Advertisement
E-Paper

তোষণের বিপদ

আস্তিনে কালসর্প অথবা চৌবাচ্চায় কুম্ভীর প্রতিপালন যে বিচক্ষণতার কাজ নহে, কথাটি অনেকেই ঠেকিয়া শিখিয়াছেন। শিখিবার বয়স নাই, কাজেই বহু বিলম্বে হইলেও আরও কেহ শিখিবেন, এমন আশা করা চলিতে পারে। সেই আশা বাস্তবায়িত হইবার পূর্বে আরও কত বিস্ফোরণ অপেক্ষা করিয়া আছে, তাহাই দুশ্চিন্তার।

শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০১

আস্তিনে কালসর্প অথবা চৌবাচ্চায় কুম্ভীর প্রতিপালন যে বিচক্ষণতার কাজ নহে, কথাটি অনেকেই ঠেকিয়া শিখিয়াছেন। শিখিবার বয়স নাই, কাজেই বহু বিলম্বে হইলেও আরও কেহ শিখিবেন, এমন আশা করা চলিতে পারে। সেই আশা বাস্তবায়িত হইবার পূর্বে আরও কত বিস্ফোরণ অপেক্ষা করিয়া আছে, তাহাই দুশ্চিন্তার। বর্ধমান শহরের উপকণ্ঠে যে বিস্ফোরণ ঘটিল, তাহার কার্যকারণসূত্র এখনও সম্পূর্ণ স্পষ্ট নহে, কিন্তু তাহার সহিত মৌলবাদী উগ্রপন্থার যোগ থাকিবার পারিপার্শ্বিক প্রমাণ বিস্তর। পশ্চিমবঙ্গ যে সন্ত্রাসবাদীদের নিকট অভয়ারণ্য, এমন অভিযোগ নূতন নহে। কিন্তু তবুও বর্ধমানের ঘটনাটি তাত্‌পর্যপূর্ণ, কারণ এই প্রথম পশ্চিমবঙ্গে আল-কায়দার উপস্থিতির সুতীব্র এবং স্পষ্ট অভিযোগ উঠিল। আশা করা চলে, রাজ্য পুলিশের সুমতি হইবে, তাহারা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সহিত সহযোগিতা করিবে। বর্ধমানে কী হইয়াছিল, এবং রাজ্য জুড়িয়া কী হইতেছে, সেই ছবিগুলি স্পষ্ট হইবে। আশা, অন্তত এই একটি ক্ষেত্রে আইন আইনের পথে চলিবার স্বাধীনতা পাইবে। পশ্চিমবঙ্গ এমনিতেই বহু জ্বালায় জ্বলিতেছে। তাহার উপর আর সন্ত্রাসের চাবুক প্রয়োজন নাই।

কিন্তু সব আশার, সব সদিচ্ছার পথ রোধ করিয়া যাহা দাঁড়াইয়া থাকে, তাহার নাম রাজনীতি। বৃহত্‌ নহে, ক্ষুদ্র রাজনীতি। যাহার নাম ‘ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি’। কোনও এক বিশেষ জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক আনুগত্য আদায় করিবার জন্য ‘অনুগ্রাহক-অনুগৃহীত’ সম্পর্ক গড়িয়া তুলিবার রাজনীতিই এখন ভারতে মূলধারার স্বীকৃতি পাইয়াছে। অতি দুর্ভাগ্যজনক প্রবণতা। সামগ্রিক উন্নয়নের বৃহত্তর প্রশ্নগুলিকে দূরে ঠেলিয়া কেন কিছু পাওয়াইয়া দেওয়াই রাজনীতির মূলমন্ত্র হইয়া উঠিল, ভবিষ্যত্‌ হয়তো সেই প্রশ্নের উত্তর সন্ধান করিবে। আপাতত এই পরিস্থিতিটিকেই বাস্তবের স্বীকৃতি দেওয়া ভিন্ন উপায় নাই। কিন্তু এই ক্ষুদ্রতার মধ্যেও একটি অলঙ্ঘ্য লক্ষ্মণরেখা আছে। কাহাকে তোষণ করিব, কত দূর তোষণ করিব, কোন সম্ভাবনাকে সচেতন ভাবে এড়াইয়া চলিব, রাজনীতিকরা এই বিবেচনাবোধ হারাইয়া বসিলেই মুশকিল। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ভোটের স্বার্থে মুসলমান তোষণ করিতেছেন, এমন অভিযোগ বারংবার উঠিয়াছে। তাঁহার বিভিন্ন নীতিতে সেই অভিযোগের পক্ষে প্রমাণও আছে। সংখ্যালঘু তোষণ আর তাঁহাদের প্রকৃত উন্নয়নচিন্তা দুইটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। এই সম্পাদকীয় স্তম্ভে বহু বার দাবি করা হইয়াছে, সরকার সংখ্যালঘুর যথার্থ উন্নয়নে তত্‌পর হউক। এমনকী, প্রয়োজনে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করুক। কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রী তোষণ-পথের পথিক। এই পথ কতখানি বিপজ্জনক হইতে পারে, বর্ধমান দেখাইয়া দিল।

আরও একটি বিপদ পশ্চিমবঙ্গে বাড়িতেছে। তাহার নাম প্রশাসনিক দলতন্ত্র। বর্ধমানের পুলিশের বিরুদ্ধে বিস্ফোরণের প্রমাণ নাশের অভিযোগ উঠিয়াছে। ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি-র প্রতিনিধিদের সহিত অসহযোগিতার অভিযোগও উঠিয়াছে। পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ যে শাসক দলের শাখা সংগঠনে পরিণত হইয়াছে, তাহা ক্রমবর্ধমান অভিযোগের তালিকায় স্পষ্ট। নিচুতলার কর্মীদের দোষ দেওয়া অনর্থক। রাতের অন্ধকারে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঠেঙাড়ে বাহিনী প্রেরণ করিবার সিদ্ধান্ত যেমন থানা স্তরে হয় না, তেমনই কেন্দ্রীয় বাহিনী আসিবার পূর্বেই বোমা নষ্ট করিয়া ফেলিবার সিদ্ধান্ত করিবার ক্ষমতাও সম্ভবত কোনও থানার অফিসারের নাই। অনুমান করা চলে, সিদ্ধান্তগুলি উপরমহল হইতে আসে। রাজনৈতিক প্রভুরা সিদ্ধান্ত করেন, আর বাহিনীর কর্তারা বিনা প্রশ্নে মানিয়া লন। এই রাজ্যের ক্ষমতাসীন রাজনীতিকদের পক্ষপাতহীনতার বালাই নাই। কিন্তু প্রশাসন এমন বশংবদ হইল কেন? কর্তারা তাঁহাদের মেরুদণ্ডগুলি কোথায় গচ্ছিত রাখিলেন? প্রশ্ন সহজ, উত্তরও জানা।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy