Advertisement
E-Paper

প্রত্যাবর্তনের সরকার

পশ্চিমবঙ্গ সরকার আর পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাব্যবস্থা, বিশেষত উচ্চশিক্ষা-ব্যবস্থার মধ্যে সম্পর্কটি বাড়াবাড়ি রকমের ঘনিষ্ঠ। সব রকমের ঘনিষ্ঠতাই বাঞ্ছিত হয় না। এই দুইয়ের সম্পর্কও তাই। তবে কি না, অবাঞ্ছিত বা অনৈতিক হইলেও সম্পর্কটিকে অবৈধ বলা চলে না, কেননা বিধি বা আইন তৈরি করেন যাঁহারা, তাঁহারা নিজেদের লক্ষ্যাভিমুখেই আইনকানুন রচনা করিয়া থাকেন।

শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৫ ০০:০১

পশ্চিমবঙ্গ সরকার আর পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাব্যবস্থা, বিশেষত উচ্চশিক্ষা-ব্যবস্থার মধ্যে সম্পর্কটি বাড়াবাড়ি রকমের ঘনিষ্ঠ। সব রকমের ঘনিষ্ঠতাই বাঞ্ছিত হয় না। এই দুইয়ের সম্পর্কও তাই। তবে কি না, অবাঞ্ছিত বা অনৈতিক হইলেও সম্পর্কটিকে অবৈধ বলা চলে না, কেননা বিধি বা আইন তৈরি করেন যাঁহারা, তাঁহারা নিজেদের লক্ষ্যাভিমুখেই আইনকানুন রচনা করিয়া থাকেন। বামফ্রন্ট জমানাতেও তাহাই হইয়াছে। তৃণমূল আমলেও সেই ট্র্যাডিশন চলিতেছে। ট্র্যাডিশন মাঝখানে সামান্য দুর্বল হইয়াছিল, তাই নূতন করিয়া আইনের অঙ্গনে নিয়ন্ত্রণের নবতর বন্দোবস্ত চলিতেছে। উচ্চশিক্ষা মন্ত্রকের সহিত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক দেখভালের জন্য ১৯৯৪ সাল হইতে নিবেদিত যে উচ্চশিক্ষা সংসদটি রহিয়াছে, আগামী বিধানসভায় সেই সংসদের শীর্ষ পদে শিক্ষামন্ত্রীকে বসাইবার জন্য নূতন বিল পেশ হইতে চলিয়াছে। প্রসঙ্গত, বামফ্রন্ট আমলেও বহু কাল এই প্রথাই প্রচলিত ছিল। সংসদের চেয়ারম্যান পদে মন্ত্রীর স্বাভাবিক অভিষেকটি বন্ধ হয় ২০০৬ সালে। সুতরাং বর্তমান তৃণমূল সরকারের পদক্ষেপটিকে নূতন বা অদৃষ্টপূর্ব বলা যায় না, বরং ইহা পুরাতনকে বিদায় না দিয়া মন্ত্রীর নবীন প্রত্যাবর্তন। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ, চালনা ইত্যাদি কর্মকাণ্ড যাহাতে মন্ত্রীর নিরবচ্ছিন্ন তর্জনীশাসনে থাকে, তাহার ব্যবস্থা। ব্যবস্থা ভালই! সাক্ষাত্‌ শিক্ষামন্ত্রী খামখা নীতি প্রণয়নের মতো সামান্য কাজ করিবেন কেন, বরং কলেজে কলেজে প্রাত্যহিক নজরদারি চালাইবেন। তবেই না দলের ও দলীয় সরকারের মঙ্গল নিশ্চিত হইবে। তবে, সত্যের খাতিরে, ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসিবার সময় ‘পরিবর্তনের সরকার’ ইত্যাদি ধুয়া না তুলিয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘প্রত্যাবর্তনের সরকার’-এর আশ্বাস দিতে পারিতেন। ভ্রষ্টতার অভিযোগটি তাঁহার গায়ে লাগিত না।

বর্তমান সরকারের সমস্ত কার্যপদ্ধতিতে দ্বিচারিতা প্রকট। বাম জমানার সরকারি নিয়ন্ত্রণের অবসান দাবি, সরকারি হস্তক্ষেপ উঠাইয়া লইবার অঙ্গীকার ইত্যাদির পাশাপাশি অকুতোলজ্জায় চলিতেছে ক্যাম্পাস সংঘর্ষ ও হিংসার প্রবাহ। প্রতিটি ঘটনাতেই শাসক দল ও তাহার ছাত্র ইউনিয়নের ভূমিকা সাদা চোখেই দৃশ্যমান। এমনকী সর্বতোভাবে রাজনীতি-মুক্ত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে নূতন স্বশাসিত প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের যে প্রতিশ্রুতি, তৃণমূল সরকার তাহাও অক্ষরে অক্ষরে ভঙ্গ করিয়াছে। পরিস্থিতি এমনই সংকটসঙ্কুল যে তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক সাংসদ ও নেতাও ইতিমধ্যে শিক্ষায় রাজনীতিকরণ বন্ধ না করিতে পারার হতাশা প্রকাশ না করিয়া পারেন নাই। প্রতিটি মন্তব্যের ক্ষেত্রেই শিক্ষামন্ত্রী কিংবা মুখ্যমন্ত্রীর এক প্রতিক্রিয়া, এক ভর্ত্‌সনা শোনা গিয়াছে: দলবিরোধিতার অবাধ্যতা বন্ধ হউক!

কেন যে পরিবর্তনের সরকারকে তড়িঘড়ি প্রত্যাবর্তনের সরকার হইতে হয়, এই অপ্রতিরোধ্য দল-কেন্দ্রিকতার মধ্যেই তাহার উত্তরটি নিহিত। অনিলায়ন হইতে মমতায়ন, উচ্চশিক্ষার অঙ্গনটি দখল ও নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সরকারের এই অতিরিক্ত ঔত্‌সুক্যের কারণটি সহজেই বোধগম্য। রাজনীতির অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য আঁতুড়ঘর এই কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলি, যেখানে দলীয় রাজনীতির পরবর্তী নেতৃত্ব ও সমর্থকদের এক বড় অংশ বিকশিত হয়, এবং দলীয় সমাজের বাকি অংশকে সংগঠিত করিবার দায়িত্ব অর্জন করে। দ্বিতীয়ত, পৃষ্ঠপোষকতার যাহা মূল হেতু ও লক্ষ্য— প্রসাদ বিতরণ— তাহাও কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অশিক্ষক পদের নিয়োগের ভিত্তিতে সুসম্পন্ন করা সম্ভব হয়। তাই, দলীয় রাজনীতি নিরঙ্কুশ করিতে হইলে অন্য সব নীতি জলাঞ্জলি দিয়াই শিক্ষাক্ষেত্র নিয়ন্ত্রণের নীতিটি একটি অত্যাবশ্যকীয় আচারে পরিণত করিতে হয়। শিক্ষা এখানে বাহনমাত্র, রাজনীতির বাহন।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy