Advertisement
E-Paper

পুনশ্চ

এভো মোরালেস আবার বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হইয়াছেন। তৃতীয় বার। এবং এ বারের জয়ের ব্যবধান আগের তুলনায় অনেক বেশি। মোরালেস ৬০ শতাংশের অধিক ভোট পাইয়াছেন, প্রতিদ্বন্দ্বী স্যামুয়েল দোরিয়া মেদিনা মাত্রই ২৪ শতাংশ। দৃশ্যত, মোরালেসের জনপ্রিয়তা বর্ধমান। এই জনপ্রিয়তার চাবিকাঠি নিহিত রহিয়াছে তাঁহার অনুসৃত আর্থিক নীতির উপর।

শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০১

এভো মোরালেস আবার বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হইয়াছেন। তৃতীয় বার। এবং এ বারের জয়ের ব্যবধান আগের তুলনায় অনেক বেশি। মোরালেস ৬০ শতাংশের অধিক ভোট পাইয়াছেন, প্রতিদ্বন্দ্বী স্যামুয়েল দোরিয়া মেদিনা মাত্রই ২৪ শতাংশ। দৃশ্যত, মোরালেসের জনপ্রিয়তা বর্ধমান। এই জনপ্রিয়তার চাবিকাঠি নিহিত রহিয়াছে তাঁহার অনুসৃত আর্থিক নীতির উপর। বলিভিয়ায় যে প্রাকৃতিক গ্যাস ও খনিজের বিপুল ভাণ্ডার, মোরালেস তাহাকে রাষ্ট্রায়ত্ত করিয়া বলিতে গেলে তাহার উপর বলিভিয়ার অর্থনৈতিক অধিকারটি ফের প্রতিষ্ঠা করিয়াছেন। জাতীয় সম্পদের পুনর্বণ্টন, বয়স্ক ও শিশুদের কল্যাণে রকমারি আর্থিক অনুদান, রোজগার বৃদ্ধি ইত্যাদি কর্মসূচি লাতিন আমেরিকার হতদরিদ্র দেশ বলিভিয়াকে অঞ্চলের দ্রুততম উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে পরিণত করিয়াছে। মোরালেসের জয়ে এই কর্মসূচির প্রভাব পড়িয়াছে, তাহা অনুমান করা চলে।

এভো মোরালেসই বলিভিয়ার প্রথম ‘ভূমিপুত্র’ প্রেসিডেন্ট। পূর্বসূরিরা সকলেই ছিলেন স্পেনীয় বংশোদ্ভূত। ক্রমান্বয়ে তিন বার দেশের কর্ণধার পদে তাঁহার জয়লাভের মধ্যে কেহ অশনি-সংকেত দেখিলে তাঁহাকে ‘শুভনাস্তিক’ বলিয়া উড়াইয়া দেওয়ার উপায় নাই। বিশেষত লাতিন আমেরিকায় রাজনৈতিক স্বৈরাচারের ঐতিহ্য স্মরণ রাখিলে। কিউবার ফিদেল কাস্ত্রো, আর্জেন্টিনার পেরন, ভেনেজুয়েলার উগো চাভেস— দৃষ্টান্তের অভাব নাই। তবে মোরালেস আশ্বাসের সুরে বলিয়াছেন, ২০২০ সালে চতুর্থ বারের জন্য আর প্রার্থী হইবেন না, প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ ছাড়িয়া তিনি তাঁহার গ্রামের বাড়িতে অবসরে যাইবেন, খেতখামারের কাজ লইয়া ব্যস্ত থাকিবেন, ইতিমধ্যে বলিভিয়ার শিল্পায়নের যে মহাযজ্ঞ শুরু করার পরিকল্পনা তিনি গ্রহণ করিয়াছেন, তাঁহার অবর্তমানে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট তাহা রূপায়ণ করিতে পারিবেন। মোরালেস কথা রাখিতে পারিলে তাহা একটি দৃষ্টান্ত হইবে।

তবে, যাহা মোরালেসকে এত দূর আনিয়াছে, তাহা যে আর বেশি দূর যাইবে না, কথাটি মোরালেসের বুঝিয়া লওয়া প্রয়োজন। গোটা লাতিন আমেরিকা জুড়িয়াই যে প্রাকৃতিক সম্পদের রাষ্ট্রায়ত্তকরণ এবং তাহার মাধ্যমে উপার্জিত অর্থে দেশের উন্নয়নের কাজ করিবার যে ধারাটি চালু হইয়াছে, তাহার একটি স্বাভাবিক সীমা আছে। প্রাকৃতিক সম্পদের ভাণ্ডার বিপুল হইতে পারে, অসীম নহে। তাহার স্কন্ধেই অর্থনীতির গুরুভার আরোপ করিলে সেই বোঝা কিঞ্চিত্‌ দুঃসহ হয় বইকী। বলিভিয়ার ন্যায় প্রাকৃতিক গ্যাসের ভাণ্ডারনির্ভর অর্থনীতির ক্ষেত্রে কথাটি আরও স্বল্পমেয়াদেই সত্য, কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ‘শেল গ্যাস’-এর ভাণ্ডার খুঁজিয়া পাওয়া গিয়াছে। বলিভিয়ার গ্যাসের চাহিদা অতএব কমিবে। মূল্যও। দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাটি অব্যাহত রাখিতে শিল্পায়ন প্রয়োজন। প্রয়োজনে, বর্তমানে উন্নয়নখাতে ব্যয় ছাঁটিয়াও শিল্পায়নের পরিকাঠামো গড়িয়া তুলিতে হইবে এবং বেসরকারি পুঁজির জন্য ইতিবাচক পরিবেশ নির্মাণ করিতে হইবে। নব্য সমাজতন্ত্রের হাওয়া লাতিন আমেরিকায় এখনও বহমান। তাহার মধ্যেই মোরালেস নূতন পথে হাঁটিবার সাহস করিতে পারেন কি না, এখন তাহাই দেখিবার।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy