় করিলেন— এই পরিণতি জানিলে শিবসেনা-প্রধান বিজেপিকে ১৩০টি আসন ছাড়িতে নারাজ হইতেন না, মুখ্যমন্ত্রী পদের অগ্রিম দাবিদারও হইতেন না। কিন্তু চতুর্মুখী নির্বাচনের ফলাফল অনুমান করা কঠিন। এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী আবারও প্রমাণ করিলেন, সাফল্যের তুল্য সফল আর কিছু হইতে পারে না। মহারাষ্ট্র নির্বাচনের ফলাফলকে নানা ভাবে বিশ্লেষণ করিয়া ইহার নানা তাৎপর্য খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে, কিন্তু এই ফলের প্রাথমিক অর্থটি স্পষ্ট: ভোটদাতারা ভারতীয় জনতা পার্টিকে রাজ্যের এক নম্বর দল হিসাবে স্বীকৃতি দিয়াছেন, তাহার আসনসংখ্যা দ্বিতীয় স্থানাধিকারী শিবসেনার প্রায় দ্বিগুণ, প্রাপ্ত ভোটের অনুপাত শিবসেনার প্রায় দেড়গুণ।

কংগ্রেস ও এনসিপি’র জোট সরকার যে রাজ্যবাসীর এক বড় অংশের তীব্র বিরাগ কুড়াইয়াছে, তাহা লইয়া কাহারও কোনও সংশয় ছিল না, মাত্র কয় দিন আগে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ তাঁহার সদ্য-প্রাক্তন জোটসঙ্গী এবং ভূতপূর্ব সহকর্মীদের দুর্নীতি সম্পর্কে যে মন্তব্য করিয়াছিলেন, তাহা ভারতীয় রাজনীতির প্রেক্ষিতেও চমকপ্রদ। লক্ষণীয়, হরিয়ানাতেও শাসক কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ কম ছিল না। সরকারি দুর্নীতি এবং প্রশাসনিক অপদার্থতার বিরুদ্ধে ভারতীয় নাগরিকদের ক্ষোভ এবং আপত্তির ক্রমবর্ধমান নজিরগুলি গত কয়েক বছরে সামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিসরে উত্তরোত্তর দেখা গিয়াছে। মহারাষ্ট্রে এবং হরিয়ানায় শাসকদের পরাজয়ের মধ্যেও দুর্নীতিবিরোধী সেই জনমতের ভূমিকা প্রবল। স্বভাবতই, দিল্লি বিধানসভা নির্বাচন হইতে শুরু করিয়া বিগত লোকসভা নির্বাচন অবধি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনমতের যে প্রতিফলন ঘটিয়াছে, তাহার একটি ধারাবাহিক তাৎপর্য ক্রমশ স্পষ্ট হইয়া উঠিতেছে।

নরেন্দ্র মোদীর ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি এই প্রেক্ষিতেই বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। দুর্নীতিমুক্ত এবং সবল প্রশাসনের মধ্য দিয়া উন্নয়নের যে প্রতিশ্রুতি তাঁহার এই ভাবমূর্তির উপজীব্য, ভারতীয় ভোটদাতারা, দেখা যাইতেছে, এখনও তাহাতে আস্থা রাখিয়াছেন। তিনি বা তাঁহার দল এই আস্থার মর্যাদা রাখিতে পারিবেন কি না, তাহা ভবিষ্যৎই বলিবে। বিজেপি নির্বাচনী সাফল্যের জন্য উত্তরোত্তর মোদীনির্ভর হইলে দল হিসাবে তাহার দুর্বলতা বাড়িবে কি না, তাহাও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। বিহার বা পঞ্জাবের মতো রাজ্যে ‘একলা চলো’ নীতি মহারাষ্ট্রের তুল্য কাজ দিবে কি না, সেই বিষয়েও গভীর সংশয় আছে। কিন্তু সে সকলই ভবিষ্যতের প্রশ্ন। আপাতত নরেন্দ্র মোদী বলিতে পারেন, ‘আজ আমি জয়ী।’ তাঁহার জয়রথের অগ্রগতির এই কাহিনিতে একটি করুণ পাদটীকা আছে, তাহার নাম: কংগ্রেস। সেই দলের (এখনও) নূতন নায়ক রাহুল গাঁধী বলিয়াছেন, তাঁহারা এই জনাদেশ গ্রহণ করিতেছেন। গ্রহণ না করিয়া অন্য কী তাঁহাদের করিবার ছিল, তিনিই জানেন। তবে এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নাই যে, তাঁহার দলকে গ্রহণ না করিবার ব্যাপারে আসমুদ্রহিমাচল ভারতবর্ষ দৃশ্যত একমত।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy