Advertisement
E-Paper

রাজনীতি ও উন্নয়ন

ভারত আজ যাহা ভাবে, বাংলা কি সুদূর ভবিষ্যতেও তাহা ভাবিবে? সম্প্রতি কংগ্রেস-শাসিত কেরলে যে ঘটনাটি ঘটল, তাহা কেরলের দৃষ্টিতে হয়তো নিতান্ত স্বাভাবিক, অনুল্লেখ্য। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের চক্ষু বিস্ময়ে বর্তুলাকার হইবার সর্বপ্রকার উপকরণ তাহাতে মজুত।

শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:০১

ভারত আজ যাহা ভাবে, বাংলা কি সুদূর ভবিষ্যতেও তাহা ভাবিবে? সম্প্রতি কংগ্রেস-শাসিত কেরলে যে ঘটনাটি ঘটল, তাহা কেরলের দৃষ্টিতে হয়তো নিতান্ত স্বাভাবিক, অনুল্লেখ্য। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের চক্ষু বিস্ময়ে বর্তুলাকার হইবার সর্বপ্রকার উপকরণ তাহাতে মজুত। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী উমেন চাণ্ডি এবং বিরোধী নেতা ভি এস অচ্যুতানন্দন উন্নয়নের জন্য দরবার করিতে একত্রে দিল্লি উড়িয়া গেলেন, এবং দরবার করিলেন। দুই প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এক সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও রেলমন্ত্রীর কাছে যৌথ স্বাক্ষর-সংবলিত দাবিপত্র জমা দিলেন। অথচ, এই আপাত-ঐক্য দেখিয়া ভুলিয়া গেলে চলিবে না যে, তাঁহাদের মধ্যে বিরোধিতার মালমশলা বিস্তর। কংগ্রেস নেতা উমেন চাণ্ডির সহিত সিপিআইএম নেতা অচ্যুতানন্দনের বিরোধ যথেষ্ট প্রকাশ্য, দ্বিতীয়জন ইতিমধ্যে প্রথম জনের বিরুদ্ধে সোলার কেলেংকারিতে সিবিআই তদন্ত ও ইস্তফার দাবিতে আন্দোলনেও নামিয়াছেন। তবুও রাজ্যের স্বার্থে তাঁহাদের হাত মিলাইতে বাধা পড়িল না। হায় পশ্চিমবঙ্গ! রাজনৈতিক শিষ্টতার কথা ছাড়িয়াই দেওয়া যাক, কেবল রাজ্যের স্বার্থভাবনার গুরুত্বেও কি এই রাজ্যে এমন কোনও সাময়িক ঐক্যপ্রদর্শন সম্ভব?

কেবল তৃণমূল-শাসিত পশ্চিমবঙ্গে নয়, বিগত জমানাগুলিতেও এ রাজ্যে এমন ঐক্যপ্রদর্শন ডুমুরকলিকাই ছিল। সর্বদলীয় বৈঠক ইত্যাদি শব্দবন্ধ মাঝেমধ্যে ধ্বনিত হইলেও সেই নিরাকার ধ্বনি সাকার কর্মে উন্নীত হইতে পারিত না। গোধ্রা-উত্তর সাম্প্রদায়িক হিংসাকে কেন্দ্র করিয়া কংগ্রেসের সহিত বিজেপির যখন অহি-নকুল সম্পর্ক, সেই সময়েও কিন্তু গুজরাতের উন্নয়নের প্রশ্নে সে রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কংগ্রেস নেতাদের সহিত একযোগে কেন্দ্রের মনমোহন সিংহ সরকারের কাছে দাবিপত্র পেশ করিয়াছিলেন, এবং লগ্নিকারীদের রাজ্যে আহ্বান জানাইয়াছিলেন। পশ্চিমবঙ্গে কিন্তু সে দিনও শাসক বামফ্রন্ট এবং বিরোধী তৃণমূল কংগ্রেসকে রাজ্যের উন্নয়নের স্বার্থে কেন্দ্রের কাছে বা শিল্পপতিদের কাছে ঐক্যবদ্ধ অঙ্গীকার তুলিয়া ধরিতে দেখা যায় নাই। সেই ট্র্যাডিশন আজও অব্যাহত। সম্প্রতি রাজ্যের শিল্প-সম্মেলনেও ট্র্যাডিশন বজায় রহিল। আয়োজনে বিরোধীদের শামিল করা হইল না, বিরোধী নেতারা আমন্ত্রিত হইলেন না।

কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের মধ্যেও বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী সমানেই রাজনৈতিক বিরোধিতার আবহ টানিয়া আনেন, এতই একমাত্রিক তাঁহার রাজনীতি-বোধ। প্রশ্নটি যখন কেন্দ্রের সহিত দরকষাকষি করিয়া রাজ্যের জন্য প্রকল্প ও তহবিল আদায়ের, তখনও কেন্দ্রের ‘বঞ্চনা ও ষড়যন্ত্র’-এর ভূরি ভূরি অভিযোগেই কেবল তাঁহার শক্তি নিবদ্ধ। তাই ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার যখন দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী সকাশে রাজ্যের দাবিদাওয়া লইয়া হাজির হন, কিংবা প্রধানমন্ত্রী ত্রিপুরা সফরে আসিলে তিনি সমগ্র মন্ত্রিসভা লইয়া রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্পের রূপায়ণ বিষয়ে আলোচনা করেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁহার মন্ত্রীরা কেন্দ্রকে গালমন্দ করিতেই ব্যস্ত থাকেন। নিজের পায়ে কুড়ুল মারার আত্মঘাতী প্রবণতা ভারতের অন্যত্র ঘুচিয়া গিয়াছে, বামশাসিত ত্রিপুরা ও পূর্বতন বাম-ঘাঁটি কেরলও ভিন্ন পথে হাঁটিতেছে। কিন্তু বাম শাসন অতিক্রান্ত হইবার পর পশ্চিমবঙ্গ যে ‘বাম-তর’ শাসন পাইয়াছে, তাহা সেই তিমিরেই; তিমিরময় ঐতিহ্যেই আদ্যন্ত বিশ্বাসী।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy