Advertisement
E-Paper

স্বচ্ছতার সন্ধানে

ভারতীয় পরিবারের সমাজ-স্বীকৃত কাঠামোয় এখনও নারী অপেক্ষা পুরুষ, এবং নবীন অপেক্ষা প্রবীণের গুরুত্ব বেশি। অর্থাৎ, পরিবারের পরিসরে সর্বাপেক্ষা ক্ষমতাহীন হইলেন কমবয়সি মহিলারা। সরকার তাঁহাদের কথা আলাদা করিয়া ভাবিলে, তাঁহাদের অগ্রাধিকার দিলে তাঁহাদের যে উপকার হয়, তাহা পরিমাপের অতীত।

শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০১

ভারতীয় পরিবারের সমাজ-স্বীকৃত কাঠামোয় এখনও নারী অপেক্ষা পুরুষ, এবং নবীন অপেক্ষা প্রবীণের গুরুত্ব বেশি। অর্থাৎ, পরিবারের পরিসরে সর্বাপেক্ষা ক্ষমতাহীন হইলেন কমবয়সি মহিলারা। সরকার তাঁহাদের কথা আলাদা করিয়া ভাবিলে, তাঁহাদের অগ্রাধিকার দিলে তাঁহাদের যে উপকার হয়, তাহা পরিমাপের অতীত। বিশেষত, শৌচাগারের ন্যায় প্রশ্নে। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গিয়াছে, গ্রামীণ পরিবারগুলিতে শৌচাগার ব্যবহারের তাগিদ সর্বাধিক থাকে কমবয়সি মহিলাদেরই। কিন্তু, শৌচাগার তৈরি হইবে কি না, হইলেও তাহা ব্যবহৃত হইবে কি না, সিদ্ধান্তগুলিতে তাঁহাদের মত গ্রাহ্য হওয়ার সম্ভাবনা যৎকিঞ্চিৎ। কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত করিল, স্বচ্ছ ভারত প্রকল্পে অগ্রাধিকার পাইবে সেই পরিবারগুলি, যেখানে কন্যাসন্তান আছে, অথবা গর্ভবতী বা স্তনদায়িনী মা আছেন। সিদ্ধান্তটি স্বাগত।

কিন্তু, সরকারি সাহায্যে শৌচাগার নির্মিত হইলেই ভারত ‘স্বচ্ছ’ হইয়া উঠিবে, তেমন সম্ভাবনা ক্ষীণ। শৌচাগার নির্মাণ অবশ্যই জরুরি, কিন্তু তাহা যথেষ্ট নহে। কেন, তাহার কারণগুলি বিভিন্ন সমীক্ষায় উঠিয়া আসিয়াছে। বাড়িতে শৌচাগার থাকা সত্ত্বেও পরিবারের অন্তত এক জন সদস্য প্রকাশ্যে মলত্যাগ করেন, এমন পরিবারের অনুপাত উল্লেখযোগ্য রকম বেশি। তিনি পরিবারের কোন সদস্য, তাহাও বিভিন্ন সমীক্ষায় ধরা পড়িয়াছে। দেখা গিয়াছে, পরিবারের বয়স্ক পুরুষ সদস্যরা শৌচাগার অপেক্ষা প্রকাশ্যে মলত্যাগ করিতেই অধিকতর স্বচ্ছন্দ। তাহার একটি কারণ অভ্যাস। যাঁহারা আশৈশব প্রকৃতির ডাকে প্রকৃতির নিকট যাইতেই অভ্যস্ত, সরকারি অর্থব্যয়ে বাড়িতে শৌচাগার নির্মিত হইলেই তাঁহাদের অভ্যাস বদলায় না। তবে, আরও বড় কারণ সচেতনতার অভাব। এখনও বহু ভারতীয়ই প্রকাশ্যে মলত্যাগকেই অপেক্ষাকৃত স্বাস্থ্যসম্মত অভ্যাস হিসাবে বিবেচনা করেন। যাঁহারা সরকারি সাহায্যে বাড়িতে শৌচাগার নির্মাণ করিয়াছেন, তাঁহাদের পরিবারে শৌচাগার ব্যবহারের হার স্ব-ব্যয়ে নির্মিত শৌচাগারসম্পন্ন পরিবারের তুলনায় কম। এই প্রবণতার কারণটিও অনুমানযোগ্য। শৌচাগারের অপরিহার্যতার কথা যাঁহারা বুঝিয়াছেন, তাঁহারা সরকারি টাকার অপেক্ষায় থাকেন নাই। তবে, প্রধানমন্ত্রী আশ্বস্ত হইতে পারেন, পরিবারের মহিলারা, বিশেষত প্রজননক্ষম মহিলারা, সর্বাধিক শৌচাগার ব্যবহার করিয়া থাকেন। তাঁহার অগ্রাধিকারটি ভুল জায়গায় পড়ে নাই।

ভারতকে বিশ্বের ‘প্রকাশ্য মলত্যাগ রাজধানী’র লজ্জাকর তকমা হইতে মুক্ত করিতে হইলে শুধু শৌচাগার নির্মাণের টাকা গনিয়া দিলেই হইবে না। সচেতনতা বৃদ্ধি করিতে হইবে। তাহার জন্য নিয়মিত প্রচার প্রয়োজন, জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের কর্মীদের সক্রিয় সহযোগিতা প্রয়োজন। কাজটি কঠিন। অভ্যাস দুর্মর, বিশেষত সেই অভ্যাসের মূলটি যদি অশিক্ষায় প্রোথিত থাকে। প্রকাশ্যে মলত্যাগ যে নেহাতই একটি কু-অভ্যাস, তাহার আর কোনও সামাজিক বা সাংস্কৃতিক গুরুত্ব নাই, এমনকী এই অভ্যাসটি ত্যাগ করিলে যে সনাতন ভারতীয়ত্বে আঁচড় পড়িবে না, এই কথাগুলি জোরের সঙ্গে, বারংবার, বলা প্রয়োজন। আর, শৌচাগার নির্মাণের জন্য যত টাকা প্রয়োজন, তাহার একটি অংশ পরিবারগুলিকেও দিতে বাধ্য করা হউক। বিনাব্যয়ে মিলিলে প্রাপ্তির গুরুত্ব অনেক ক্ষেত্রেই বোঝা যায় না। শৌচাগারও ব্যতিক্রম নহে।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy