Advertisement
E-Paper

বুমেরাং

নৈতিকতা দুই দিকেই কাটে। অরবিন্দ কেজরীবাল এখন তাহা টের পাইতেছেন। রাষ্ট্রীয় ও রাষ্ট্রলালিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে নাগরিক সমাজের প্রবল বিরূপতাকে ব্যবহার করিয়া প্রথমে অণ্ণা হাজারের সহকর্মী হিসাবে এবং পরে আম আদমি পার্টির নায়ক রূপে তিনি ভারতীয় রাজনীতির মঞ্চে অবতীর্ণ হন। এ-রাজনীতি হইতে রাজনীতির পরিসরে তাঁহার এই প্রবেশের পিছনে একটি বড় দাবি ছিল। স্বাতন্ত্র্যের দাবি: অন্য দলগুলি দুর্নীতিগ্রস্ত, আমরা দুর্নীতিমুক্ত।

শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:১৬

নৈতিকতা দুই দিকেই কাটে। অরবিন্দ কেজরীবাল এখন তাহা টের পাইতেছেন। রাষ্ট্রীয় ও রাষ্ট্রলালিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে নাগরিক সমাজের প্রবল বিরূপতাকে ব্যবহার করিয়া প্রথমে অণ্ণা হাজারের সহকর্মী হিসাবে এবং পরে আম আদমি পার্টির নায়ক রূপে তিনি ভারতীয় রাজনীতির মঞ্চে অবতীর্ণ হন। এ-রাজনীতি হইতে রাজনীতির পরিসরে তাঁহার এই প্রবেশের পিছনে একটি বড় দাবি ছিল। স্বাতন্ত্র্যের দাবি: অন্য দলগুলি দুর্নীতিগ্রস্ত, আমরা দুর্নীতিমুক্ত। এই দলের সমস্ত প্রচারে ক্রমাগত দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানটি প্রবল স্বরে ঘোষিত হইয়াছে। ‘লোকপাল’ নির্মাণের অঙ্গীকার তাহারই অঙ্গ। এমন একটি দলের নিকট স্বভাবতই একটি বাড়তি দাবি থাকে যে, তাহারা নিজেদের আচরণকে দুর্নীতির সমস্ত সংস্রব হইতে দূরে রাখিবে। দুর্নীতিমুক্ত হওয়াই তাহার পক্ষে যথেষ্ট নহে, তাহাকে যেন কেহ কোনও দুর্নীতির সহিত কোনও ভাবে জড়িত বলিয়া মনে না করে, বস্তুত তেমন ধারণার কোনও প্রশ্নও যেন না ওঠে।

কিন্তু প্রশ্ন উঠিয়াছে। বড় প্রশ্ন। কঠিন প্রশ্ন। এমন সংস্থার নিকট আম আদমি পার্টি বড় অঙ্কের অনুদান গ্রহণ করিয়াছে, যাহাদের কুলশীল লইয়া বিপুল সংশয় আছে, এমনকী তাহাদের আদৌ কোনও ব্যবসায়িক কাজকর্ম আছে কি না তাহাই স্পষ্ট নহে। এই সূত্রে তাহাদের ‘হাওয়ালা’ কারবারে জড়িত থাকিবার অভিযোগও উঠিয়াছে। বিরোধীরা, বিশেষত ভারতীয় জনতা পার্টির রথী-মহারথীরা সেই অভিযোগ লুফিয়া লইয়াছেন। নির্বাচনী মরসুমে এমন সহজ ক্যাচ তাঁহারা ফেলিবেন কেন? কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী যে ভাবে অরবিন্দ কেজরীবালদের ‘হাতেনাতে ধরা পড়িবার’ অভিযোগে তোপ দাগিয়াছেন, তাহা তাঁহার গুরুত্বপূর্ণ আসনের পক্ষে কিঞ্চিৎ বেমানান ঠেকিতে পারে। বিজেপির অন্য নায়কনায়িকারা না জানিতে পারেন, আইনজ্ঞ অর্থমন্ত্রী নিশ্চয়ই জানেন যে, ‘শিখণ্ডী’ কোম্পানি মানেই দুর্নীতির কারবার, হাওয়ালা-সংযোগ, এমন কোনও কথা নাই। কিন্তু কে না জানে, প্রেমে ও ভোটের লড়াইয়ে সকলই শোভন, সুতরাং ‘গলি গলি মে শোর হ্যায়, অরবিন্দ কেজরীবাল চোর হ্যায়’ স্লোগান উঠিলেও অবাক হইবার কিছু থাকিবে না।

এবং অরবিন্দ কেজরীবাল ও তাঁহার সহযোগীরা যতই তারস্বরে ‘তদন্ত করুন, দোষী সাব্যস্ত হইলে আমাদের জেলে পাঠান’ বলিয়া তড়পান, এই অনুদান রহস্য তাঁহাদের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করে নাই। ‘চেকে টাকা লইয়াছি, তাহার পরে আবার কথা কী’ বলিলেও কথা থাকিয়া যায়। পঞ্চাশ লক্ষ টাকা অনুদান কে দিতেছে, তাহাদের সম্পর্কে যথেষ্ট জানিবার দায় একটি রাজনৈতিক দল অস্বীকার করিতে পারে না। এই অনুদান লইয়া আপ কোনও বেআইনি কাজ করিয়াছে কি না, তাহা এক অর্থে গৌণ প্রশ্ন, সেই বিচার আইন-আদালতেই সম্পন্ন হইতে পারে। যে নৈতিকতার ধ্বজা উড়াইয়া আপ-এর সৃষ্টি ও বিকাশ, তাহাকে আইনের গণ্ডিতে সীমিত করা চলে না। তাহা প্রতি পদে আপন আচরণকে কষ্টিপাথরে ঘষিয়া যাচাই করিবার নির্দেশ দেয়। ভারতীয় রাজনীতির কারবারিরা সেই যাচাইয়ের অভ্যাস হইতে অনেক কাল যাবৎ নিজেদের সরাইয়া লইয়াছেন, এখন কার্যসিদ্ধিই রাজনীতির একমাত্র শর্ত হিসাবে পরিগণিত হইয়া থাকে। কিন্তু শর্তটির নৈতিক মূল্য আজও সমান রহিয়া গিয়াছে। এই শর্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে যতখানি সত্য, অরবিন্দ কেজরীবালের ক্ষেত্রেও তাহা অপেক্ষা কোনও অংশে কম সত্য নহে। দুই জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের গুরুত্ব বা প্রকৃতি নিশ্চয়ই তুলনীয় নহে, কিন্তু ইহা বিশেষ ভাবে লক্ষণীয় যে, দুই জনেই নিজেকে সততার প্রতিমূর্তি বলিয়া জাহির করিয়া থাকেন এবং দুই জনেই আপাতত ‘প্রয়োজনে জেলে যাইব’ ঘোষণায় ব্যস্ত!

anandabazar editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy