Advertisement
E-Paper

দ্বিমেরুশাসন

প্রায় সর্ব ক্ষেত্রে, সর্ব বিষয়ে এত দিন ধরিয়া দুই মেরুর দুটি রাজনৈতিক দলের দুই রকমের অবস্থান থাকিয়াছে। দুই অবস্থানের মধ্যে কোনও আদানপ্রদান সম্ভবই হয় নাই, কেবল নিজের নিজের অনমনীয় মতের প্রকাশ ঘটিয়াছে মাত্র। এই বার হয়তো সেই ধারায় ছেদ পড়িতে চলিয়াছে। জম্মু ও কাশ্মীরে রাজনীতির দুই মেরু আসিয়া হাত মিলাইয়া সরকার গড়িতে রাজি হওয়ায় হয়তো একটি নূতন সম্ভাবনা খুলিতে চলিয়াছে।

শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:০২

প্রায় সর্ব ক্ষেত্রে, সর্ব বিষয়ে এত দিন ধরিয়া দুই মেরুর দুটি রাজনৈতিক দলের দুই রকমের অবস্থান থাকিয়াছে। দুই অবস্থানের মধ্যে কোনও আদানপ্রদান সম্ভবই হয় নাই, কেবল নিজের নিজের অনমনীয় মতের প্রকাশ ঘটিয়াছে মাত্র। এই বার হয়তো সেই ধারায় ছেদ পড়িতে চলিয়াছে। জম্মু ও কাশ্মীরে রাজনীতির দুই মেরু আসিয়া হাত মিলাইয়া সরকার গড়িতে রাজি হওয়ায় হয়তো একটি নূতন সম্ভাবনা খুলিতে চলিয়াছে। আদানপ্রদানের সম্ভাবনা। সমঝোতার সম্ভাবনা। কোনও না কোনও পথে ঐকমত্যে আসিবার সম্ভাবনা। শুধু এই একটি কারণেই পিডিপি ও বিজেপি-র সম্মিলনে জম্মু ও কাশ্মীরের নূতন রাজ্য সরকার গঠনকে ঐতিহাসিক ঘটনা বলা যায়। ব্যতিক্রমী রাজ্যটির সাংবিধানিক অবস্থান হইতে শুরু করিয়া কেন্দ্রীয় সরকারের সহিত সম্পর্ক, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ব্যবহার ও পরিধি, সব ক্ষেত্রেই ‘মুসলিম’ ও ‘হিন্দু’ দল দুইটির বক্তব্য কেবল আলাদা বলিলে কম হইবে, বরং বিপ্রতীপ বলা ভাল। সেই কারণেই নির্বাচনের পর আট সপ্তাহেরও বেশি লাগিল আলোচনার মাধ্যমে একটি ‘কমন মিনিমাম প্রোগ্রাম’ বা ‘ন্যূনতম সাধারণ কার্যসূচি’-তে পৌঁছাইতে। এখনও এই কার্যসূচির সম্পূর্ণ চিত্রটি পাওয়া যায় নাই, তবে অনুমান করা চলে যে, দিল্লিতে কেন্দ্রীয় বিজেপি শাসকদের সহিত কাশ্মীরের পিডিপি নেতৃত্বের বৈঠকে মেহবুবা মুফতিকে অমিত শাহের শাল উপহারের অমায়িকতা কিংবা নরেন্দ্র মোদীর সহিত মুফতি মহম্মদ সইদের করমর্দনের উষ্ণতার উপযুক্ত প্রতিফলন হয়তো দুই দলের সিএমপি বা ন্যূনতম সাধারণ কার্যসূচিতে না-ও মিলিতে পারে। সম্ভবত, ক্ষমতার তাড়নায় এক রকমের জোড়াতাড়া দিয়াই কার্যসূচি মনস্থ হইয়াছে। তবে সে ক্ষেত্রে এমন আশাও নিশ্চয়ই বাতুলতা নয় যে, সরকার গঠিত হইবার পরও ক্ষমতার তাড়নাতেই আবার দুই দল ঐকমত্যের ভূমিটি আঁকড়াইয়া থাকিবার সর্বান্তঃকরণ প্রচেষ্টা চালাইবে।

রাজ্যের নিজস্ব সমর্থন-ভিত্তির চাপেই মুফতিকে প্রধানমন্ত্রীর সহিত বৈঠকের আগে একটি কথা বারংবার বলিতে হইয়াছে। কোনও ভাবেই দলের অবস্থান লঘু করিয়া সমঝোতা করিবেন না, এমন আশ্বাস দিতে হইয়াছে। সমস্যা কেবল ৩৭০ ধারা বা আফস্পা লইয়া নয়, সমস্যা হুরিয়তের মতো কট্টরপন্থী সংগঠনকে লইয়াও। হুরিয়ত তো কেবল একটি দল নয়, তাহার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থন হিংসা-ধ্বস্ত প্রদেশটির একাধিক প্রজন্মের মধ্যে বাহিত হইতেছে। ইতিমধ্যেই বিজেপি-পিডিপির সমঝোতার সংবাদে জম্মুতে উল্লাসের জোয়ারের পাশে কাশ্মীরে বিক্ষোভের আঁচ। ভোলা যাইবে না যে, জম্মু ও কাশ্মীরে যথাক্রমে বিজেপি ও পিডিপি শুধু জয়ী হয় নাই, পরস্পরের বিরুদ্ধে দাঁড়াইয়া জয় পাইয়াছে। জম্মুর মানুষ পিডিপি-কে, এবং কাশ্মীরিরা বিজেপি-কে বর্জন করিতেই ভোটে ছাপ দিয়াছেন। এমতাবস্থায় সমঝোতার সরকার গঠন এবং চালনা বিরাট চ্যালেঞ্জের বিষয়, সন্দেহ কী।

তবে কিনা, এই চ্যালেঞ্জের মধ্যেই আশার বীজটিও লুকাইয়া। যে গণতন্ত্র বিরুদ্ধ স্রোতদ্বয়কে এক প্রবাহে মিলাইতে পারে, সেই গণতন্ত্রের জোরেই পরস্পরের নির্বাচনী ভিত্তির প্রতি সমীহ রাখাও সম্ভব হইতে পারে। হয়তো দুই দলই আতিশয্যের সীমানা ছুঁইবে না। এ বিষয়ে পিডিপি-রই অধিক সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। দুইটি কারণে। প্রথমত, জম্মু-কাশ্মীরে তাহারা প্রথম বার শাসনভার গ্রহণ করিতেছে না, মুফতি মহম্মদ সইদ-ও প্রথম বার মুখ্যমন্ত্রী হইতেছেন না। দ্বিতীয়ত, কেন্দ্রে বিজেপি সরকার থাকায় রাজ্য বিজেপি-র কিছু অধিক সুবিধা পাইবার সম্ভাবনা। ইহাও কিন্তু গণতন্ত্রেরই আর একটি পার্শ্ব-ঘটনা হিসাবে গ্রহণ করা ভিন্ন গত্যন্তর নাই। অভিমান বা বিদ্বেষবশত সমঝোতার চেষ্টা হইতে মুখ ফিরাইয়া রাখা যাইবে না। রবিবার জম্মুতে শপথগ্রহণের সময় মুফতি নিশ্চয় মনে ভাবিবেন, দড়ি যতই সরু হউক, তাহার উপর দিয়া হাঁটিবার কৌশলটি রপ্ত করিতে হইবে।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy