Advertisement
E-Paper

শান্তি দূর অস্ত্

দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্যালেস্টাইনি গোষ্ঠী আল-ফাতাহ্ ও আল-হামাস পুনরায় একজোট হইতে চুক্তিবদ্ধ হইয়াছে। ওয়েস্ট ব্যাংকে স্থিত প্যালেস্টাইনি কর্তৃপক্ষের প্রধান মাহমুদ আব্বাস এবং গাজায় স্থিত হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ে একটি অভিন্ন প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের অধীনে দুই প্যালেস্টাইনি জনপদকে টানিয়া আনিতে চুক্তি করিয়াছেন, যে-কর্তৃপক্ষ আগামী ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচিত হইবে।

শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৪ ০০:২১

দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্যালেস্টাইনি গোষ্ঠী আল-ফাতাহ্ ও আল-হামাস পুনরায় একজোট হইতে চুক্তিবদ্ধ হইয়াছে। ওয়েস্ট ব্যাংকে স্থিত প্যালেস্টাইনি কর্তৃপক্ষের প্রধান মাহমুদ আব্বাস এবং গাজায় স্থিত হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ে একটি অভিন্ন প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের অধীনে দুই প্যালেস্টাইনি জনপদকে টানিয়া আনিতে চুক্তি করিয়াছেন, যে-কর্তৃপক্ষ আগামী ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচিত হইবে। পারস্পরিক হানাহানি ভুলিয়া এই ভাবে হামাস ও ফাতাহ্র সমর্থকদের কাছাকাছি আসা এবং ঐক্যবদ্ধ ভাবে হৃত স্বদেশভূমি হাসিলের লড়াইয়ে শামিল হওয়ার প্রয়াসটি গুরুত্বপূর্ণ। ইহার পিছনে নিজভূমে পরবাসী প্যালেস্টাইনি জনগণের স্বদেশের আকাঙ্ক্ষাই সক্রিয়, যাহা গোষ্ঠী-নেতাদের অহমিকা ও মর্যাদার লড়াইকে এক পাশে সরাইয়া রাখিতে বাধ্য করে। ইজরায়েলের জন্মলগ্ন হইতে স্বদেশেই উদ্বাস্তুর জীবনে পতিত হওয়া প্যালেস্টাইনি জনতা নেতৃত্বকে কার্যত বাধ্য করিয়াছেন নিজেদের বিবাদ দূরে রাখিতে।

এই ঐক্যপ্রয়াস মার্কিন বিদেশ সচিব জন কেরির মধ্যস্থতায় চলিতে থাকা ইজরায়েল-প্যালেস্টাইন শান্তি-উদ্যোগে কিছু জটিলতা সৃষ্টি করিবে। ওই উদ্যোগে প্যালেস্টাইনি কর্তৃপক্ষ বলিতে কেবল আল-ফাতাহ্র প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকেই শিরোধার্য করা হইতেছিল। হামাসকে ওই আলোচনায় সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বলিয়া শনাক্ত করা হইয়া থাকে এবং তাহার সহিত কোনও রকম সংশ্রব রাখারই বিরোধী ইজরায়েলি-মার্কিন কর্তৃপক্ষ। তবু যে মাহমুদ আব্বাস হামাস ও তাহার নিয়ন্ত্রিত গাজার প্যালেস্টাইনিদের দিকে হাত বাড়াইলেন, তাহার কারণ, তিনি দেখাইতে চাহিয়াছেন, তাঁহার কাছেও বিকল্প খোলা আছে। ইজরায়েলের শাসকরা কিছুতেই ধৃত প্যালেস্টাইনিদের মুক্তি দিতে এবং পূর্ব জেরুজালেমে নিয়মিত ইহুদি পরিবারদের বসত করানো বন্ধ করিতে প্রস্তুত নয়। এই জেদ শান্তি-প্রক্রিয়াকে থমকাইয়া দিয়াছে। মাহমুদ আব্বাসও জানেন, হামাস নেতৃত্বের সহিত আপস-রফা শেষ পর্যন্ত বজায় রাখা দুরূহ কাজ। ২০০৬ সালে ব্যাপক ভ্রাতৃঘাতী সংঘর্ষের রক্তাক্ত পথ দিয়া গাজা ও ওয়েস্ট ব্যাংকের বিবাদ এমন অনপনেয় হইয়া ওঠে যে, ২০১১ সালে দুই-দুইবার পুনর্মিলনের প্রচেষ্টাও দুই গোষ্ঠী ও তাহাদের শাসিত দুই জনপদকে ঐক্যবদ্ধ করিতে পারে নাই। তবু যে তিনি হামাসের হাত ধরিতে চাহিয়াছেন, তাহার পিছনে ইহুদি-মার্কিন পক্ষকে চাপে রাখার হিসাব থাকা সম্ভব।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইজরায়েল ও তাহার ইউরোপীয় সহযোগীরাও হামাস বনাম ফাতাহ্র এই তীব্র পারস্পরিক অবিশ্বাস এবং হানাহানির কথা জানে। তাহারা ইহাও জানে যে, হামাসের দার্শনিক দীক্ষাগুরু এবং রাজনৈতিক পথপ্রদর্শক মুসলিম ব্রাদারহুড মিশরে সামরিক জেনারেলদের প্রবল নির্যাতন ও দমন নীতির ফলে কার্যত কোণঠাসা এবং আত্মরক্ষায় ব্যস্ত। ওই সংগঠনের কাছ হইতে অদূর ভবিষ্যতে অন্তত হামাসের কোনও সাহায্য পাওয়ার সম্ভাবনা কম। কিন্তু ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বিনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তাঁহার মার্কিন মুরুব্বিরা তবু মাহমুদ আব্বাসের হামাস-সংসর্গের সম্ভাবনায় বিষম বিরক্ত। কারণটি সহজবোধ্যহামাস জবরদখল হওয়া প্যালেস্টাইনি ভূখণ্ডে ইজরায়েলি রাষ্ট্রের অস্তিত্বই স্বীকার করে না। তাই ইজরায়েলের সহিত কোনও রকম আলাপ-আলোচনাতেও তাহারা আগ্রহী নহে। মার্কিন প্রশাসন এ জন্যই প্যালেস্টাইনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে হুমকি দিয়াছে, হামাসের সঙ্গে বেশি মাখামাখি করিলে প্যালেস্টাইনিদের দেওয়া মার্কিন-ইউরোপীয় অনুদান বন্ধ করিয়া দেওয়া হইবে। দর কষাকষির খেলায় এ ভাবেই উভয় পক্ষ পরস্পরের উপর চাপ সৃষ্টি করিয়া চলিয়াছে। ইজরায়েলের জন্মক্ষণ হইতেই এই কাণ্ড চলিয়াছে। তাই স্বাধীন, স্বশাসিত, সার্বভৌম প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রের উত্থান ক্রমেই বিলম্বিত হইয়া চলিয়াছে।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy