Advertisement
E-Paper

শৃঙ্খলাহীনতায়

অধিকাংশ দুর্ঘটনাই অনিবার্য নহে। পটনার গাঁধী ময়দানে দশেরার রাবণ-দহনের দর্শনার্থী সমাগমে শুক্রবার যে মর্মান্তিক বিপর্যয় ঘটিয়াছে, তাহা অবশ্যই অমোঘ অঘটন ছিল না। লক্ষাধিক মানুষ যেখানে একত্র হন, সেখানে বিপদ নিবারণের জন্য সর্বপ্রকার প্রস্তুতি রাখিতে হয়, কঠোর শৃঙ্খলা পালন করিতে হয়।

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০১

অধিকাংশ দুর্ঘটনাই অনিবার্য নহে। পটনার গাঁধী ময়দানে দশেরার রাবণ-দহনের দর্শনার্থী সমাগমে শুক্রবার যে মর্মান্তিক বিপর্যয় ঘটিয়াছে, তাহা অবশ্যই অমোঘ অঘটন ছিল না। লক্ষাধিক মানুষ যেখানে একত্র হন, সেখানে বিপদ নিবারণের জন্য সর্বপ্রকার প্রস্তুতি রাখিতে হয়, কঠোর শৃঙ্খলা পালন করিতে হয়। গাঁধী ময়দানে সে সকল কিছুই করা হয় নাই, উপরন্তু ময়দানের আটটি প্রবেশপথের মাত্র একটি ভিআইপিদের জন্য এবং অন্য একটি জনসাধারণের জন্য খোলা রাখিয়া বাকিগুলি ‘সন্ত্রাসবাদী হানার ভয়ে’ বন্ধ রাখা হইয়াছিল, এমন অভিযোগও উঠিয়াছে। সেই অভিযোগ কত দূর সত্য তাহা লইয়া প্রশ্ন থাকিতে পারে, কিন্তু যথেষ্ট সতর্কতা যে অনুসরণ করা হয় নাই তাহা এই ঘটনাতেই প্রমাণিত। এবং ইহা কোনও বিরল ঘটনা নহে। ভারতের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন উপলক্ষে বিপুল জনসমাগমের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির ফলে বিশৃঙ্খলা এবং পদপিষ্ট হইয়া বহু মানুষ হতাহত হওয়ার নূতন নূতন নিয়মিত রচিত হয়। পটনাতেই দুই বছর আগে ছটপূজার সময় গঙ্গার ঘাটে জন-বিশৃঙ্খলা প্রাণঘাতী হইয়াছিল। প্রশাসন যথেষ্ট সতর্ক হয় নাই। শুক্রবারের ঘটনার পরেও প্রশাসন সতর্ক হইবে, এমন আশা দুরাশা।

এই দুর্মর অসতর্কতার পিছনে সম্ভবত এক ধরনের নিয়তিবাদ সক্রিয় থাকে। ‘কপালে যাহা আছে, হইবে’, এই বিশ্বাসে ভর করিয়া এ দেশের মানুষ দিনাতিপাত করেন। এই বিশ্বাস সামাজিক মানসিকতায় এমন দৃঢ়মূল যে, বহু দুর্ঘটনার ভয়াবহ অভিজ্ঞতাও তাহার ভিত নষ্ট করিতে পারে না। এমনকী প্রশাসনের দায়িত্বে যাঁহারা থাকেন, তাঁহারাও মনে করেন, নিয়তি কেন বাধ্যতে। তাহার সহিত অবশ্যই যুক্ত হয় এই নির্মম সত্য যে, এ দেশে সাধারণ মানুষের প্রাণের দাম যৎসামান্য, মানুষ এবং মানুষের নেতানেত্রীরাও ধরিয়াই লন যে, মাঝে মধ্যে এখানে ওখানে নানাবিধ বিপর্যয় ঘটিবে, তাহাতে কিছু প্রাণ বিনষ্ট হইবে, ইহাই বিধির বিধান। নিরাপত্তার প্রশ্নে এক শতাংশ আপস করা চলিবে না, একটি প্রাণ বাঁচাইবার জন্যও সর্বশক্তি প্রয়োগ করিতে হইবে এই মানসিকতা ভারতে এখনও দুর্লভ।

সমাজের মন কোন সুদূর ভবিষ্যতে বদলাইবে, তাহা দুর্জ্ঞেয়। প্রশাসনের কর্তা ও কর্মীরাও আগামী কালই তৎপর হইয়া উঠিবেন, এমন ভরসা হয় না। সুতরাং, যে সব জায়গায় যে সব উপলক্ষে বিপুল জনসমাগম ঘটে, সেখানে তখন নিরাপত্তার যথাযথ আয়োজন করিবার পাশাপাশি একটি গভীরতর প্রশ্ন লইয়াও ভাবা দরকার। জনসাধারণের নিরাপত্তার স্বার্থেই কি জনসমাগমের উপর নিয়ন্ত্রণ জারি করা জরুরি নহে? একটি পরিসরে, তাহা যত প্রশস্তই হউক, লক্ষাধিক লোকের সমাবেশ কি স্বতঃই বিপজ্জনক নহে? যদি এমন বিপুল জনসমাগম অনুমোদন করিতেই হয়, তবে তাহার জন্য অনেক ধরনের শৃঙ্খলাবিধি পালনীয়, বিশেষত দেখা দরকার যাহাতে যথেষ্ট আলোর ব্যবস্থা থাকে, যে কোনও গুজব ছড়াইলে (শুক্রবারের ঘটনার পিছনেও গুজব একটি কারণ) তাহা প্রতিহত করিবার জন্য তৎপর সম্প্রচার করা যায়, ভিড়ের যে কোনও অংশ হইতে দ্রুত বাহির হইবার যথেষ্ট পথ থাকে। এই আয়োজনগুলি নিতান্তই ‘যান্ত্রিক’ ভাবে করিতে হইবে এবং যান্ত্রিক ভাবে পালন করিতে হইবে, ইহার মধ্যে গণ-আবেগ এবং জন-সহানুভূতি, কোনওটিরই প্রয়োজন নাই। আবেগ দিয়া দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা যায় না, শৃঙ্খলাই তাহার যথার্থ উপায়।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy