Advertisement
E-Paper

সংশোধনী

ভাগ্যদেবীর নিকট আর কি কিছু চাহিতে পারিতেন নরেন্দ্র মোদী? আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম অস্বাভাবিক রকম কম, স্বাভাবিক বর্ষার পূর্বাভাস পাওয়া গিয়াছে। পালানিয়াপ্পন চিদম্বরম যেটুকু করিতে পারিয়াছিলেন, তাহার ফল মিলিতেছে। এবং, জাতীয় আয় নির্ধারণের নূতন অঙ্ক ব্যবহৃত হইতেছে। সেই নূতন হিসাবে বর্তমান অর্থবর্ষের অভ্যন্তরীণ আয়বৃদ্ধির হার দাঁড়াইয়াছে ৭.৪ শতাংশ।

শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:০১

ভাগ্যদেবীর নিকট আর কি কিছু চাহিতে পারিতেন নরেন্দ্র মোদী? আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম অস্বাভাবিক রকম কম, স্বাভাবিক বর্ষার পূর্বাভাস পাওয়া গিয়াছে। পালানিয়াপ্পন চিদম্বরম যেটুকু করিতে পারিয়াছিলেন, তাহার ফল মিলিতেছে। এবং, জাতীয় আয় নির্ধারণের নূতন অঙ্ক ব্যবহৃত হইতেছে। সেই নূতন হিসাবে বর্তমান অর্থবর্ষের অভ্যন্তরীণ আয়বৃদ্ধির হার দাঁড়াইয়াছে ৭.৪ শতাংশ। প্রশ্ন হইল, ভাগ্যদেবীর এই স্মিতহাস্য কি ভারতকে সমৃদ্ধির পথে ফিরাইয়া দিতে পারিবে? সদ্য-প্রকাশিত আর্থিক সমীক্ষা দাবি করিয়াছে, আগামী অর্থবর্ষে আয়বৃদ্ধির হার সাড়ে আট শতাংশে পৌঁছাইবে, এবং অদূর ভবিষ্যতেই দুই অঙ্কের বৃদ্ধির হার ভারতের অপেক্ষায় আছে। দাবিটি আকাশকুসুম নহে। কিন্তু, সেই সমৃদ্ধি স্বয়মাগতাও হইবে না— তাহার জন্য সাধনা প্রয়োজন। মনমোহন সিংহ, সনিয়া গাঁধীরা ভারতীয় অর্থনীতির যে সর্বনাশ করিয়াছিলেন, তাহার প্রায়শ্চিত্ত না করিলে এই সমৃদ্ধির সাধনায় সিদ্ধিলাভ হইবে না। পূর্বতন সরকার দেশকে বিনিয়োগ হইতে ব্যয় ও ভোগের পথে লইয়া গিয়াছিল। সরকার কল্পতরু হইয়া টাকা বিলাইয়াছিল মাত্র। কোনও সম্পদ নির্মিত হয় নাই। নরেন্দ্র মোদী এই ভ্রান্তি কত দ্রুত সংশোধন করিতে পারেন, তাহাই প্রশ্ন।

আর্থিক সমীক্ষা সেই সংশোধনীর মূল পথটি নির্দেশ করিয়া দিয়াছে। সরকার যদি ব্যয় করে, তবে বিনিয়োগার্থে করিবে, ভোগব্যয় নহে। অর্থাত্‌, সরকারি ব্যয় দেশের সম্পদ নির্মাণের কাজে ব্যয় করিতে হইবে। বর্তমানে সরকারের হাতে টাকা আছে। বাজারে ধার না করিয়াও সরকার ব্যয় করিতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে খয়রাতির প্রবণতা তৈরি হয়। সমীক্ষা স্মরণ করাইয়া দিয়াছে, রাজকোষ ঘাটতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যটি কখনও ভুলিলে চলিবে না। অনতিদীর্ঘ মেয়াদেই এই ঘাটতির পরিমাণ তিন শতাংশে নামাইয়া আনিতে হইবে। তাহার জন্য যোজনা-বহির্ভূত ব্যয়ে লাগাম টানিতে হইবে, খাদ্য ভর্তুকির ন্যায় খাতে ব্যয়বরাদ্দ লইয়া নূতন করিয়া ভাবিতে হইবে। এক দিকে রাজকোষ ঘাটতি নিয়ন্ত্রণ, আর অন্য দিকে বিনিয়োগের পরিবেশ গড়িয়া তোলা— ভারতকে দুই অঙ্কের বৃদ্ধির হারের কক্ষপথে প্রতিষ্ঠিত করিতে হইলে এই দুই নীতি অপরিহার্য। আর্থিক সমীক্ষার ইঙ্গিত, দীর্ঘমেয়াদে যে বেসরকারি বিনিয়োগই ভারতীয় অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হইবে, কথাটি নীতিনির্ধারকরা বুঝিয়াছেন।

লগ্নিকারীরা যেমন আর্থিক স্থিতিশীলতা চাহেন, তেমনই তাঁহারা প্রত্যাশা করেন, দেশের আর্থিক নীতিগুলি অনুমানযোগ্য হইবে। অর্থাত্‌, মূল্যস্ফীতির হার কতখানি কমিলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদের হার কতটা নামাইবে, বিনিয়োগকারীরা সে বিষয়ে সংশয়ে থাকিতে অপছন্দ করেন। আর্থিক সমীক্ষা এই প্রশ্নটির দিকে নজর দিয়াছে। প্রস্তাব করা হইয়াছে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তাহার আর্থিক নীতি একেবারে ছকে বাঁধিয়া ফেলুক (পরিভাষায়, ‘কোডিফাই’ করুক)। সেই ছকটি জনসমক্ষে থাকুক, যাহাতে আর্থিক নীতি বিষয়ে কোনও অনিশ্চয়তার অবকাশ না থাকে। অন্য দিকে, দেশে একটি স্বচ্ছ, অনুমানযোগ্য এবং আন্তর্জাতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার যোগ্য কর ব্যবস্থা থাকাও সমান প্রয়োজন বলিয়া সমীক্ষার মত। সব মিলাইয়া প্রত্যাশা জাগিতেছে, হয়তো সত্যই ভারত বাণিজ্যবান্ধব হইবার পথে হাঁটিতেছে। সত্যই আর্থিক সমৃদ্ধির সাধনায় বসিতেছে।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy